Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coochbehar

মা কর্মহীন, উচ্চশিক্ষা নিয়ে চিন্তায় মেধাবী ছাত্র

কোচবিহার শহর থেকে কিলোমিটার দশেক দূরে গোপালপুর গ্রাম। সেখানেই থাকেন বিধানরা। গোপালপুর হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছেন।

মা মালতী রায় এবং ভাই সুজিতের সঙ্গে বিধান (ডান দিকে)। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

মা মালতী রায় এবং ভাই সুজিতের সঙ্গে বিধান (ডান দিকে)। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:৪৬
Share: Save:

অভাব নিত্যসঙ্গী। লকডাউনে তা বেড়েছে কয়েক গুণ। কাজ হারিয়ে ভিন্ রাজ্য থেকে বাড়ি ফিরেছেন তার মা মালতী রায়। দশম শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই শ্রমিকের কাজ শুরু করেছিল ভাই সুজিত। এখন তারও কোনও কাজ নেই। এমন পরিস্থিতিতে পড়াশোনার খরচ নিয়ে চিন্তায় উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৬৩ নম্বর পাওয়া ওই পরিবারেই বড় ছেলে বিধান। চিন্তায় তাঁর মা, ভাই-ও। তবু সব বাধা সামলে ভাই ও মা এগিয়ে নিয়ে যেতে চান বিধানের উচ্চশিক্ষা। কারণ, তাঁদের সামনে আশার আলো একমাত্র মেধাবী বিধানই।

কোচবিহার শহর থেকে কিলোমিটার দশেক দূরে গোপালপুর গ্রাম। সেখানেই থাকেন বিধানরা। গোপালপুর হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছেন। মালতী বলেন, “বড় ছেলেকে ঘিরেই তো স্বপ্ন দেখি। ৯২ শতাংশের থেকেও বেশি নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। আমার কাজ যদি থাকত, তা হলে চিন্তাই ছিল না।” আর বিধানের ছোট ভাইয়ের কথায়, “দাদা ভাল ছাত্র। যে করেই হোক ওর পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

বিধান জানান, ছোটবেলায় মারা যান তাঁর বাবা। সংসারের হাল ধরেন মা। কাজের খোঁজে গিয়েছিলেন ভিন্ রাজ্যে। তাঁরা দুই ভাই দাদুর বাড়িতে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। দাদু রত্নেশ্বর রায়ও আর্থিক ভাবে দুর্বল। আধ বিঘা জমিই তাঁর ভরসা। সঙ্গে দিনমজুরি। এ ভাবেই কাটছিল দিন। তাঁর ভাই সুজিত মাধ্যমিকের পড়াশোনার ফাঁকেই চলে যায় জয়পুরে, মায়ের কাছে। সেখানে সে হোটেলে কাজ শুরু করে। দু’জনে মিলেই বিধানের পড়াশোনার খরচ জোগাতে থাকে। সুজিত মাধ্যমিক

পাশ করে।

এ সবের মধ্যেই শুরু হয় লকডাউন। মালতী জানান, রাজস্থানের জয়পুরে তিনি রান্নার কাজ করতেন, লকডাউনে তা বন্ধ হয়ে যায়। বাড়ি ফিরে আসতে হয় তাঁকে। তার পরে প্রায় চার মাস কাজ নেই। তিনি বলেন, “মাসে এক টাকাও আয় করতে পারছি না। ভাবছি ভিন্ রাজ্যেই ফিরব। কিন্তু ট্রেন চলছে না। যাই হোক না কেন, ছেলেটার পড়াশোনা কোনও ভাবেই বন্ধ করতে চাই না।”

ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে গোপালপুর হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে বিধানের ভাই সুজিত। সে বলে, “ভাবলাম বাড়িতেই যখন থাকব আর একটু পড়াশোনা করি। সেই সঙ্গেই কোথাও যদি কোনও কাজ পাই করব। কিন্তু কোনও কাজই মিলছে না। কী করে সংসার চলবে ভেবে পাচ্ছি না।”

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘরে বই নিয়েই বসে থাকেন বিধান। আর মাঝেমধ্যেই মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, “ভেবেছিলাম পড়াশোনা করে মায়ের কষ্ট দূর করব। মাকে আমার কাছে নিয়ে এসে রাখব, আর কাজ করতে দেব না। সেই স্বপ্ন কি সত্যি হবে?”

অন্য বিষয়গুলি:

Coochbehar Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy