ক্রেতাসুরক্ষা আদালতে মানসকুমার দাস নামে এক ব্যক্তির অভিযোগ, তাঁর নিজের ২ লক্ষ এবং পরিচিতদের ৫ লক্ষ টাকা খোয়া গিয়েছে। বেহালার আরাত্রিকা গুপ্ত বলেন, ‘‘আমার নিজের প্রায় ১ লক্ষ টাকা ডুবেছে। লোভে পড়ে বাবার মোবাইল থেকেও ১৬ হাজার দিয়েছিলাম। সেটাও উধাও।’’
প্রতীকী ছবি।
মোবাইলে পাঠানো লিঙ্কের সূত্র ধরে নির্দিষ্ট ‘পেজে’ পৌঁছে বোতাম টিপলেই ‘ঝনঝন’ শব্দে ভার্চুয়াল টাকা জমা পড়ছে ভার্চুয়াল তহবিলে। বাড়ছে উৎসাহ। বাজারের তুলনায় নাকি কয়েক গুণ বেশি দৈনিক সুদ মিলছে তাতে! সেই লোভে পা দিয়েই কষ্টার্জিত টাকা খুইয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার বন্ধু, আত্মীয়, পরিজনদেরও এই ফাঁদে ফেলেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় রয়েছেন এ রাজ্যেরও অনেকে। এ নিয়ে পুলিশের কাছে এখনও কিছু অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে ক্রেতাসুরক্ষা আদালতে মামলা হয়েছে।
ক্রেতাসুরক্ষা আদালতে মানসকুমার দাস নামে এক ব্যক্তির অভিযোগ, তাঁর নিজের ২ লক্ষ এবং পরিচিতদের ৫ লক্ষ টাকা খোয়া গিয়েছে। বেহালার আরাত্রিকা গুপ্ত বলেন, ‘‘আমার নিজের প্রায় ১ লক্ষ টাকা ডুবেছে। লোভে পড়ে বাবার মোবাইল থেকেও ১৬ হাজার দিয়েছিলাম। সেটাও উধাও।’’ বন্ধুর কথায় বিনিয়োগ করেছিলেন শিবপুরের উত্তরা চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘দেড় লক্ষ টাকা মেলেনি।’’ আরাত্রিকা এবং উত্তরা অনলাইনে ক্রেতাসুরক্ষা আদালতে নালিশ জানিয়েছেন।
অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, ওই লিঙ্ক মারফত তাঁরা যেখানে টাকা ঢেলেছিলেন, অনেকের ধারণা ছিল, তা ক্রিপ্টোকারেন্সি (এক ধরনের ডিজিটাল ‘মুদ্রা’)। বলা হয়েছিল, ৮ হাজার টাকা দিলেই প্রতি দিন ৫০০ টাকা, ১৬ হাজার টাকা দিলে দিনে হাজার টাকা সুদ মিলবে। যত টাকা বাড়বে, দৈনিক সুদও বাড়বে তেমন। নির্দিষ্ট দিন পরে মিলবে আসল। সুদ ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্টে এসেছিল। কিন্তু ভার্চুয়াল টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাতে গেলেই বিপত্তি। কখনও ‘নেটওয়ার্ক এরর’, কখনও ‘অ্যাপ্লাইং’ দেখিয়ে সেই প্রক্রিয়া ঝুলে থাকছিল। কিন্তু তেমনই কখনও আবার সামান্য টাকা ঢুকেও গিয়েছে অ্যাকাউন্টে। তাতেই বিশ্বাস বেড়েছিল অনেকের, ঝুঁকি নিয়েছিলেন আরও বিনিয়োগের।
জানা গিয়েছে, এই বিনিয়োগ করতে করতেই আচমকা এক দিন বন্ধ হয়ে গিয়েছে লিঙ্ক। খুলছে না সংস্থার ওয়েবসাইটও। এই সূত্রে অনেকেরই মনে উস্কে উঠেছে, সারদা কেলেঙ্কারির স্মৃতি। এ ভাবেই অতিরিক্ত সুদের লোভ দেখিয়ে বেআইনি লগ্নি সংস্থাগুলি মানুষের আমানত হাতিয়ে নিয়েছিল। সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “ক্রিপ্টোকারেন্সি আইনি নাকি বেআইনি, সেটাই তো স্পষ্ট নয়। তবু লাভের লোভে প্রচুর লোকে বিনিয়োগ করেছে। এ নিয়ে যদি কেলেঙ্কারি হয়, তা হলে তার পরিমাণ বোধ হয় দেশের অর্থনীতিকেও ছাপিয়ে যেতে পারে!” কেন্দ্র অবশ্য সম্প্রতি জানিয়েছে, কোনও বেসরকারি ক্রিপ্টো মুদ্রা লেনদেনের জন্য নয়। তা বড়জোর আগামী দিনে সম্পদ হিসাবে দেখা হতে পারে। কিন্তু তার উপরে নিয়ন্ত্রণ কেমন থাকবে, তা স্পষ্ট নয় এখনও।
অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, ওই লিঙ্কে ন্যূনতম ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হত। টাকা দিতে হত মোবাইলের মাধ্যমে। বলা হয়েছিল, ওই টাকায় মাইনিং মেশিন (ক্রিপ্টোকারেন্সি উৎপাদনের জন্য উন্নত প্রসেসর-সহ সিপিইউ) কেনা হবে। আদতে, এই অর্থের কোনও বাস্তব উপস্থিতি থাকে না। শক্তিশালী কম্পিউটারে অ্যালগরিদমের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ভাবে উৎপন্ন করা হয়। বিভাস বলছেন, “ক্রিপ্টোকারেন্সি আদতে একটি বিকেন্দ্রীভূত অর্থনীতি। এখানে কোনও সরকারি বা নির্দিষ্ট সংস্থার নিয়ন্ত্রণ নেই। এ ব্যাপারে কোনও কেলেঙ্কারি হলে, তা ধরাও কার্যত অসম্ভব।” এই ফাঁদ যে কঠিন তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন টাকা খোয়ানো মানুষজন। কারণ, বিনিয়োগের কোনও পাকা রসিদ নেই। নেই কোনও অফিস বা কর্মচারী। পুরোটাই ছিল ভার্চুয়াল। তাই অভিযোগ জানালেও
কার বিরুদ্ধে, কোথায় কী হবে কিছুই জানা নেই। বিভাস বলছেন, “বিষয়টি কী তা না জেনেই টাকার লোভে মানুষ ক্রিপ্টোকারেন্সির পিছনে ছুটছেন। আমি বলব, সরকারি স্তরে কোনও নির্দিষ্ট নীতি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত
এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগের থেকে দূরে থাকাই ভাল।”
সহ প্রতিবেদন: কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy