—ফাইল চিত্র
পড়াশোনার সরঞ্জাম বিতরণের জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দ শূন্য। ফলে প্রতিশ্রুতি রক্ষার দায় মেটাতে হচ্ছে কাউন্সিলরদেরই।
হলদিয়া পুরসভার ঘটনা। বাম জমানা থেকে হলদিয়ার প্রতিটি ওয়ার্ডে নতুন শিক্ষাবর্ষ উপলক্ষে দুঃস্থ পড়ুয়াদের শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ২০১৩ সালে বাম পরিচালিত পরিচালিত পুর-বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে বোর্ড দখল করে তৃণমূল। পালাবদলের পরেও আগের রীতি বজায় রেখে প্রতি বছর পুরসভার ২৯টি ওয়ার্ডের দুঃস্থ পড়ুয়াদের হাতে শিক্ষাসামগ্রী তুলে দেওয়া হত।
ওয়ার্ড পিছু প্রায় কুড়ি হাজার টাকা করে বরাদ্দ থাকত এই খাতে। কিন্তু নতুন শিক্ষাবর্ষে সেই বরাদ্দ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এতে বিপাকে পড়েছেন কাউন্সিলররা। কারণ, বহু মানুষ রয়েছেন যাঁরা ইতিমধ্যেই ছেলেমেয়েদের বইয়ের তালিকা বেশ কিছু কাউন্সিলরের কাছে গিয়ে জমা দিয়েছেন। প্রথমদিকে কাউন্সিলররা ভেবেছিলেন প্রতি বছরের মতোই এ বারও দুঃস্থ পড়ুয়াদের হাতে শিক্ষা সামগ্রী তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন সেই বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় তাঁরা।
প্রতিশ্রুতি রাখতে গিয়ে কয়েকজন কাউন্সিলর ইতিমদ্যেই নিজের উদ্যোগে পড়াশোনার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টাকার অভাবে কী ভাবে এই কাজ হবে তা নিয়ে চিন্তায় কাউন্সিলররা। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেনবিরোধীরা। বিরোধী-সহ কাউন্সিলারদের একাংশের অভিযোগ, নতুন বর্ষবরণ উপলক্ষে জমকালো উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে পুর এলাকার বিভিন্ন এলাকা রঙিন আলোয় মুড়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই খাতে ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছিল প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। অথচ দুঃস্থ পড়ুয়াদের শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করার ক্ষেত্রে বরাদ্দ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হল। শুধু তাই নয়, কাউন্সিলরদের একাংশের অভিযোগ, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে পুরপ্রধানের কাছে কথা বলতে গেলে পুরপ্রধান তাঁদের ওই খাতে বরাদ্দ বাতিল হয়েছে জানিয়ে দেন!’’ বিরোধীদের অভিযোগ, মেলা-উৎসবের চাকচিক্যে মানুষকে প্রতারিত করতে চাইছে পুরসভা। স্থানীয় দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধার দিকে তাদের তেমন নজর নেই।
পুর-পারিষদ আসগর আলি নিজের খরচে তাঁর ওয়ার্ডের দুঃস্থ পড়ুয়াদের হাতে পড়াশোনার সামগ্রী তুলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছরের মতো এবছরও বই পাওয়ার জন্য বইয়ের তালিকা তৈরি করে দুঃস্থ পড়ুয়ারা আমার হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু পুরসভা থেকে এই বরাদ্দ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই দুঃস্থ পড়ুয়াদের কথা ভেবে নিজের পড়াশোনার সামগ্রী ওদের হাতে তুলে দিয়েছি।’’
হলদিয়ার বাম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল বলেন, ‘‘আসলে যারা পুরসভার দায়িত্বে রয়েছেন তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। উৎসব-অনুষ্ঠান দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না। আসল জায়গায় গলদ থাকলে একদিন সত্যিটা মানুষের কাছে প্রকাশ পাবেই।’’
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বিজেপির কার্যকরী সভাপতি প্রদীপ কুমার বিজলী বলেন, পুরসভা দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের কথা যে ভাবে না তার প্রমাণ, এ বছর শিক্ষা সামগ্রী বিতরণের জন্য বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া।’’
হলদিয়ার পুরপ্রধান শ্যামল কুমার আদককে এই বিষয়ে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। এসএমএস করা হলেও উত্তর দেননি।
উপ-পুরপ্রধান সুধাংশু শেখর মণ্ডল বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy