সুধীর চক্রবর্তীর মরদেহের সামনে। অনুরাগীদের পদযাত্রা। কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
পত্রিকায় লেখা বেরিয়েছে ‘কাঠিবন’-এর এক সদস্যের। খবরটি শোনার পর এক গাল হেসে মানুষটি বলে ওঠেন, “স্বদেশ, খোঁজ নিয়ে দেখো তো! আজ কৃষ্ণনগরে জেলুসিল অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে।”
এক জনের লেখা কোথাও প্রকাশিত হলে অন্য জন সেটা ‘হজম’ করতে পারেন না এবং এর জন্য তাঁদের বদহজম হয়। সেই কারণে ওই বিশেষ দিনগুলিতে জেলুসিল ওষুধের বিক্রি বেড়ে যায় বলে মজা করতেন সুধীর চক্রবর্তী। মজার ছলে বলতেন— “খোঁজ নাও। খোঁজ নাও!”
কৃষ্ণনগরের অন্যতম আড্ডার এই কেন্দ্রের আচার্য ছিলেন সুধীর চক্রবর্তী। এখানে সকলে পরস্পরকে নিয়ে নির্মল মজা করতেন বলে সুধীর চক্রবর্তীকে ঘিরে সেই আড্ডার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কাঠিবন’।
কৃষ্ণনগর শহরে তাঁর বাড়ি জজকোর্ট পাড়ায়। কাছেই সুবীর সিংহরায়ের বাড়ি। বাড়ির একটি ঘরে প্রতিদিন বৈঠকি আড্ডায় বসতেন শহরের বিশিষ্ট প্রবীণেরা। স্বদেশ রায়, শঙ্কর সান্যাল, রামকৃষ্ণ দে, সম্পদ নারায়ণ ধর, দেবাশিস মণ্ডল, তপন ভট্টাচার্য, তুহিন দে— এঁরা নিয়মিত সদস্য। সুধীরবাবু ছিলেন আড্ডাস্থলের মধ্যমণি। দীর্ঘ দিন ধরে সুধীরবাবু আড্ডাস্থল ফোয়ারার মোড়ের আলেখ্য স্টুডিয়ো। সেখানেই তিনি প্রতিদিন নিয়ম করে আসতেন। তাঁকে ঘিরে সেখানে একটা পরিমণ্ডল গড়ে ওঠে। কিন্তু নানা কারণে ২০১৬ সালের এপ্রিল মাস নাগাদ সেখানে আড্ডা বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকে সেই বৈঠকি আড্ডা শুরু হয় সুবীরবাবুর বাড়িতে। ঘরের ঠিক মাঝখানে রাখা থাকত হাতলওয়ালা কাঠের চেয়ার। সে চেয়ারে তিনি ছাড়া কেউ বসতেন না।
বৈঠকের ‘উপাচার্য’ সুবীরবাবু বলছেন, “ওই চেয়ারে বসে তিনি তার বাহ্যিক গাম্ভীর্য ঝেড়ে ফেলতেন। মানুষটা তখন পুরোপুরি বৈঠকি মেজাজে। কখনও কখনও শিশুর মতো অকপট হয়ে উঠতেন।”
স্বদেশ রায় বলছেন, “মাঝে মধ্যে আমাদের মধ্যে একটুআধটু চটুল গল্প হত। স্যর বলতেন ওটা সেকেন্ড পিরিয়ড। বলতেন— ‘আমি না যাওয়া পর্যন্ত যেন সেকেন্ড পিরিয়ড শুরু না হয়।” তাঁর মতে, এই কাঠিবন ছিল সুধীরবাবুর মনের জানালা। সেখানে চটুল গল্প থেকে দেশ-বিদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, সাহিত্য, গান সবই ছিল আলোচনার বিষয়।
করোনা আবহে শেষের ক’টা দিন বাদ দিয়ে বাড়িতে থাকলে সুধীর চক্রবর্তী প্রতিটা দিন আসতেন এখানে। ছাতা হাতে হেঁটে আসতেন মানুষটা। বেলা একটা নাগাদ আসর শেষ হয়ে গেলে সুধীরবাবুকে মোটরবাইকে চাপিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিতেন কবি রামকৃষ্ণ দে।
তিনি নেই। সেই নির্জন কাঠিবনে তাঁর জন্য অপেক্ষা করে আছে নিঃসঙ্গ কাঠের চেয়ার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy