এ ভাবেই বাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন তিন বন্ধু। মাঝে হর্ষিত, পিছনে অভিনব। ছবি: ফেসবুক
প্রতিষ্ঠানের স্নাতক স্তরের পড়ুয়াদের মোটরবাইক চালানোর অনুমতি নেই। অথচ বাইক চালানোর প্রবণতায় রাশ টানতে পারছে না খড়্গপুর আইআইটি। সেই মোটরবাইকের নেশাই কেড়ে নিল আইআইটির দুই ছাত্রের প্রাণ। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আরও এক ছাত্র। শুক্রবার গভীর রাতে দুর্ঘটনাটি ঘটে খড়্গপুর গ্রামীণের রূপনারায়ণপুরে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম অভিনব আট্টরি (২২) ও হর্ষিত চাহল (২৩)। উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা অভিনব খড়্গপুর আইআইটির সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। হিউম্যানিটিজ বিভাগের ছাত্র হরসিতের বাড়ি হরিয়ানায়। দু’জনেই পঞ্চম বর্ষের পড়ুয়া। এছাড়াও গুরুতর আহত হয়েছেন রাজস্থানের বাসিন্দা ইলেকনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ভবানী সিংহ। শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ খড়্গপুর আইআইটি থেকে একটি মোটরবাইকে চেপে বেরিয়েছিল ওই তিন পড়ুয়া। রাত আড়াইটে নাগাদ আইআইটি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে রূপনারায়ণপুরে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর যায় পুলিশে। পুলিশ এসে তাঁদের খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে যায়। সেখানে মৃত্যু হয় অভিনবের। বাকি দুই ছাত্রকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মারা যান হর্ষিত। ভবানীকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
আইআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিনব ও হর্ষিত আইআইটির আজাদ হলে থাকতেন। আহত ছাত্র থাকেন মেঘনাদ সাহা হলে। তিনজনেই ভাল বন্ধু ছিলেন। ওই তিন ছাত্রকে হামেশাই আইআইটি ক্যাম্পাস চত্বর অথবা তার আশপাশের এলাকায় বাইক চালিয়ে ঘুরতে দেখা যেত। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবিও রয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আইআইটির স্নাতক স্তরের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তার পর থেকে পড়ুয়ারা খোশমেজাজে মেতে রয়েছেন। প্রতিদিন রাতেই অনেক পড়ুয়া বিভিন্ন ধাবা-রেস্তোরাঁয় খেতে যাচ্ছেন। ভবানীর বন্ধু ইলেকনিক্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া গগন সাঁই বলেন, “আমাদের ভলিবল প্রতিযোগিতা চলছে। শুক্রবার সেখানেও ওঁদের দেখেছিলাম। তার পরে কখন বাইরে গিয়েছে জানি না।” অভিনবের সঙ্গে আজাদ হলে থাকা অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র জয়রাজ চিন্টু বলেন, “ওঁরা আমাদের বন্ধু ছিল। আমাদের বাইক চালানোর অনুমতি না থাকায় কারও কাছে চেয়ে বা ভাড়া নিয়ে বাইক চালাত। কীভাবে এই দুর্ঘটনা হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছি না।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তিন পড়ুয়ার কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। শুক্রবার রাতে তাঁরা রূপনারায়ণপুরের কাছে কোনও ধাবায় খেতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে খড়্গপুরে ফেরার সময়ে তাঁরা ভুল লেন দিয়ে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে উঠছিলেন। সেই সময়েই দুর্ঘটনাটি ঘছে। তদন্তকারীদের অনুমান, ওই ছাত্ররা টাটা হিতাচি কারখানার পাশ দিয়ে শিল্পতালুকের রাস্তা ধরে খড়্গপুর আসার পরিকল্পনা করেছিলেন। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “আইআইটির ওই তিন পড়ুয়া একই বাইকে ছিলেন। কারও হেলমেট ছিল না। কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে তার তদন্ত চলছে।”
অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও আইআইটির স্নাতক স্তরের পড়ুয়ারা কী ভাবে বাইক পাচ্ছে সেই নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। আইআইটির এক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, “আমরা বাইক দেখলেই আটক করি। তারপরেও স্নাতক স্তরের পড়ুয়ারা কোনও গবেষক পড়ুয়া বা আমাদের কোনও কর্মীর থেকে বাইক চেয়ে নেয়।” আইআইটির রেজিস্ট্রার ভৃগুনাথ সিংহ বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। বাইকের অনুমতি না থাকলেও ওই পড়ুয়ারা কীভাবে বাইক পেল তা নিয়ে আমরা তদন্ত করব। আমরা ওই পড়ুয়াদের বাড়িতে খবর পাঠিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy