সোমবার বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের জুনবেদিয়ায় এ ভাবেই ভেঙে তলিয়ে গেল আস্ত একটি দোতলা বাড়ি। ছবি: অভিজিৎ সিংহ এবং নিজস্ব চিত্র।
গভীর রাত থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছিল। সেই জলে বাঁকুড়া ২ ব্লকের জুনবেদিয়ার ভাড়াবা়ড়ির সামনের রাস্তাটা যেন ছোটখাট নদী হয়ে গিয়েছে। সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ সেই জল দেখতে দেখতেই জলখাবার খাচ্ছিল একাদশ শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়া চট্টোপাধ্যায়। এমন সময়ে বুঝতে পারে, জলের স্রোত বাড়ছে। দুলছে বাড়িটা। বিপদ বুঝে মা উমা চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বারান্দায় বেরোয় তরুণী। কিন্তু জলের চাপে বাইরে বেরনোর দরজা ঠেলে খোলা যাচ্ছিল না। আচমকা ধসে যায় বাড়ির একটা অংশ। ভেসে যান মা-মেয়ে। মা সাঁতরে বাঁচেন। পড়শিরা উদ্ধার করেন মেয়েকে।
এক দিনের ভারী বৃষ্টিতে বাঁকুড়ার একাংশ বানভাসি। রবিবার থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ৪০৪.২১ মিলিমিটার। উপচে পড়েছে গন্ধেশ্বরী এবং শালি নদী। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। এ দিন ধানখেতে যাওয়ার পথে হড়পা বানে ভেসে যান মেজিয়ার নাগরডাঙা গ্রামের গুণময় ভাণ্ডারী (৭০)। রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি। প্রশাসনের হিসেবে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁকুড়া ২, মেজিয়া ও গঙ্গাজলঘাটি ব্লক। ক্ষতিগ্রস্ত আটটি পঞ্চায়েত এলাকা এবং বাঁকুড়া পুরসভার আটটি ওয়ার্ডও। ধসেছে ৫২টি বাড়ি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত আরও ৬৬৩টি। জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘যাঁরা জলবন্দি রয়েছেন তাঁদের ত্রাণ বিলি করা হচ্ছে।’’ জেলার দু’টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ৬১০ জন।
প্রিয়ার বাবা প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায় ইঁদপুরের ব্যবসায়ী। কয়েক মাস আগে বাঁকুড়া মিশন গার্লস হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে প্রিয়া। তার পরেই জুনবেদিয়ায় বাড়ি ভাড়া করে মা ও মেয়ে থাকতে শুরু করেন।
আরও পড়ুন: হাজতে থম মেরে রইলেন তৃণমূলের ‘দাদা’ হিম্মত
স্থানীয় সূত্রের খবর, দোতলা বাড়িটির বয়স বছর পাঁচেক। এক তলায় একটি ঘরে থাকতেন মা-মেয়ে। ঘরটি ধসার সময়ে ভিতরে তাঁরা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। উমা বলেন, ‘‘জলে পড়ার মুহূর্তে একটা কাঠ পেয়ে আঁকড়ে ধরেছিলাম। মেয়েও কিছু একটা আঁকড়ে ভাসছিল।’’ উমাদেবী নিরাপদ জায়গায় পৌঁছলেও প্রিয়া ভেসে যাচ্ছিল। সে দৃশ্য দেখে জলে ঝাঁপান স্থানীয় বাসিন্দা সমর পরামানিক, সুপ্রদীপ দাস, টেলু মালেরা। রাস্তার পাশের বিদ্যুতের খুঁটিতে বাঁধা কেবল টিভির তার কোনও মতে ছিঁড়ে তা দিয়ে প্রিয়াকে জড়িয়ে নেন তাঁরা। পরে তাকে টেনে তোলা হয়। প্রিয়া বলে, ‘‘শহরে পড়তে এসে এমন অভিজ্ঞতা হবে ভাবিনি। পড়শিরা না থাকলে তলিয়েই যেতাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy