প্রতীকী ছবি।
সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবর্ষে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী বাবদ তাদের বকেয়া প্রাপ্যের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে সরবরাহকারী সংস্থাগুলির দাবি। তা সত্ত্বেও নগদপ্রাপ্তির নামগন্ধ নেই। দেওয়া হচ্ছে ‘শ্যাডো ফান্ড’ বা ‘ছায়া টাকা’, বাস্তবে যে-টাকা চোখে দেখা যায় না, ছোঁয়াও যায় না হাতে। সব মিলিয়ে এই বকেয়া-বিপত্তি থেকে তারা কোনও দিন বেরোতে পারবেন কি না, সেটাই চিন্তা ওই সব সংস্থা বা ভেন্ডারের। উপায়ান্তর না-দেখে তারা হাসপাতালে সামগ্রী সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে দামি পেসমেকার, স্টেন্ট, ক্যাথিটার, গাইড ওয়্যার, অর্থোপেডিক ইমপ্ল্যান্ট। তার জেরে সমস্যার মুখোমুখি রোগীরাই।
ভেন্ডারেরা চিকিৎসার যন্ত্র, যন্ত্রাংশ, অন্যান্য সামগ্রী-সরঞ্জাম সরবরাহে রাশ টানায় স্বাভাবিক ভাবেই হাসপাতালগুলি সমস্যায় পড়ছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ জরুরি অস্ত্রোপচারও পিছিয়ে যাচ্ছে অথবা বাতিল হচ্ছে বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর বাড়ির লোকেদের বাইরে থেকে জিনিস কিনে দিতে হচ্ছে।
পাওনা মেটানো হচ্ছে না কেন? কেনই বা ছায়া টাকার আশ্বাস? রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘এটা একটা বাজেটারি প্রসেস। নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিত অনেকটা করে টাকা দেওয়া হয়। কিছু দিন আগেই তো প্রায় ১০০ কোটি দেওয়া হয়েছে। তিন-চার মাসের বেশি টাকা বকেয়া থাকার কথা নয়। আমরা দেখছি। যেটুকু বকেয়া আছে, মিটিয়ে দেওয়া হবে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বকেয়া বেড়ে যাওয়ায় জিনিসপত্র কিনতে যে অসুবিধা হচ্ছে, স্বাস্থ্য ভবনে তা জানিয়েছে বিভিন্ন হাসপাতাল। দিন দুয়েক আগে কার কত বকেয়া রয়েছে, সেই হিসেব চেয়ে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। কিন্তু বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তা এবং সরবরাহকারী সংস্থার প্রতিনিধিদের অনুযোগ, ‘‘আলোচনাই সার। এটা অনেকটা বকেয়া ডিএ-র মতো হয়ে যাচ্ছে। ‘দিচ্ছি দেব’ করে মাসের পর মাস কাটানো হচ্ছে।’’
চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহকারী একটি সংস্থার প্রতিনিধি বলেন, ‘‘২০১৭-২২ পর্যন্ত আমাদের মতো বিভিন্ন সংস্থার বকেয়া ছিল ৭৮ কোটি টাকারও বেশি। বহু সাধ্যসাধনায় গত মার্চে তার মধ্যে ৬৯ কোটি টাকা অনুমোদন করে সরকার। কিছু টাকা হাতে দেওয়া হয়। কিন্তু ৩১ মার্চের পরে দেখা যায়, শুধু ২১-২২ অর্থবর্ষে আবার প্রায় ১১০ কোটি টাকা বকেয়া জমে গিয়েছে। শুধু এসএসকেএমেই বকেয়া প্রায় ৪৭ কোটি টাকা!’’
এই ধরনের আরও একটি সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা কলকাতার তিন-চারটি মেডিক্যাল কলেজে জিনিসপত্র দেওয়া বন্ধ করেছি। গত সপ্তাহে একটি মেডিক্যাল কলেজ জানিয়েছে, ওয়াই কানেক্টর নামে একটি সরঞ্জামের অভাবে ওদের ১২ জনের অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি আটকে আছে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে ওদের বিনা পয়সায় ২০টা ওয়াই কানেক্টর দিয়েছি। তার পরে অস্ত্রোপচার হয়।’’
মাসখানেক আগেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিয়োলজি বিভাগের এক প্রবীণ চিকিৎসক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে ক্যাথল্যাবের জিনিসপত্রের অভাবে স্টেন্টিংয়ের সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। তা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের ছ’টি ক্যাথল্যাবে শুধু চিকিৎসাসামগ্রীর জন্য ২০২১-২২ অর্থবর্ষে বকেয়ার পরিমাণ ১৫-২০ কোটি টাকা।
স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসকদের অনেকেরই অভিযোগ, পরিকল্পনার অভাবে, অনেক ক্ষেত্রে স্বজনপোষণের তাগিদে এমন ভাবে চিকিৎসাসামগ্রী কেনা হয়, যাতে অযথা সরকারের টাকা খরচ হয়ে যায়। অন্য দিকে, সরঞ্জাম সরবরাহকারী সংস্থাগুলির টাকা মেটাতে পারছে না সরকার। উদাহরণ দিয়ে তাঁদের অভিযোগ, যেখানে ২০-৩০ হাজার টাকার পেসমেকার বসালে কাজ হয়ে যায়, সেখানে কিছু চিকিৎসক কমিশননিয়ে পাঁচ লক্ষ টাকার পেসমেকার বেশি বসাচ্ছেন। আবার দেখা যাচ্ছে, ১৩ হাজার টাকার স্টেন্ট বসানোর জন্য ১৯ হাজার টাকার বেলুন ব্যবহার করে রোগীর ধমনী চওড়া করা হচ্ছে। তাঁদের প্রশ্ন, স্টেন্টের থেকে বেশি দামের বেলুন ব্যবহার হবে কেন?
স্টেন্টের ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে একাধিক সংস্থা চুক্তিবদ্ধ। অভিযোগ, তালিকায় ১৩ হাজার টাকার স্টেন্ট যেমন আছে, রয়েছে ২৩ এবং ৩২ হাজার টাকার স্টেন্টও। বেশ কিছু মেডিক্যাল কলেজ কম দামি স্টেন্টকে একেবারে ব্রাত্য করে দিয়ে শুধু দামি স্টেন্টই কিনছে বলে অভিযোগ। এই বৈষম্যে রাশ টানলে সরকারের টাকা বাঁচানো যেত বলে অনেকের ধারণা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy