পশ্চিমবঙ্গের ৩২ জন বিজেপি নেতার নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে জাতীয় তফসিলি জাতি কমিশনের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান, লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী থেকে বিজেপির জেলা সভাপতি— বিভিন্ন স্তরের বিজেপি নেতা-নেত্রী রয়েছেন এই তালিকায়। তবে পরাজিত প্রার্থী বা প্রাক্তন মন্ত্রীদের সকলের নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়নি। জনপ্রতিনিধি নন, এমন অনেকের নিরাপত্তাই এখনও বহাল। ফলে অনেকে মনে করছেন, বিজেপিতে কার কত গুরুত্ব, তার পরোক্ষ প্রতিফলনও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে প্রকাশিত এই তালিকায় রয়েছে।
যে ৩২ জনের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হল, সেই তালিকায় প্রথম নাম অরুণ হালদারের। তিনি জাতীয় তফসিলি জাতি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে বেশ কিছু দিন কার্যত কমিশনের প্রধান হিসেবেও কাজ চালিয়েছেন। রাজ্য বিজেপিতে অরুণ বেশ পুরনো নাম। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘‘তফসিলি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আমার মেয়াদ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হয়ে গিয়েছে। আমার নিরাপত্তা যাতে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, আমি নিজেই চিঠি লিখে সে আর্জি জানিয়েছিলাম।’’
আরও পড়ুন:
নিরাপত্তা প্রত্যাহারের তালিকায় আর এক উল্লেখযোগ্য নাম জন বার্লা। আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বার্লা। দলের সঙ্গে বার্লার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে এবং তৃণমূলের নৈকট্য বেড়েছে বলেও সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে। সেই আবহে বার্লার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা তুলে নেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন। তবে বার্লা বলছেন, ‘‘আমার নিরাপত্তার দরকার নেই। আমি সারা জীবন মানুষের মাঝে থেকে আন্দোলন করেছি। আমার কোনও শত্রু নেই। তাই আমার নিরাপত্তা লাগে না।’’ বার্লার কথায়, ‘‘বাম জমানাতেও আন্দোলনের মধ্যেই ছিলাম। নিরাপত্তা লাগেনি। পরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গেও আমাদের সংঘাত তৈরি হয়েছিল। তখনও নিরাপত্তা লাগেনি। এখন কেন লাগবে?’’
রাজ্য বিজেপিতে এই মুহূর্তে আরও তিন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রয়েছেন। নিশীথ প্রামাণিক, সুভাষ সরকার, দেবশ্রী চৌধুরী। তাঁরাও এখন বার্লার মতোই সাংসদ হিসেবেও প্রাক্তন। কারণ ২০২৪-এর নির্বাচনে কেউই জিততে পারেননি। কিন্তু তাঁদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা এখনও বহাল। দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন সিংহেরাও প্রাক্তন সাংসদ। তাঁদের নিরাপত্তাও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বহাল রেখেছে। তাই বিজেপিতে অনেকেই দাবি করছেন যে, দলে কাকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা প্রত্যাহারের এই তালিকায় পরোক্ষ ভাবে তার প্রতিফলন রয়েছে।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির প্রার্থীদের প্রায় সবার জন্যই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল অনেক জেলা সভাপতিকেও। তাঁদের অধিকাংশের নিরাপত্তাই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। বিজেপিতে যোগদানকারী প্রাক্তন আইপিএস দেবাশিস ধর, আইনজীবী নেতা লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য কার্যকারিণী সদস্য শঙ্কুদেব পণ্ডাদের নিরাপত্তাও প্রত্যাহার করে নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ডায়মন্ড হারবার লোকসভা আসনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী ছিলেন যে অভিজিৎ দাস (ববি), তাঁর নিরাপত্তাও তুলে নেওয়া হয়েছে। অভিজিৎ বলেছেন, ‘‘প্রতি তিন মাস অন্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এগুলো রিভিউ করে দেখে। গত সাড়ে ছ’বছরে আমার নিরাপত্তা অনেক বারই তুলে নেওয়া হয়েছে। আবার ফেরতও এসেছে।’’ তবে নিরাপত্তা প্রত্যাহারের তালিকা প্রকাশ্যে আসায় ববি ক্ষুব্ধ। দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে ববি আঙুল তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূলের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য দলেরই কেউ আমার শো কজ় লেটার সংবাদমাধ্যমকে দিয়েছিল। এই তালিকাটাও সেই উদ্দেশ্যেই প্রকাশ্যে আনা হয়েছে।’’