Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Aadhar Card Row

‘নিষ্ক্রিয়’ আধার চালু অনেকের, বাতিল কেন করা হয়েছিল, প্রশ্নের মুখে আধার কর্তৃপক্ষ

গত দু’এক সপ্তাহে অনেক মানুষ আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার নোটিস পেয়েছিলেন। এতে নাগরিকদের ভোটাধিকার ও অন্যান্য অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হয়েছেন।

aadhaar card

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৫৮
Share: Save:

গত এক সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যাঁদের আধার কার্ড ‘নিষ্ক্রিয়’ করে দেওয়া হয়েছিল, মঙ্গলবার থেকে সেই আধার আবার কাজ করতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তাঁদের অনেকেই। তেমনই আবার কেউ কেউ প্রথমে আধার চালু হওয়ার পরে যাচাই করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বলেও জানিয়েছেন।

তবে আপাতত আধার চালু হয়ে গেলেও কিসের ভিত্তিতে আধার কর্তৃপক্ষ ইউআইডিএআই আধার নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিলেন, তার উত্তর এখনও মেলেনি। আধার নিষ্ক্রিয় করার কথা জানিয়ে জেলায়-জেলায় বিভিন্ন জনের কাছে যে চিঠি গিয়েছিল, তা-ও প্রত্যাহার করা হয়নি। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকপঞ্জি বিরোধী যুক্তমঞ্চ বা ‘জয়েন্ট ফোরাম এগেন্স্ট এনআরসি’ আধার কর্তৃপক্ষকে আইনি চিঠি পাঠাতে চলেছে।

যুক্তমঞ্চের অভিযোগ, আধার বিধিনিয়মের যে ২৮এ ধারায় তা নিষ্ক্রিয় করার নোটিস পাঠানো হয়েছিল, সেটি শুধুমাত্র বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। গত বছর সেপ্টেম্বরে চুপিসারে সরকারি নির্দেশিকা জারি করে আধার (নথিভুক্তিকরণ ও তথ্য সংযোজন) নিয়ন্ত্রণ বিধিনিয়মের এই ধারাটি যোগ করা হয়েছে। তার আগে আধার কর্তৃপক্ষই তথ্যের অধিকার আইনে অতীতে জানিয়েছে, তাদের নাগরিকত্ব নির্ধারণ করার ক্ষমতা নেই। মঞ্চের প্রশ্ন, তা হলে এখন আধার কর্তৃপক্ষ কী ভাবে কাউকে বিদেশি নাগরিক বলে সন্দেহ করে আধার নিষ্ক্রিয় করার নোটিস পাঠাতে পারে?

নাগরিকপঞ্জি-বিরোধী যুক্তমঞ্চের আহ্বায়ক প্রসেনজিৎ বসুর অভিযোগ, সিএএ, এনআরসি-কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যে সব মামলা হয়েছিল, তার এখনও ফয়সালা হয়নি। তাই কেন্দ্র সম্ভবত ঘুরপথে এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি চালু করতে চাইছে। আধার নিষ্ক্রিয় করার নোটিস পাঠিয়ে এনপিআর তৈরির মতো প্রথমেই কাউকে ‘সন্দেহভাজন নাগরিক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এর পরের ধাপই এনআরসি। যুক্তমঞ্চের বক্তব্য, আধার নিষ্ক্রিয় করার নোটিস প্রত্যাহার করা না হলে, তাঁরা ফের আদালতে জনস্বার্থমামলা করবেন।

গত দু’এক সপ্তাহে উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান, মেদিনীপুরের অনেক মানুষ আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার নোটিস পেয়েছিলেন। এতে নাগরিকদের ভোটাধিকার ও অন্যান্য অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হয়েছেন। উল্টো দিকে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদারদের আশ্বাস, আধার বাতিল হবে না। আধার কর্তৃপক্ষও সোমবার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, কারও আধার বাতিল হচ্ছে না।

এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার থেকে অনেকেই আধার সক্রিয় হয়ে ওঠার বার্তা পেয়েছেন। যেমন, মেদিনীপুর-গ্রামীণের খয়েরুল্লার বাসিন্দা সোহাগ দাসকে ডাকযোগে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছিল, তাঁর আধার বাতিল হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনেন তিনি। আধার কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানান। তার পরে ফের তাঁর আধার সক্রিয় হয়েছে। মঙ্গলবার সোহাগ বলেন, ‘‘আধার নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল। এ দিন ফের তা সক্রিয় হয়েছে। মোবাইলে মেসেজ পেয়েছি।’’ কিন্তু মেসেজ পাওয়ার পরেও অনেকে পোর্টালে যাচাই করতে গিয়ে প্রযুক্তিগত ত্রুটির বার্তা পেয়েছেন বলে দাবি। এঁদের প্রায় কারও কাছেই আগের নোটিস প্রত্যাহারেরবার্তা আসেনি।

যুক্তমঞ্চের বক্তব্য, গত বছর এপ্রিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আধার কর্তৃপক্ষ ইউআইডিএআই-কে চিঠি পাঠিয়েছিল। সেই চিঠিতে কিছু এলাকায় বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার কথা বলা হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকেও চিঠি পাঠানো হয়। এর পরে আধার কর্তৃপক্ষ তথ্যের অধিকার আইনে প্রশ্নের উত্তরে জানায়, নাগরিকত্ব নির্ণয় করা তাদের কাজ নয়। শুধুমাত্র ভারতে সাধারণ ভাবে বসবাসকারীদের আধার দেওয়া হয়। এর পরে ২৯ সেপ্টেম্বর আধারের নিয়মাবলি বা আধার (নথিভুক্তিকরণ ও তথ্য সংযোজন) নিয়ন্ত্রণ বিধিনিয়মে ২৮এ ধারা যোগ করা হয়। এ জন্য সংসদে বিল আসেনি। স্রেফ সরকারি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। এই ২৮এ ধারায় বলা হয়, বিদেশি নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ ফুরোলে তাঁদের আধার নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, যে সব ক্ষেত্রে আধার কর্তৃপক্ষ মনে করবে যে বিদেশি নাগরিকেরা পাসপোর্ট আইনে তাঁদের ভারতে ঢোকার বা ভারতে থাকার প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পারছেন না, তাঁদেরও আধার নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হবে।

প্রসেনজিৎ বলেন, এই ২৮এ ধারায় নোটিস জারি করে প্রথমেই নাগরিকদের সন্দেহভাজন অনুপ্রবেশকারী বা বিদেশি নাগরিকের তকমা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা তো ঘুরপথে এনআরএসি তৈরি করা। ফলে অরাজকতা তৈরি হয়েছে। আধারের সমান্তরাল ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে। এক দিকে জাহাজ প্রতিমন্ত্রী থেকে বিজেপি নেতারা তাঁদের কাছে আধার নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া মানুষের নাম জমা দিতে বলছেন। অন্য দিকে রাজ্যও পোর্টাল খুলে পৃথক কার্ড বিলি করবে বলে আশ্বাস দিচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট এনআরসি নিয়ে রায় দেওয়ার আগে ঘুরপথে এনআরসি তৈরির চেষ্টা হলে, আদালতে জনস্বার্থ মামলা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Aadhaar Cards West Bengal UIDAI Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy