E-Paper

উত্তরের জঙ্গলে ‘নিয়মের ফাঁকে’ নির্মাণ, নালিশ শাসক-যোগের

বন দফতর ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যাপারে বিধি মানার দাবি করলেও, বিরোধীরা ঘটনায় ‘তৃণমূল-যোগ’ দেখছে। অভিযোগ মানছেন না শাসক দলের নেতারা।

—প্রতীকী ছবি।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:২২
Share
Save

মূর্তিতে জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় একাধিক রিসর্টের নির্মাণ চলছে। নাগরাকাটায় জঙ্গলের পাশে কাঠের বাড়ি গড়ে শুরু হয়েছে বিলাসবহুল ‘হোম স্টে।’ রাজাভাতখাওয়ার জঙ্গলে ‘কোর’ এলাকায় হয়েছে নির্মাণ। গরুমারার জঙ্গল ঘেঁষে হোটেলে মধ্যরাত পর্যন্ত ডিজে বাজিয়ে ‘উৎসব’ চলে। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পরে এমনই সব অভিযোগ করে পরিবেশকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, জঙ্গল লাগোয়া বা ‘কোর’ এলাকা ঘেঁষে হওয়া নির্মাণের ছাড়পত্র দেওয়া হল কেন? গরুমারা, লাটাগুড়ি, চাপরামারি জঙ্গলের পাশে থাকা রিসর্টে রাতভর শব্দ-তাণ্ডব এবং রঙিন আলোর খেলা চললেও বন দফতর অভিযোগ করে না কেন? বন দফতর ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যাপারে বিধি মানার দাবি করলেও, বিরোধীরা ঘটনায় ‘তৃণমূল-যোগ’ দেখছে। অভিযোগ মানছেন না শাসক দলের নেতারা।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পরিবেশের পক্ষে স্পর্শকাতর অর্থাৎ, ‘ইকো সেনসিটিভ জ়োন’ ঘোষণা করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। স্থির হয়েছে, জঙ্গলভেদে লাগোয়া এক থেকে পাঁচ কিলোমিটার এলাকাকে চিহ্নিত করা হবে ‘স্পর্শকাতর’ হিসাবে। তবে জলপাইগুড়িতে তেমন এলাকার মধ্যে নির্মাণের কাজ চলছে বলে অভিযোগ।

কী ভাবে? জেলার এক বন-কর্তার কথায়, ‘‘মেটেলি এবং নাগরাকাটার দু’টি নির্মাণে আপত্তি জানানো হয়েছিল। এক রাজনৈতিক দলের নেতা এবং এক জনপ্রতিনিধি আমাদের আপত্তি প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেন। তা শোনা হয়নি। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে জানতে চাওয়া হয়, আমাদের আপত্তি করার কী এক্তিয়ার আছে? এখন নির্মাণ চলছে।’’ যদিও উত্তরবঙ্গে অতিরিক্ত মুখ্য বনপাল উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, ‘‘নির্মাণের ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর এলাকার যাবতীয় নিয়ম মানা হয়।’’

বন দফতরের আধিকারিকদের একাংশ নির্মাণের ক্ষেত্রে ‘আইনি ফাঁক’ দেখিয়েছেন। গরুমারা, বক্সা, জলদাপাড়া, মহানন্দা অভয়ারণ্য, চাপরামারি ছাড়াও উত্তরবঙ্গে প্রচুর ছোট-মাঝারি জঙ্গল রয়েছে, যেগুলি জাতীয় উদ্যান বা অভয়ারণ্যের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। বন্যপ্রাণী বিচরণের ক্ষেত্রে কোনও ফারাক না থাকলেও, তাদের জমির চরিত্রগত তফাত রয়েছে। যেমন গরুমারার সঙ্গে লাটাগুড়ির জঙ্গল বা নিম্ন টন্ডুর জঙ্গল মিশে গিয়েছে। ছোট জঙ্গলের পাশে নির্মাণ করতে বা ছোট জঙ্গলের ভিতরে নির্মাণে বন দফতরে ছাড়পত্র লাগে না। সেই সুযোগে ভূমি সংস্কার দফতর থেকে পাট্টা বার করে নির্মাণ করা যায় বলে সূত্রের দাবি। অথচ, সে নির্মাণে বন্যপ্রাণীদের সমস্যা বা পরিবেশ বিপন্ন হতে পারে। পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসুর দাবি, “দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গল লাগোয়া, এমনকি, জঙ্গলের জমিতে নির্মাণ চলছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, বাহুবলী, মাফিয়াদের দৌলতে এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতায় জঙ্গলের জমি লুট চলছে।”

নিম্ন টন্ডুর জঙ্গল লাগোয়া একটি আবাসন তৈরির প্রতিবাদে স্মারকলিপি দেওয়া থেকে শুরু করে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বিধানসভায় প্রশ্নও তোলেন। শঙ্করের দাবি, ‘‘জঙ্গলের কোর এলাকায়, হাতির চলাচলের পথে নির্মাণটি হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন হয়তো আপত্তি করে। কিন্তু তৃণমূলের বড় নেতা-মন্ত্রীদের অঙ্গুলিহেলনে ছাড়পত্র জুটে যায়।’’ তিনি জানান, লাটাগুড়িতে নির্মীয়মাণ একটি আবাসন নিয়ে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করবেন।

বনমন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পরে, নতুন করে নির্মাণে অনিয়ম ও তাতে শাসক দলের যোগের অভিযোগ প্রসঙ্গে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, “বন পরিচালনা হয় রাজ্য ও কেন্দ্রের দুই আইনে। সে সব দেখাশোনা করেন আধিকারিকেরা। এক জন মন্ত্রীর পক্ষে সব জঙ্গলে নজরদারি করা সম্ভবই না। এর সঙ্গে রাজনীতিকে যোগ করা অতিসরলীকরণ হয়ে যাবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার আসার পরে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জঙ্গলের আয়তন বেড়েছে, বন্যপ্রাণীরা সুরক্ষিত হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

North Bengal forest

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।