শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ, কার্যত শাঁখের করাতের পরিস্থিতি হয়েছে শিক্ষককুলের। প্রতীকী ছবি।
স্কুলের টেস্টে এ বার গরহাজিরা এত বেশি ছিল যে, শিক্ষক-শিক্ষিকারা বেজায় দুর্ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলেন। এখন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টের উত্তরপত্র দেখে তাঁদের দুশ্চিন্তা দ্বিগুণিত হয়েছে। কারণ, অধিকাংশ পরীক্ষার্থীরই ফল শোচনীয়। কেউ কেউ একটি বিষয়েও পাশ করতে পারেনি। প্রশ্ন উঠছে, টেস্টেই যদি এই অবস্থা হয়, চূড়ান্ত পরীক্ষায় কী হবে? নির্বিচারে এদের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে বসার ছাড়পত্র দিলে আখেরে দুর্নাম হবে তো স্কুলের?
শিক্ষক শিবিরের মাথাব্যথা বাড়িয়ে দিচ্ছে এক শ্রেণির অভিভাবকের দাবি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বক্তব্যকে হাতিয়ার করে ওই অভিভাবকেরা সরাসরি প্রশ্ন করছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী নম্বর বাড়িয়ে তাঁদের সন্তানদের টেস্টে পাশ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে না কেন?
এ রাজ্যের ছেলেমেয়েদের কেন বেশি বেশি নম্বর দিয়ে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে দৌড়ের যোগ্য করে তোলা হবে না, এটা মুখ্যমন্ত্রীর দীর্ঘ কালের প্রশ্ন। উপরন্তু কয়েক দিনের আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ‘তরুণের স্বপ্ন’ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এখন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে অকৃতকার্য পড়ুয়াদের অভিভাবকদের একাংশ মমতার সেই বক্তব্যকেই অস্ত্র করতে চাইছেন বলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিযোগ।
শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ, কার্যত শাঁখের করাতের পরিস্থিতি হয়েছে শিক্ষককুলের। টেস্টে ঢালাও পাশ করিয়ে দিলে একই সঙ্গে তাঁদের এবং তাঁদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্কট। আবার সকলকে পাশ করিয়ে মূল পরীক্ষায় বসতে না-দিলেও সঙ্কট। মুখ্যমন্ত্রীর নম্বর সংক্রান্ত বক্তব্য সামনে রেখে তখন প্রশ্ন উঠবে, টেস্টে বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়নি কেন? অভিযোগ, পাশ করতে না-পারা ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকেরা টেস্ট উতরে যাওয়ার ছাড়পত্র চেয়ে ইতিমধ্যেই নানা ভাবে চাপ সৃষ্টির পথ নিয়েছেন। তাঁদের অন্যতম হাতিয়ার মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্য। অথচ শিক্ষকদের আশঙ্কা, টেস্টে এই অকৃতকার্যদের পাশ করিয়ে দিলে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে তাদের ফেল করার আশঙ্কাই বেশি। তখন শিক্ষা দফতর প্রশ্ন তুলবে, চূড়ান্ত বোর্ড পরীক্ষায় এত অকৃতকার্য কেন?
উত্তর কলকাতার একটি স্কুলের এক শিক্ষিকা বলেন, “যারা টেস্টে ফেল করেছে, তাদের অভিভাবকেরা সন্তানদের পাশ করিয়ে দিতে অনুরোধ করেছেন। আশ্বাস দিয়েছেন, পরীক্ষার তিন মাস বাকি। তাঁদের সন্তানেরা পাশ করার মতো পড়ে নেবে। কেন বেশি নম্বর দেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।’’
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদারের জানান, বহু অভিভাবকই এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে হাতিয়ার করছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু জানান, কিছু পরীক্ষার্থী কোনও বিষয়ে পাঁচ, কোনও বিষয়ে দশ পেয়েছে। “যারা পাশ নম্বরের থেকে ১৫-২০ কম পেয়েছে, তাদের পাশ করাব কী ভাবে? মাধ্যমিকে বা উচ্চ মাধ্যমিকে ওরা আদৌ পাশ করতে পারবে কি,” প্রশ্ন সৌগতের।
এ বার যারা উচ্চ মাধ্যমিকে বসছে, দীর্ঘ করোনাকালে তারা পরীক্ষা না-দিয়েই মাধ্যমিক বৈতরণী পেরিয়ে এসেছে। করোনার জন্য দেরি করে শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ায় এবং দীর্ঘ গরমের ছুটির দরুন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অনেকেরই পাঠ্যক্রম শেষ হয়নি। এক শিক্ষকের কথায়, “এ বার যারা মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে, তাদের অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে টেস্ট দিতে হয়েছে। সকলকে যদি পাশ করিয়ে দিতে হয়, তা হলে ওদের জন্য টেস্টের পরে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হবে। কিন্তু তাতেও সব পরীক্ষার্থীর লাভ হবে কি না, সেই নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy