Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Tajpur Port

তাজপুর বন্দরে কাজের আশা, আশঙ্কার মেঘও

তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর চলেছে দীর্ঘ দিন। কেন্দ্র একাধিক বার আগ্রহ দেখালেও শেষে রাজ্য জানায়, তারা একাই বন্দর গড়বে। শেষে সিদ্ধান্ত বদলায়।

ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা পেশা হারানো ভয়ে রয়েছেন।

ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা পেশা হারানো ভয়ে রয়েছেন। প্রতীকী ছবি।

কেশব মান্না
তাজপুর শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৩৪
Share: Save:

তাজপুরে পরিবেশ বান্ধব বন্দর গড়বে আদানিরা। সব ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি চালু হতে পারে এই গভীর সমুদ্র বন্দর। ফলে, বিপুল বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের আশায় বুক বেঁধেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবাসী। অনুসারী শিল্প এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশেও অর্থনীতি মজবুত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। সঙ্গে ঘনাচ্ছে আশঙ্কাও। বন্দর হলে তাজপুর যাঁদের বসতভূমি, সেই ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা পেশা হারানো ভয়ে রয়েছেন।

তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর চলেছে দীর্ঘ দিন। কেন্দ্র একাধিক বার আগ্রহ দেখালেও শেষে রাজ্য জানায়, তারা একাই বন্দর গড়বে। শেষে সিদ্ধান্ত বদলায়। বন্দর তৈরির জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকস্তরে আগ্রহপত্র চাওয়া হয়। তারপরই কাজের বরাত আদানি গোষ্ঠীকে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিকাঠামো নির্মাণে ১৫ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করবে আদানি গোষ্ঠী। টেন্ডার হলে আনুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহপত্র (ইওআই) আদানি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

স্থানীয় তালগাছাড়ি-২ পঞ্চায়েতের প্রধান বিশ্বজিৎ জানা জানালেন, কয়েক মাস আগে একাধিকবার আদানি গোষ্ঠীর লোকেরা এলাকা ঘুরে গিয়েছেন। তবে কোন কোন মৌজায় জমি অধিগ্রহণ হবে, কী ভাবে বন্দরের কাজ এগোবে তা স্পষ্ট নয়। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যেরমন্ত্রী অখিল গিরি বলছেন, ‘‘তাজপুরে আদানি গোষ্ঠী বন্দর গড়বে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের হাতে আগ্রহপত্র তুলে দিলে কাজ শুরু হবে। এতে এলাকার মানুষের যেমন কর্মসংস্থান হবে তেমনই অর্থনীতিরও ভোলপাল্টে যাবে।’’

তাজপুরে বন্দর গড়ে উঠলে পণ্য পরিবহণে ধামড়া বা হলদিয়া বন্দরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না বলেই আশা। পুষ্ট হবে পর্যটন শিল্পও। রাজ্যের জনপ্রিয়তম সৈকত পর্যটন কেন্দ্র দিঘা থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে তাজপুর। এক দশকের বেশিও এখানে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হয়েছে। বন্দর হলে পর্যটন আরও চাঙ্গা হবে, আশাবাদী হোটেল মালিকরা। তাজপুর হোটেল মালিক সংগঠনের সম্পাদক শ্যামলকুমার দাস বলেন, ‘‘বন্দর হলে প্রচুর মানুষের আনাগোনা হবে। এলাকার অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাবে।’’

তবে রয়েছে আশঙ্কাও। রামনগর-১ ব্লকের এই এলাকার অর্থনীতি গোড়া থেকেই স্থানীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের উপরে নির্ভরশীল। রামনগর-১ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রামনগর-২ ব্লকের জলধা, নিউ জলধা, দাদনপাত্রবাড়, শঙ্করপুরের মতো এলাকায় একাধিক মৎস্যখটি রয়েছে। গোটা পূর্ব মেদিনীপুরে যে হাজার পঞ্চাশেক ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীর বাস, তার অধিকাংশই তাজপুর এবং সংলগ্ন এলাকায় থাকেন। কাজ হারানোর ভয়ে রয়েছেন তাঁরা। দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিস শ্যামল বলেন, ‘‘তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর হলে এলাকার ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের জীবন এবং জীবিকা সঙ্কটে পড়বে। ধ্বংস হবে চিরাচরিত মৎস্যক্ষেত্র। লুপ্ত হবে খটিগুলি। কৃষ্ণপট্টিনাম, ধামড়া, ভিজিনজাম-সহ সব সমুদ্র বন্দরই এর প্রমাণ দিচ্ছে।’’

তাজপুর বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। কলকাতা বন্দরের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ সংস্থা এইচওডব্লিউই-এর রিপোর্ট বলছে, তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দরের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল নয়। ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে ওড়িশা উপকূলে টাটা গোষ্ঠীর ১৮ মিটার নাব্যতা যুক্ত সুবর্ণরেখা বন্দরের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে তাজপুরকে। এ ছাড়া, ২৫ কিলোমিটার শিপিং চ্যানে ড্রেজ়িয়ের বার্ষিক খরচও আকাশছোঁয়া হবে বলে ২০১৯ সালে জানিয়েছিল ওই সংস্থা। পাশাপাশি হলদিয়া বন্দরেরও আধুনিকীকরণ হচ্ছে যাতে সেখানেও ছোট এবং মাঝারি মাপের জাহাজ বেশ সংখ্যায় সংখ্যায় আসতে পারে। হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) প্রবীণকুমার দাস মানছেন, ‘‘আরও বেশি পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যে আমরা প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ করছি।’’

অর্থাৎ চ্যালেঞ্জ বাড়ছে তাজপুরের।

অন্য বিষয়গুলি:

Tajpur Port Fishermen Employment Adani Group
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy