বাজেটে অর্থের যে অঙ্ক প্রস্তাব করা হয়েছিল, অনুমোদনে তার থেকে বরাদ্দ কমেছে অনেকেটাই। তার পরেও সেই অর্থ আটকে আছে অর্থ দফতরে।
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের গৃহীত নানা প্রকল্পের অবস্থা যাচাই করতে গিয়ে এই তথ্যই পেয়েছে বিধানসভার সংশ্লিষ্ট দফতরের স্ট্যান্ডিং কমিটি। এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সরকারি প্রকল্প চালু রাখতে আটকে থাকা অর্থের জন্য কমিটির সাম্প্রতিক রিপোর্টে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকদের অর্থ দফতরে তদ্বিরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে!
লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের শহর এলাকায় বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে শাসক তৃণমূল। কলকাতা-সহ রাজ্যের প্রায় ৭৫% পুর এলাকায় হার হয়েছে তাদের। এই অবস্থায় শাসক দল যখন এই হারের কারণ খুঁজতে হন্যে হয়ে ঘুরছে, তখনই সরকারি প্রকল্প ও তার রূপায়ণে অর্থাভাব স্পষ্ট হয়েছে বিধায়কদের নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির চোখে। দেখা গিয়েছে, দফতরের বাজেট থেকে শুরু করে একেবারে শেষ ধাপ পর্যন্ত একাধিক ধাপে অর্থ ব্যয় কমেছে। সেই কারণেই নির্ধারিত সময়ে কাজ অসম্পূর্ণ থাকার মতো বিষয় তো আছেই, প্রকল্প আটকে যাওয়ার ঘটনাও অস্বাভাবিক নয়।
২০২১ সালে গঠিত বিধানসভার এই কমিটির তৃতীয় রিপোর্টে বাজেটের প্রস্তাব, অনুমোদন ও খরচে যে ফারাক ধরা পড়েছে, তা যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি হিসাবেরও উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন খাতেই এই রকম একাধিক ব্যয় সঙ্কোচনের দৃষ্টান্ত ও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ ত্রৈমাসিক পর্যায়ে হাতে পাওয়ার জন্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকদের অর্থ দফতরে তদ্বির করা উচিত।’ কমিটি মনে করছে, রাজ্যের ১২৮টি পুরসভা ও পুর-নিগম, ২১টি শিল্পনগরীতে সরকারি প্রকল্পের কাজ চালু রাখতে এই উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গে, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গৃহীত প্রকল্পের পর্যালোচনার জন্য বিভাগীয় আধিকারিকদের উদ্যোগও প্রয়োজন। রাজ্যের অর্থ দফতর শুধু নয়, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ অর্থ ব্যয়েও ‘নেতিবাচক’ পরিস্থিতির উল্লেখ আছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, ‘নগরোন্নয়ন দফতর, পঞ্চায়েত দফতরে তদ্বির করে কেন্দ্রীয় তহবিল খরচের ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া উচিত’।
কেন্দ্রীয় অর্থে যৌথ ভাবে রূপায়িত পুর ও পঞ্চায়েত দফতরের কিছু প্রকল্পেও ‘জট’ চিহ্নিত করেছে কমিটি। তার রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকারি প্রকল্প রূপায়ণে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর যেমন কেন্দ্রীয় অর্থ পায়, তাতে ভাগ রয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরেরও। সেই অর্থে নিজেদের অংশ পেতে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরেরও পঞ্চায়েত দফতরে বিশেষ তদ্বির করা উচিত।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)