গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ
সাংগঠনিক ৫ জোন থেকে ৫টি রথযাত্রা বের করতে চায় রাজ্য বিজেপি। এর মধ্যে নবদ্বীপে একটির সূচনা হয়েছে গত শনিবার। এসেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। আরও দু’টির সূচনা করতে মঙ্গলবার ফের আসার কথা নড্ডার। ঝাড়গ্রাম থেকে মেদিনীপুর জোন ও তারাপীঠ থেকে রাঢ়বঙ্গ জোনের ‘পরিবর্তন যাত্রা’র সূচনা করবেন তিনি। মাঝে একটা দিন বাদ দিয়ে বৃহস্পতিবার আসার কথা অমিত শাহের। প্রথম কর্মসূচি কোচবিহার থেকে উত্তরবঙ্গের রথযাত্রার সূচনা। এর পরে ঠাকুরনগর ও কলকাতায় দু’টি কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর।
কলকাতা জোনের রথযাত্রা কবে শুরু হবে তা চূড়ান্ত না হলেও রাজ্য বিজেপি চাইছে সেটাও ফেব্রুয়ারির প্রথামার্ধেই হোক। পাঁচটি রথই ঘুরবে জোনের ভিতরের প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় মাসখানেক ধরে। আর সেই যাত্রায় অংশ নিয়ে ‘ভিআইপি’ সফরও চলতে থাকবে। কারণ, যেখানে যেখানে রথ যাবে সেখানেই হবে জনসভা। আর তাতে যোগ দিতে কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রীদের হাজির করাতে চায় গেরুয়া শিবির। ইতিমধ্যেই চলতি সপ্তাহের তালিকা তৈরি হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী, সোমবার রাজ্যে রয়েছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। তবে সেটা রথযাত্রার জন্য নয়। বণিকসভার সঙ্গে একটি আলোচনা সভায় যোগ দেন তিনি। মঙ্গলবার নড্ডার সফরের পর বুধবার আসার কথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহের। বৃহস্পতিবার রয়েছে অমিতের সফর। তার পরের দু’দিন শুক্র ও শনিবার বঙ্গ সফরে আসতে পারেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
নীলবাড়ি দখলের লড়াই যে শুধু রাজ্য নেতৃত্বের নয় বরং কেন্দ্রীয় বিজেপি-র তা অনেক আগে থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে তা যেন আরও বেশি বেশি করে সামনে আসছে। রবিবারই রাজ্য সফরে এসে রাজনৈতিক সমাবেশ করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার আগে গত শনিবার থেকে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত বিজেপি-র যে ‘ভিআইপি’ তালিকা, তার ক্রম ঠিক এই রকম— নড্ডা, মোদী, সম্বিত, নড্ডা, রাজনাথ, শাহ, স্মৃতি, যোগী।
এর পরেও চলতে থাকবে। রাজ্য বিজেপি-র এক নেতার কথায়, ‘‘এই সফর সূচি শেষ হতে না হতেই পরের সূচি এসে যাবে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যেমন যেমন কর্মসূচি জানাবেন তেমন তেমন তালিকা তৈরি করা হবে। আপাতত চলতি সপ্তাহেরটা জানা গিয়েছে।’’ দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘অনেক নেতার সফর হবে। মোদীজি, অমিতজি, নড্ডাজি তো আসবেনই, সেই সঙ্গে অন্য রাজ্যের নেতা, মন্ত্রীরাও আসবেন।’’ বিজেপি-র যা পরিকল্পনা, গোটা ফেব্রুয়ারি মাস এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে রথযাত্রা। তাতে অংশ নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি জাতীয় স্তরের নেতারাও যোগ দেবেন। আলাদা আলাদা দিনে শুরু হলেও সব ক’টি ‘পরিবর্তন যাত্রা’ শেষ হবে এক দিনে। সে দিন কলকাতায় ব্রিগেডে মোদীর সমাবেশ করারও লক্ষ্য রয়েছে বিজেপি-র।
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই প্রথম বার বাংলায় আসতে চলেছেন যোগী। তবে তাঁর সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য অনেক দিন থেকেই এ রাজ্যে ঘাঁটি গেড়েছেন। অমিতের নির্দেশ মতো প্রতি সপ্তাহান্তে শনি ও রবিবার রাজ্যে আসা যাওয়া করছেন আরও ৬। সেই নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ৫ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী— অর্জুন মুন্ডা, সঞ্জীবকুমার বালিয়ান, গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত, মুকেশ মাণ্ডবিয়া, প্রসাদ সিংহ পটেল। রয়েছেন মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র। এর পরেও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের একের পর এক সফর চলছে। বাংলার দুই মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরীরাও প্রতি দিন কোথাও না কোথাও সরকারি ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে চলেছেন। শনিবার নড্ডার মালদহ ও নবদ্বীপে কর্মসূচির দিনেই কলকাতায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন।
ভিন্ রাজ্য ও কেন্দ্রের এত নেতার বাংলায় আসতে থাকা নিয়ে নতুন করে ‘বহিরাগত’ আক্রমণ শানাল তৃণমূল। এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘বিজেপি-র রাজ্য নেতাদের উপরে যে কোনও ভরসাই নেই তা বোঝা যাচ্ছে। বাংলার নেতারা সবাই ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে গিয়েছে। তবে এত বাইরের লোক এনে বাংলার মন জেতা যাবে না।’’
এর জবাবে দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘মনে রাখতে হবে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের দল নয়। সর্বভারতীয় দল। সেই দলের নেতারা গোটা দেশে ছড়িয়ে থাকাই তো স্বাভাবিক। আর তাঁরা তো আসবেনই।’’ নাম করা নেতাদের এই আগমনে রাজ্য বিজেপি নেতারা যেমন উল্লসিত তেমন চাপেও। এঁদের সফর ও কর্মসূচির ব্যবস্থা করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy