অসেতনতার ছবি: ভিড়ে জনতার মুখে নেই মাস্ক। প্রতীকী চিত্র।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বৃহস্পতিবারের বুলেটিন জানিয়েছিল, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বাংলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩৩ জন। শুক্রবারের পরিসংখ্যানে সেটি হয়েছে ৮৪৬। স্বাস্থ্য শিবিরের বক্তব্য, সংক্রমণের রেখচিত্র শনৈ শনৈ ঊর্ধ্বমুখে বেড়ে চলার এই দুঃসময়ে প্রশাসন পরিস্থিতি মোকাবিলার যাবতীয় প্রস্তুতি রেখেছে ঠিকই। কিন্তু এই লড়াইয়ে সব থেকে কার্যকর অস্ত্র হল জনসাধারণের সতর্কতা। সচেতন নাগরিকদের সেই সতর্কতা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ মহল।
মহোৎসবে এক শ্রেণির মানুষের উচ্ছ্বাসের ধাক্কায় বঙ্গের ময়দানে ফের দাপাদাপি বেড়েছে কোভিডের। চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে জনতা নেমে পড়েছিল রাস্তায়। যদি ফের আক্রান্তের ঢল নামে, তার মোকাবিলায় রাজ্য কতটা প্রস্তুত— সেই প্রশ্ন উঠছে।
স্বাস্থ্য শিবিরের এক কর্তা বলেন, “সংক্রমণের প্রথম থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বিতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলা করার প্রস্তুতি চালানো হয়েছিল। সেটার থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে তৃতীয় ঢেউ সামলানোর জন্য সব রকমের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।” তিনি জানান, শুধু করোনার তৃতীয় তরঙ্গের মোকাবিলার জন্যই ১৮৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার।
তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় প্রস্তুতি সেরে রেখেছে স্বাস্থ্য দফতর। কর্তারা জানান, গ্রামীণ, মহকুমা, জেলা থেকে সুপার স্পেশালিটি, মেডিক্যাল কলেজ স্তরের চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্র মিলিয়ে মোট ৭৮টি হাসপাতালে ৩৮১৬টি পেডিয়াট্রিক শয্যা রয়েছে। এ ছাড়াও এসএনসিইউ শয্যা রয়েছে ২৪৩৮টি, নিওনেটাল ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিট (নিকু) আছে ১৬৪টি আর পেডিয়াট্রিক ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিটের সংখ্যা (পিকু) ২২৬।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, ৫২টি পেডিয়াট্রিক ও ৫৫টি নিওনেটাল ভেন্টিলেটর এবং বিভিন্ন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের ৪০০টি পূর্ণাঙ্গ পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর প্রস্তুত আছে। তাঁর কথায়, “আমরা প্রস্তুত। বাড়ির বড়দেরও সতর্ক থাকতে হবে। মৃদু উপসর্গ দেখলেই পরীক্ষা চাই। কারণ, তাঁদের থেকে শিশুরা সংক্রমিত হতে পারে। বয়স্ক ও কোমর্বিডিটিতে আক্রান্তেরাও সহজে সংক্রমিত হতে পারেন। তাই সতর্কতা জরুরি।”
দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ কমতেই স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বেসরকারি হাসপাতালের অধিগৃহীত শয্যার বড় অংশ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এক কর্তা বলেন, “ওঁদের বলা আছে, প্রয়োজনে তিন দিনের নোটিসে ওই শয্যা ফের নিতে পারবে সরকার।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ৬১৬টি হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ৩৩,৪৬৪টি। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অক্সিজেন নিয়ে কিছুটা হলেও যে-সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সেই পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্যে প্রায় সব সরকারি হাসপাতালেই নিজস্ব অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় যাতে সমস্যা না-হয়, সেই জন্য অস্থায়ী ওয়ার্ড তৈরি করতে বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। পুরসভাগুলিকেও সেফ হোম ও নিভৃতবাস কেন্দ্র তৈরি রাখতে বলা হয়েছে। পুজোর ভিড়ের ধাক্কায় সংক্রমিতদের খুঁজতে আরটিপিসিআর পরীক্ষা বৃদ্ধির উপরে জোর দিয়েছে রাজ্য। বস্তুত, সেটিই এখন পাখির চোখ। শুক্রবার করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৪০ হাজার জনের। চিকিৎসক ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, “প্রশাসন, চিকিৎসক সকলে প্রস্তুত আছি। কিন্তু প্রশ্ন হল, মানুষ কী করে স্মৃতি ভুলে যাচ্ছেন? নিজের পরিবার-পরিজনের পাশাপাশি আমাদের কথাও তো ভাবা উচিত। নিজেদের ভাল কি তাঁরা বোঝেন না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy