Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

আ মরি বাংলা ভাষায় বাঙালি ভ্যাবাচ্যাকা

এর আগে মোদীর রবীন্দ্র-উদ্ধৃতি ‘চোলায় চোলায় (চলায় চলায়) উঠবে জয়ের ভেরী’ বা ‘ওরে গ্রহবাসী’ কার্যত প্রবাদবাক্যের চেহারা নিয়েছিল।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বক্ত‌ৃতা দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বক্ত‌ৃতা দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৫১
Share: Save:

‘বাংলাই বলছেন তো’? জোর জল্পনা চলছে সমাজমাধ্যমে। সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলা বক্তৃতার অংশ। শনিবার সন্ধ্যায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে সুভাষ-জয়ন্তীতে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি নিয়ে তুলকালামই সব নয়! প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার অংশ নিয়েও উত্তাল নেটপাড়ার বাঙালি।

এর আগে মোদীর রবীন্দ্র-উদ্ধৃতি ‘চোলায় চোলায় (চলায় চলায়) উঠবে জয়ের ভেরী’ বা ‘ওরে গ্রহবাসী’ কার্যত প্রবাদবাক্যের চেহারা নিয়েছিল। তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সুভাষ-উদ্ধৃতিও টক্কর দিচ্ছে। যেমন একটি অংশে কানে আসছে, পুরুষর্থ (পুরুষার্থ), বা উদবুধ (উদ্বুদ্ধ)-এর মতো কয়েকটি শব্দ। কিন্তু সব মিলিয়ে ঠিক কী বলছেন, বুঝতে হিমশিম বহু বাঙালিই। অগত্যা ‘দারুণ বক্তৃতা হয়েছে! সব বুঝতে পেরেছি’, বলে রসিকতার ছড়াছড়ি।

ইতিহাসবিদ তথা সুভাষচন্দ্র বসুর নাতি (ভ্রাতুষ্পুত্র-পুত্র) সুগত বসু মোদীর পুরো বক্তৃতা শোনার সময় পাননি বলে জানিয়েছেন। তবে কিছু অংশ তিনি খেয়াল করেছেন। যেমন, মোদীর বক্তৃতায় ছিল ১৯৪৪-এ রেঙ্গুন রেডিয়ো থেকে প্রচারিত সুভাষচন্দ্রের কণ্ঠে আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনাদের উদ্দেশে প্রচারিত একটি চমৎকার কাব্যিক বার্তা। মূল ইংরেজিতে যার নাম, ‘অর্ডার অব দ্য ডে’! নেতাজি বলেন, ‘...হার্ক ইন্ডিয়া ইজ় কলিং

ইন্ডিয়াজ় মেট্রোপলিস দিল্লি ইজ় কলিং...

ব্লাড ইজ় কলিং টু ব্লাড...’

মোদীর ভাষান্তর ও উচ্চারণে তা মোটামুটি ‘ভারত ডাকছে। রক্ত ডাক দিয়েছে রক্তকে’ ইত্যাদি। সুগতবাবুর কথায়, “নেতাজির লেখা এই বার্তাটি তো ইংরেজিতেই ছিল। বাংলা না বলে ইংরেজিতে বললেই সবার বুঝতে সুবিধা হত।”

অনেকেই অবশ্য মনে করেন, মোদীর বাংলার উচ্চারণের ভুল তত দোষের নয়। কিন্তু শনিবারও তিনি যে ভাবে ‘যা’ কিংবা ‘বা’ বলেছেন, তা বাংলা বাক্যগঠনের রীতি বা উচ্চারণে যতির ব্যবহার কোনও কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। হঠাৎ অচেনা ভাষায় বক্তৃতা দিলে এমন সঙ্কট হতেই পারে। কিন্তু এর ফলে, অনেকেই তিনি কী বলছেন তা সবটা বুঝতে পারেননি।

বাংলা ভাষা, সংস্কৃতির আদরযত্ন, বিকাশে অবশ্য মিশে রয়েছে অগুনতি অ-বাংলাভাষীর অবদান। জন্মসূত্রে পঞ্জাবি রাজেশ্বরী দত্তের রবীন্দ্রসঙ্গীতে যে ভাবে বাণী ও ভাবের আত্তীকরণ ঘটে, তা যে কোনও বাঙালির কাছেও ঈর্ষণীয়। “কিন্তু বাংলায় এই দক্ষতা তো কারও নিমেষে চলে আসে না,” বলছেন জন্মসূত্রে তামিলভাষী বাংলা ভাষার চিত্রপরিচালক অশোক বিশ্বনাথন। তাঁর কথায়, “বাংলায় এসে বাংলা বলার চেষ্টা ভালই। কিন্তু কোনও ভাষা বলার সময়ে তার উচ্চারণ, প্রক্ষেপণের দিকটা ভুললে মুশকিল। তা হলে বিষয়টা স্রেফ দেখনদারি হয়ে দাঁড়ায়।” অমিতাভ বচ্চন থেকে শাহরুখ খান, অনেকেরই বাংলা নিয়ে আগে প্রশ্ন উঠেছে। অমিতাভ কলকাতায় কিছু সময় থাকার দরুণ হয়তো কিছুটা সুবিধা পেয়েছেন। মোদীর বক্তৃতার দিনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রেড রোড়ের অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় গুজরাতি, পঞ্জাবি শব্দ মিশিয়ে ভাষার বৈচিত্র্য বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। বাংলার মনীষীদের প্রসঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে বলেছেন, “তাঁরা আমাদের ইলিউশন, ক্রিয়েশন, প্রোমোশন, অ্যাকশন।”

নাট্যকর্মী সোহিনী হালদারের মতে, “মমতাদির বক্তৃতাতেও হিন্দি, ইংরেজির ভুল। কিন্তু সেটা জড়তার সৃষ্টি করেনি। মোদীর বাংলা বলার চেষ্টা একেবারে ফেলনা নয়। ভোটের আগে ভাষা দিয়ে ইমেজ তৈরির চেষ্টা রাজনীতিরই অঙ্গ।”

আমরা বাঙালিরাই বা ক’জন মর্যাদার সঙ্গে নিজের ভাষাটা বলি? নেতানেত্রীদের ভোটের ভাষা নিয়ে কিচিরমিচিরে এই প্রশ্নটাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy