প্রতীকী ছবি।
শুধু উত্তরবঙ্গ নয়। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে দক্ষিণবঙ্গেও। করোনা অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভবনার মধ্যেই শিশুদের এমন আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে পরিজনদের মধ্যেও। তবে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শেষ দুই-তিন দিনে শহর এবং জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুরা করোনা নয়, অন্য ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য ভবনও।
কী কারণে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ল তা খতিয়ে দেখতে শিশু রোগ, মেডিসিন, জনস্বাস্থ্য, ভাইরোলজি বিষয়ের চিকিৎসকদের নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করেছে স্বাস্থ্য দফতর। আজ, বুধবার সেই কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন স্বাস্থ্য কর্তারা। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, “বিভিন্ন জায়গা থেকে শিশুদের ভাইরাস জ্বরে আক্রান্তের খবর মিলছে। বিষয়টি কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে চিকিৎসা রূপরেখা তৈরি হবে।” কমিটিতে মৌসুমী নন্দী, মিহির সরকার, বিভূতি সাহা, জ্যোর্তিময় পাল, সৌমিত্র ঘোষ, ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্যান্য চিকিৎসকেরা রয়েছেন।
সূত্রের খবর, গত দেড় মাসে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা প্রায় ৬০। তার মধ্যে আইসিইউ-তে রয়েছে ৬ জন। যাদের মধ্যে চার জন ভেন্টিলেশনে রয়েছে। সোমবার আরও ৬ জন শিশু জ্বর নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। ওই ছয় জনের মধ্যে এক জন অবশ্য ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। প্রত্যেককেই সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে, আরজি কর, বিসি রায় শিশু হাসপাতালেও ১০-১২ জন করে চিকিৎসাধীন রয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মূলত ছয় মাস থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরাই এই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। যাদের একটা বড় অংশ ‘রেসপিরেটরি সেনসিটায়াল ভাইরাস’ (আরএসভি)এ আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বড়রা সহজেই এই ভাইরাসকে মোকাবিলা করতে পারলেও, শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে ‘আরএসভি’ বিপজ্জনক। এ ছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা, সোয়ানই ফ্লু-তেও আক্রান্ত হচ্ছে অনেক শিশু।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, টানা কয়েক দিন ধরে জ্বর থাকার পাশাপাশি কাশি, অল্প শ্বাসকষ্টও দেখা দিচ্ছে অনেকেরই। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু রোগ বিভাগের শিক্ষক চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বলেন, “অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। জ্বর-সহ যে কোনও উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে দ্রুত যেতে হবে। এখন আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। এ ছাড়াও ভাইরাসও রূপ বদলাচ্ছে। দুইয়ের কারণেই শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এতে মৃত্যু নেই বললেই চলে।” শিশু রোগ চিকিৎসক অসীম মল্লিকের কথায়, “শেষ কয়েক দিনে জ্বরে আক্রান্ত অনেক শিশু চিকিৎসার জন্য আসছে। কেউই কোভিড আক্রান্ত নয়। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরি।” শিশু রোগ চিকিৎসক অরুন সিংহের কথায়, “শিশুরা জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানেই তাদের কোভিড হয়েছে তা কিন্তু নয়। করোনা পরিস্থিতিতে অন্যান্য রোগগুলির প্রতি ততটা নজর পরেনি। তাই জ্বরের অন্যান্য কারণগুলিকেও উপেক্ষা করলে হবে না। লকডাউনে ঘর বন্দি থেকে শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে।” শিশু রোগ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণ ছাড়াও জ্বরের অন্যান্য কারণগুলিও খুঁজে দেখতে হবে। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, স্ক্রাব টাইফাস, লেপটোস্পাইরোসিস-সহ ভাইরাস জনিত রোগের কারণেও জ্বর হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy