ক্রেনের সাহায্যে তোলা হচ্ছে কাটামো। ছবি পিটিআই।
মুখে মাস্ক নেই কেন? প্রশ্নটা শুনে এতটুকুও অস্বস্তিতে না-পড়ে পশ্চিম বর্ধমানে দামোদরের ঘাটে বিসর্জনে আসা সুধা দাসের জবাব, ‘‘টিকার দু’টো ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে। অসুবিধে কোথায়?”
তিনি তবু দুই ডোজ় পেয়েছেন। কিন্তু, রবিবার বিসর্জনের ভিড়ে মাস্কহীন জনতার একাংশ এখনও টিকা-বঞ্চিত। অনেকে একটা ডোজ় পেয়েছেন। তাতেই ভাবছেন, কেল্লাফতে! বস্তুত, সিঁদুরখেলা থেকে শুরু করে প্রতিমা নিরঞ্জন— দশমী ও একাদশীতে উত্তর থেকে দক্ষিণে কোভিড বিধিভঙ্গের যে ছবি দেখা গিয়েছে, তার রেশ থাকল দ্বাদশীতেও। মাস্ক ছাড়া শোভাযাত্রায় শামিল হওয়া, দূরত্ববিধির দফারফা দেখা গিয়েছে অনেক জায়গাতেই। আবার বেশ কিছু জায়গায় ভিড় এড়িয়ে বিসর্জন হয়েছে। একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকের গলায় আশঙ্কা—‘‘পুজোর দিনগুলিতে আর ভাসানে যা ভিড় দেখলাম, তাতে আগামী এক-দুই সপ্তাহে পরিস্থিতি কোন দিকে যেতে পারে, আন্দাজ করা যাচ্ছে না।’’
বীরভূমে জাঁক করে শোভাযাত্রা না-হলেও মণ্ডপের সামনে বক্স বাজিয়ে নাচ, কোথাও দূরত্ব বিধি শিকেয় তুলে সিঁদুর খেলা হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনকেও রাস্তায় নেমে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলছেন, ‘‘মানুষ এখনও নিজে সচেতন না হলে বড়ই মুশকিল।’’ পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ও আদ্রায় এ দিন বিসর্জনে জমায়েত দেখা যায়। প্রায় কারও মুখেই মাস্ক ছিল না। দুর্গাপুরের বীরভানপুর ঘাটেও মাস্ক না-পরে এসেছিলেন অনেকে। পুলিশ টহল দেওয়ার সময়ে কেউ-কেউ দ্রুত মাস্ক পরে নেন। অন্য দিকে, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম-সহ অনেক জায়গায় বিধি ভাঙার ছবি এ দিন সে ভাবে চোখে পড়েনি।
ফি-বছর বিসর্জনের দোসর হয়ে উঠে আসে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ। জেলার পুকুরে পুকুরে প্রতিমার কাঠামো ভেসে থাকার ছবি খুবই চেনা। তবে, অনেক জায়গাতেই স্থানীয় পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলি নিজেদের মতো চেষ্টা করছে এই দূষণ কমানোর।
হাওড়ার উলুবেড়িয়া পুরসভার তরফে যেমন প্রতিমা গঙ্গায় পড়ামাত্র ক্রেনের মাধ্যমে কাঠামো জল থেকে তুলে আনা হচ্ছে। ফুল ও পুজোর অন্য সামগ্রী ফেলা হচ্ছে নদীর পাড়ে রাখা ভ্যাটে। একই ভাবে প্রতিমা গঙ্গায় না ফেলে পাড়ে হোসপাইপের মাধ্যমে গঙ্গাজল দিয়ে গলানোর ব্যবস্থা করছে হুগলির কোন্নগর পুরসভা। ভাগীরথী পাড়ের বহরমপুরে ১৪টি ঘাটও প্রায় পরিষ্কার। বিসর্জনের পরে পরেই নদীর তীর পরিচ্ছন্ন রেখে পুরসভা প্রশংসা কুড়িয়েছে শহরবাসীর।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুকে পুকুর-জলাশয়ে দূষণ রুখতে রূপনারায়ণের সঙ্গে যুক্ত শঙ্করআড়া খালে পুর-এলাকার সব প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কাঠামো তোলার জন্য ছিলেন পুরকর্মীরা, যন্ত্রও রাখা হয়েছিল। দুর্গাপুরের বীরভানপুরে দামোদরের ঘাটও পরিষ্কার ছিল।
এই সচেতনতা অবশ্য সর্বত্র চোখে পড়েনি। পূর্ব বর্ধমানের কালনা, কাটোয়ায় ভাগীরথীতে বিসর্জনের পরে কাঠামো, রং, ফুল-বেলপাতা ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। নানা পুকুরেও একই পরিস্থিতি। উত্তরের আলিপুরদুয়ার জেলার জয়ন্তী নদী থেকে শিলিগুড়ি, মালদহের মহানন্দা বা রায়গঞ্জের কুলিক, ছবিটা আলাদা নয়। বিশেষ করে শহরের বাইরের নদী প্রতিমার কাঠামো, পুজা সামগ্রীতে ভরে উঠেছে। তিস্তা বা তোর্সা নদীর দূষণের মাত্রা বছরের পর বছরের একই রয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ একাধিক জেলায় ভোগ বিতরণের থার্মোকলের প্লেট ও বাটি পড়ে রয়েছে বহু মণ্ডপের কাছে। তা থেকেও বাড়ছে দূষণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy