রেড রোডে দুর্গা পুজোর কার্নিভাল। —ফাইল চিত্র।
কেউ যুক্তি দিচ্ছেন, এত অল্প সময় আয়োজন সম্ভব নয়। কেউ আবার বলছেন, খরচ বেড়ে যাচ্ছে! কারও আবার দশমীতেই বিসর্জনের রীতি। এই সব নানা কারণে জেলায় জেলায় দুর্গাপুজোর কার্নিভালে যোগ দিল না বেশ কিছু বড় কমিটি, এমনকি সরকারি পুরস্কারপ্রাপ্তেরাও। তাতে কিছুটা তাল কাটলেও পুজো শেষের এই উৎসবে সেই চেনা জাঁক দেখা গেল সর্বত্র।
কলকাতায় কয়েক বছর ধরেই হচ্ছে পুজো কার্নিভাল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গত বছর থেকে জেলায় জেলায় তার আয়োজন শুরু হয়েছে। সেই উপলক্ষে বৃহস্পতিবার হাওড়া, দুর্গাপুর, আসানসোল, কোচবিহার, মেদিনীপুর, বালুরঘাট— সর্বত্র সদর শহরের পথঘাট সেজে উঠল। প্রতিমা নিয়ে সুসজ্জিত ট্যাবলো বেরোল, হল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাতে অংশ নিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়কেরা। ছিলেন পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনেরও কর্তারাও।
উত্তর ২৪ পরগনার বিসর্জনের বিশেষ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হল আজ। মোট চারটি জায়গায় জেলার এই বিশেষ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে গতকাল বসিরহাটে সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুর, পানিহাটি ও বারাসাত চাঁপাডালি মোড়ের শোভাযাত্রা সম্পন্ন হয়। বারাসাত চাঁপাডালি মোড়ের শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য-সহ জেলার একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারীকেরা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জেলাশাসক শরৎ কুমার ত্রিবেদী ও বারাসাত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এই শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। জেলার একাধিক ছোট বড় মণ্ডপ মিলিয়ে ১৯টি মন্ডপ এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল সরকারি পুরস্কারপ্রাপ্ত মন্ডপ।
হাওড়ায় রামকৃষ্ণপুর ঘাটে কার্নিভালের আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। তাতে জেলার ১৯টি পুজো অংশ নিয়েছে। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়, জেলাশাসক দিপাপ প্রিয়া পি, হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার প্রবীণকুমার ত্রিপাঠীও।
পশ্চিম বর্ধমান জেলায় আবার দু’টি কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছে। একটি আসানসোলে, অন্যটি দুর্গাপুরে। আসানসোলে রবীন্দ্র ভবনের সামনে কার্নিভালের আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। ১৪টি পুজো তাতে অংশ নিয়েছে। সেখানে হাজির ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার ও মলয় ঘটক এবং আসানসোলের সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা।
হুগলিতেও জেলা সদর চুঁচুড়ায় বিকেল ৫টায় কার্নিভালের উদ্বোধন হয়। কারবালা মোর থেকে শুরু করে বিবেকানন্দ রোড হয়ে বকুলতলা প্রতাপপুর গঙ্গার পার বরাবর দক্ষিণ দিকে এগোয় শোভাযাত্রা। এর পর অন্নপূর্ণা ঘাটে কার্নিভাল শুরু হয়। অনুষ্ঠান শেষে ওই ঘাটেই হবে প্রতিমা নিরঞ্জন।
তবে এ বার অনেক পুজোই কার্নিভালে ছিল না। শিলিগুড়িতে দ্বিতীয় বছরের কার্নিভাল আড়ম্বরপূর্ণ হলেও অংশগ্রহণকারী ক্লাবের সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে। শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের মহানন্দা নদী সংলগ্ন গান্ধীচকে এ বার কার্নিভাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে ২০টি ক্লাবের অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও শেষমেশ অংশ নিয়েছে মাত্র ১০টি ক্লাব। যারা অংশ নেয়নি, তাদের অধিকাংশই শহরের মূল ক্লাব এবং সরকারি পুরস্কারপ্রাপ্ত। তাদের বক্তব্য, তারা বরাবর দশমীতেই বিসর্জন দিয়ে এসেছে। সেই রীতি তারা ভাঙতে চায় না। এ নিয়ে অবশ্য শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের বক্তব্য, ‘‘ক্লাবগুলো তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর আমাদের রাস্তার যা আয়তন, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি সব ক্লাব অংশগ্রহণ করত, তা হলে আমাদের দু’দিন সময় লেগে যেত। কিন্তু তার অনুমতি নেই। তবে আরও ক্লাব অংশগ্রহণ করলে হয়তো ভাল লাগত।’’
কোচবিহারে বিশ্বসিংহ রোডে অনুষ্ঠিত হয়েছে পুজো কার্নিভাল। তার উদ্বোধন করেন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক অরবিন্দকুমার বিনা এবং জেলা পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য। এ বার জেলার মোট ১২টি পুজোকে বিশ্ববাংলা শারদ সম্মান দিয়েছে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে চারটি ক্লাব কার্নিভালে অংশ নেয়নি। তাদের মধ্যে অন্যতম দিনহাটার মদনমোহন বাড়ি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সদস্য অমিত দাস বলেন, ‘‘কার্নিভালে অংশগ্রহণের জন্য যে আয়োজন করার দরকার ছিল, তা আমরা করতে পারিনি।’’ কোচবিহারের কার্নিভালে অংশ নেয়নি শহরের লীলা স্মৃতি ভবানী মন্দির দুর্গাপুজো কমিটি। ওই পুজো কমিটির সদস্য শুভজিৎ কুন্ডু বলেন, ‘‘গতকাল আমাদের প্রতিমা বিসর্জন হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া আমাদের প্রতিমা এতটাই বড় যে, তা নিয়ে রাস্তায় শোভাযাত্রা করা সম্ভব নয়।’’
দক্ষিণ দিনাজপুরেও অধিকাংশ ক্লাব কার্নিভালে অংশ নেয়নি। অংশ না-নেওয়া ক্লাবগুলির বক্তব্য, কার্নিভালে অংশ নেওয়ার জন্য খরচ হয়, তা অনেক সময়েই বহন করা সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনেরও কিছু করার থাকে না। তাই ইচ্ছে থাকলেও কার্নিভালে অংশ নিতে পারে না দূরদূরান্তের বহু ক্লাব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy