গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাংলার নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে কোনও পরীক্ষানিরীক্ষা নয়, পরীক্ষিত সৈনিকদের হাতেই দায়িত্ব দিতে চায় বিজেপি। ২০০-র বেশি আসন পেতে হবে বলে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য বিজেপি-র জন্য টার্গেট বেঁধে দিয়েছেন অমিত শাহ। সেই লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ইতিমধ্যেই ভোটযুদ্ধে সফল নেতাদের বাংলায় জড়ো করতে চান অমিত। দায়িত্ব দিতে চান 'ফুল মার্কস' পাওয়াদের হাতেই। ইতিমধ্যেই সে উদ্যোগ শুরুও হয়ে গিয়েছে। রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে এমন অনেক কেন্দ্রীয় নেতার নাম শোনা যাচ্ছে, যাঁরা বিধানসভা ভোটের আগে কলকাতায় ঘাঁটি গাড়বেন।
গত শুক্রবার বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যকে বঙ্গ বিজেপি-র সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা তাঁর নির্দেশে জানিয়েছেন, বাংলার পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের সঙ্গে সহ-পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করবেন মালব্য এবং অরবিন্দ মেনন। মালব্য এমনিতে কেন্দ্রীয় ভাবে বিজেপি-র আইটি সেল পরিচালনা করেন। তার পাশাপাশিই এ বার তাঁকে বাংলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে। করোনা আবহে নির্বাচনে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বড় ভূমিকা নেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই মালব্যের বাংলার দায়িত্ব পাওয়া ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ।
বস্তুত, দায়িত্ব পাওয়ার ৭২ ঘণ্টা যেতে না যেতেই রাজ্যে হাজির হয়েছেন মালব্য। মঙ্গলবার সকালেই তিনি রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে শুধু মালব্যের সঙ্গেই ছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ-সহ আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। ছিলেন ত্রিপুরা জয়ে বিজেপি-র ‘সফল সৈনিক’ হিসেবে পরিচিত সুনীল দেওধরও।
সদ্য অন্ধ্রপ্রদেশের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া সুনীল বাংলায় নতুন নন। ত্রিপুরার পর্যবেক্ষক থাকার সময় গত লোকসভা নির্বাচনে কলকাতায় থেকে কাজ করেছেন। মরাঠি সুনীল বাংলাভাষায় কথা বলতে পারেন বাঙালির মতোই। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে বারাণসীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সৈনিক ছিলেন সুনীল। এর পরে সাফল্য দেখিয়েছেন ত্রিপুরাতেও। এ বার তাঁর উপরেও বঙ্গ বিজেপি-তে বড় দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর।
তবে সুনীল একা নন। রাজ্য বিজেপি-র এক প্রথমসারির নেতা জানাচ্ছেন, বাংলায় কমপক্ষে ৫০ জন কেন্দ্রীয় স্তরের নেতা আসবেন ভোট পরিচালনা করতে। তাঁরা সকলেই বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছেন। ওই তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের মধ্যে বড় মুখ সন্তোষ। জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সম্পাদক (সংগঠন) সন্তোষ নিজেও পশ্চিমবঙ্গের জন্য বাড়তি সময় দেবেন।
আরও পড়ুন: লাদাখ সঙ্কটের মধ্যেই ব্রিকস বৈঠকে আজ দ্বিতীয় সাক্ষাৎ মোদী-চিনফিংয়ের
আরও পড়ুন: ফুরফুরার পিরজাদা ত্বহার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন অধীর-মান্নান
বিজেপি সূত্রে খবর, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বিনোদ তাওড়ে আসবেন বাংলায়। থাকবেন দুষ্মন্ত গৌতম। বর্তমানে ছত্তিশগড়ের পর্যবেক্ষক দুষ্মন্ত মধ্যপ্রদেশে বিজেপি-র সাফল্যে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। রাজ্যে আনা হবে সদ্য ত্রিপুরার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব-পাওয়া বিনোদ সোনকরকে। উত্তরপ্রদেশে ভোট সামলেছেন বিনোদ। প্রসঙ্গত, যোগী আদিত্যনাথের সরকার গঠনে বড় ভূমিকা ছিল বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ অরুণ সিংহেরও। এক সময়ে ওড়িশা বিজেপি-র পর্যবেক্ষেকর দায়িত্বপ্রাপ্ত অরুণ আপাতত বিজেপি-র অন্যতম সর্বভারতীয় সম্পাদক। ২০০৩, ২০০৮ এবং ২০১৩ সালের বিধানসভা ভোট এবং ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ছত্তিসগঢ়ে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। সামলেছেন ঝাড়খণ্ডে গত বিধানসভা নির্বাচনও। যদিও সেখানে বিজেপি হেরেছিল। গত লোকসভা নির্বাচনে মোদীর প্রচার কমিটিরও সদস্য ছিলেন অরুণ।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যকে মূলত পাঁচটি ভাগে ভাগ করে বিধানসভা নির্বাচন পরিচালনা করা হবে। এই পাঁচ ভাগের দায়িত্ব দেওয়া হবে পাঁচ কেন্দ্রীয় নেতার উপর। এছাড়াও যে সব জেলায় বেশি আসনে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানকার দায়িত্বও কোনও কেন্দ্রীয় নেতার হাতেই থাকবে। তাঁরাই পরিকল্পনা করবেন, কোথায় কোন পথে হবে প্রস্তুতি। কোথায় কোন ইস্যুতে জোর দেওয়া হবে। অতীতের সাফল্য থেকে নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এলাকাভিত্তিক জয়ের কৌশল তৈরি করতে চাইছে বিজেপি।
বঙ্গ বিজেপি-র রাশ কি তবে পুরোপুরিই নিয়ে নিলেন মোদী-শাহ? এই প্রশ্নের উত্তরে আনন্দবাজার ডিজিটালকে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘এতে ভরসা কমবেশির ব্যাপার নেই। নীলবাড়ি আমরা দখল করছিই। সেটা আরও নিশ্চিত করার জন্যই কেন্দ্রীয় নেতারা আসছেন। তা ছাড়া এটা নতুন কিছু নয়। সব রাজ্যেই এই ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy