লাভপুরে ফলের দোকান আবুলের। মিঠুন ও হৃদয় ব্যস্ত কৃষিকাজে। নিজস্ব চিত্র।
স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র নিয়োগ পরীক্ষার পরে তাঁদের নাম উঠেছিল মেধা-তালিকায়। এক বার, কারও কারও একাধিক বার ইন্টারভিউও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বার বার অস্বচ্ছতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাতিল হয়েছে প্যানেল। ফলে চাকরি হয়নি। উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষকপদের প্রতীক্ষায় কেটে গিয়েছে মহামূল্য ছ’ছ’টি বছর।
নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও চলছে। কিন্তু অনেক শিক্ষকপদ প্রার্থীকেই দিন গুজরান করতে হচ্ছে চাষ-আবাদ করে। কেউ বা দিয়েছেন ফলের দোকান। ওই কর্মপ্রার্থীদের প্রশ্ন, এই যে মুখের সামনে খাবারের থালা ধরে বার বার সেই থালা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, এর জন্য কি তাঁরা দায়ী?
দক্ষিণ দিনাজপুরের রামপুর গ্রামের মিঠুন দাস জানান, তাঁদের সামান্য কিছু চাষের জমি আছে। তিনি তাতেই মনোনিবেশ করেছেন। মিঠুন বলেন, “পরীক্ষায় বসেছিলাম ২০১৫ সালের ১৬ অগস্ট। ফল বেরোয় ২০১৬-র ১৪ সেপ্টেম্বর। স্বপ্ন দেখেছিলাম, ইন্টারভিউ দিলে শিক্ষকতার কাজ পাব। বাড়িতে সচ্ছলতা আসবে। কিন্তু তখন কি জানতাম, এই নিয়োগ প্রক্রিয়াই শেষ হবে না?” মিঠুন জানান, ইন্টারভিউয়ের পরে মেধা-তালিকায় তাঁর নাম উঠেছিল ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর। সেই তালিকা ঘিরে অস্বচ্ছতার অভিযোগ ওঠায় মামলা হয়। দীর্ঘ শুনানির পরে ২০২০-র ১১ ডিসেম্বর সেই তালিকা ও নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যায়। ফের ভেরিফিকেশন ও ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ২০২১-র ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে বলে আদালত। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াও শেষ হয়নি। মিঠুন বলেন, “প্যানেল বাতিল হওয়ায় ভেরিফিকেশন হল। কিন্তু এ বার আর ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পেলাম না। এসএসসি জানাল, আমার সব নথি আপলোড করা হয়নি। ফের নথি আপলোড করলাম। এসএসসি জানাল, আমার মতো যাঁরা দ্বিতীয় দফায় ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পাননি, তাঁদের অভিযোগ শোনার জন্য শুনানি হবে। সেই শুনানি পর্ব চলছে। ডিসেম্বরেই আমার শুনানি। এর শেষ কোথায়, কে জানে!”
বীরভূমের নানুরের লাঘোষা গ্রামের আবুল বাশার উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগপত্র না-পেয়ে গ্রামের কাছেই ভাইয়ের সঙ্গে ফলের দোকান দিয়েছেন। ২০১৫ সালে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে ইন্টারভিউ দেন তিনি। আবুল জানান, প্রথম বার মেধা-তালিকায় নাম উঠেছিল। প্যানেল বাতিলের পরে ফের ভেরিফিকেশন হয়। তিনি আবার ইন্টারভিউয়ে ডাক পান। ইন্টারভিউ হয়ে গিয়েছে। আবুল বলেন, “একটা চাকরির জন্য আমি দু’বার ইন্টারভিউ দিলাম। আর কত দিন অপেক্ষা করব? ফলের দোকান দিলেও এখনও মনে ক্ষীণ আশা রাখছি, চাকরিটা যদি পাই।”
বাঁকুড়ার হৃদয় বারুলি এবং উত্তর দিনাজপুরের মঞ্জুর হোসেনও স্কুলের চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে করতে কৃষিকাজে নেমে পড়েছেন। মঞ্জুর বলেন, “লকডাউনে কিছু টিউশন করেছি। কিন্তু গ্রামেগঞ্জে শুধু ছাত্র পড়িয়ে পেট চলে না। টিউশনের বেতন খুব কম। লকডাউনে অনেক পড়ুয়ার বাবা কাজ হারানোয় সেটাও ঠিকমতো দিতে পারছিলেন না।” আর হৃদয় বলছেন, “দেখতে দেখতে ৩৫ বছর বয়স হয়ে গেল। কবে চাকরি পাব? জীবনের যে-অমূল্য সময়টা নষ্ট হয়ে গেল, তার মূল্য কে চোকাবে?”
পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চ নামে সংগঠনের সহ-সভাপতি সুশান্ত ঘোষ জানান, রাজ্য জুড়ে এমন বহু এসএসসি চাকরিপ্রার্থী জীবিকা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। সুশান্ত বলেন, “আমরা যখন দ্রুত নিয়োগের দাবিতে এসএসসি অফিসে ধর্না দিয়েছিলাম, তখন ওই সব প্রার্থীর অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। পরে গ্রামে নতুন জীবিকায় ফিরে যান। এই ভাবে প্রার্থীদের আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে?”
এক এসএসসি-কর্তা বলেন, ‘‘উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে আমরা আন্তরিক ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি। উচ্চ প্রাথমিকে প্রার্থীদের মধ্যে যাঁদের শুনানি চলছিল, তাঁদের শুনানি এই মাসেই শেষ হবে। আমরা তাঁদের নথিপত্র আদালতে জমা দেব। তার পরে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy