Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

তীব্র বিস্ফোরণ নৈহাটির বাজি কারখানায়, মৃত ৪

শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টা নাগাদ নৈহাটির দেবক মধ্যপাড়ার ওই কারখানায় বিস্ফোরণ হয়।

বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ। নৈহাটির দেবকে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ। নৈহাটির দেবকে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:০৭
Share: Save:

নৈহাটির বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হল চার শ্রমিকের। এঁদের মধ্যে দু’জন মহিলা। গুরুতর জখম হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আরও এক শ্রমিক। তাঁর পুরো শরীর ঝলসে গিয়েছে।

শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টা নাগাদ নৈহাটির দেবক মধ্যপাড়ার ওই কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। তার তীব্রতা এতটাই ছিল যে, আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে। উড়ে যায় ওই কারখানার টিনের চাল। ভেঙে যায় পুরো বাড়িটি।

স্থানীয় বাসিন্দা সুখেন হালদার বলেন, ‘‘বিস্ফোরণের পরেই দেখলাম, এক দলা আগুন আকাশে উঠে গেল। তার পরেই গলগল করে ধোঁয়া বেরোতে শুরু করল। শুরু হয়ে গেল ছোটাছুটি, চিৎকার।’’ দমকল সূত্রে বলা হয়েছে, এ দিন বৃষ্টি হওয়ায় আগুন আশপাশের বাড়িতে ছড়ায়নি। তবে পাশের দু’টি বাড়িতে চিড় ধরেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন বিন্দা সাঁপুই (৪০), কল্পনা হালদার (৪২), রাম বেসরা (৪৫) এবং মনসুর পেয়াদা (১৯)। রাম ও মনসুর দেবক গ্রামের বাসিন্দা। বিন্দার বাড়ি নৈহাটির কুলিয়াগড়ে। কল্পনার বাড়ি পাশের সুভাষপল্লিতে। অভয় মান্ডি এক শ্রমিককে আগুনে ঝলসানো অবস্থায় কারখানার বাইরে থেকে উদ্ধার করেন গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁকে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। কারখানার মালিক নুর হোসেন ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা।

আরও পড়ুন: মোদী কি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত: মুখ্যমন্ত্রী

এই ঘটনায় রাজনীতির রং জুড়ে এনআইএ-কে দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এলাকার বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এখানেও খাগড়াগড়ের মতো কিছু হচ্ছিল কি না, তদন্ত হওয়া দরকার। এখানে আরও বাজি কারখানা রয়েছে। সবই বেআইনি। পুলিশ পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, কারখানাটিতে প্রচুর বাজির সঙ্গে বোমার মশলা এবং রাসায়নিক মজুত ছিল। তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘যে কোনও সংস্থাকে দিয়েই তদন্ত করা যেতে পারে। তবে তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনতে হবে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবক গ্রামে মোট ৮০০টি পরিবারের বাস। প্রায় সব পরিবারই কোনও না কোনও ভাবে বাজি তৈরির সঙ্গে যুক্ত। এই কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল। গ্রামে আরও বেশ কয়েকটি বড় বাজি কারখানা রয়েছে। বাড়িতে বাড়িতেও বাজি বানানো হয়। বিয়ের মরসুম বলে তুবড়ি-রংমশাল-সহ নানা ধরনের বাজি তৈরির চাপ ছিল।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, এ দিন আগুনের হলকার জন্য দীর্ঘক্ষণ কেউ কারখানার কাছে যেতে পারেননি। দূর থেকে জল ছিটিয়েও লাভ হয়নি। আগুনের তীব্রতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এক নাগাড়ে বাজি ফাটার শব্দ আসছিল। মনে হচ্ছিল যেন গুলি চলছে। মিনিট কুড়ির মধ্যে দমকল এলাকায় পৌঁছে গেলেও রাস্তা খারাপ থাকায়, গাড়ি কারখানার কাছে যেতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত দমকলের পাম্প খুলে কারখানার কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়। পুকুরের জল দিয়ে শুরু হয় আগুন নেভানোর কাজ। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দুপুর আড়াইটে বেজে যায়। কারখানার ভিতরে মেলে চার শ্রমিকের দেহ। দেহগুলি দেখে চেনার উপায় ছিল না। বাড়ির লোকেরা পোশাকের টুকরো দেখে দেহ শনাক্ত করেন। দেখা যায়, মৃত এক মহিলার একটি হাত কনুইয়ের নীচ থেকে উড়ে গিয়েছে।

ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরীক্ষা করবেন। তার পরেই বিস্ফোরণের কারণ বোঝা যাবে। এই কারখানাগুলি সবই বেআইনি। পুলিশ মাঝেমধ্যেই অভিযান চালায়। গ্রেফতারও করা হয়। কিছু দিন পরে ফের শুরু হয়ে যায়। আমরা এর পাকাপাকি সমাধান করার চেষ্টা করছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Factory Firecracker Death Naihati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy