ক্যানিংয়ের ডাবুতে এ ভাবেই কাটা পড়ছে ম্যানগ্রোভ। নিজস্ব চিত্র
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অফিস রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুমিরমারিতে। অফিসের চার দিকে ম্যানগ্রোভ। আমপান আশপাশের এলাকায় তাণ্ডব চালালেও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অফিসটিতে থাবা বসাতে পারেনি।
ম্যানগ্রোভ এবং বাস্তুতন্ত্র বিশেষজ্ঞ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পুনর্বসু চৌধুরী বলছেন, “ম্যানগ্রোভ প্রকৃতির ঢাল হিসেবে কাজ করে। শুধু কুমিরমারিই নয়, সুন্দরবন এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘূর্ণিঝড়ে ম্যানগ্রোভ বেষ্টিত এলাকায় তার প্রমাণ মিলেছে।” তাঁর মতে, সুন্দরবনের বনাঞ্চলের তুলনায় জনপদ এলাকায় ম্যানগ্রোভের বিস্তার জরুরি। কারণ, ঝড়ের সময় উপকূলবর্তী জনপদের বিপদ সবচেয়ে বেশি।
লোকালয় লাগোয়া নদীর চর থেকে ম্যানগ্রোভ কাটা হলেও সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানে ম্যানগ্রোভ সংরক্ষিত রয়েছে বলে দাবি বন দফতরের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিএফও মিলনকান্তি মণ্ডল বলেন, “যা ম্যানগ্রোভ কাটা হচ্ছে সেটা লোকালয়ের দিকে। যে হেতু গাছ কাটা হচ্ছে, আমরা সেই সমস্ত এলাকা চিহ্নিত করে ইতিমধ্যেই পুলিশ সুপার ও জেলাশাসককে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।”
এলাকার বাসিন্দা এবং বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বিপদ কিন্তু এক দিনে আসেনি। মানুষ ধীরে ধীরে ধ্বংস করেছে ম্যানগ্রোভকে। তার ফলে সুন্দরবন থেকে প্রায় লুপ্ত হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু প্রজাতির ম্যানগ্রোভ। পুনর্বসু জানাচ্ছেন, এক সময় বাদাবনের জনপদগুলিতে গড়িয়া (ক্যান্ডেলিয়া ক্যান্ডল), কৃপাল (লুমনিড জ়েরা) লতাসুন্দরী গাছ প্রচুর ছিল। এখন আর তা চোখে পড়ে না। প্রকৃতি থেকে কোনও গাছ হারিয়ে যাওয়া মানে বুঝতে হবে, হয় তাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। তা না হলে এমন পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে সেই গাছগুলির অবলুপ্তি ঘটেছে।
তা হলে উপায় কী?
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, নদীর যে সব এলাকায় নতুন করে চর জেগে উঠছে, সেখানে ম্যানগ্রোভ গাছ লাগাতে হবে। তবে সেই প্রকল্পে বেশ কিছু নিয়ম মানার কথা বলছেন পুনর্বসু। যে সব এলাকায় রোজ জোয়ার-ভাটা হয়, সেখানে বাইন, ক্যাওড়া, গেঁওয়া গাছ লাগানো জরুরি। কারণ, এই গাছগুলি ভূমিক্ষয় রোধে সক্ষম। যে সব এলাকায় মাসে দু’বার জোয়ার-ভাটা হয়, অর্থাৎ, কটালের জল ওঠে, সেখানে গর্জন জাতীয় গাছ বেশি সংখ্যায় লাগাতে হবে। কারণ, এই গাছগুলিই মূলত ঝড় রুখে দেয়। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে এই গাছগুলিই জনপদগুলিকে আরও বড় বিপদ থেকে রক্ষা করে।
রাজ্য জীববৈচিত্র পর্ষদের গবেষণা আধিকারিক অনির্বাণ রায় বলেন, “জঙ্গলে প্রাকৃতিক নিয়মেই ম্যানগ্রোভের জন্ম-মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু লোকালয়ের দিকে জীবিকার স্বার্থে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস হচ্ছে বহু জায়গায়। তাই বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ম্যানগ্রোভ পুনুরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে।”
নতুন করে নদীর চরে যে ম্যানগ্রোভ লাগানো হচ্ছে, তাতে কিছুটা হলেও ভারসাম্য ফিরবে বলে মত বন দফতরের। মাছের ভেড়ির জন্য ম্যানগ্রোভ ধ্বংস নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু উন্নয়নের জন্যেও সুন্দরবনে কাটা পড়ছে বহু ম্যানগ্রোভ গাছ। এবং সেটা সরকারি উদ্যোগে। ঝড়খালি জীববৈচিত্র পার্কে এক সময় সব প্রজাতির ম্যানগ্রোভ ছিল। হবু গবেষকদের অন্যতম দর্শনীয় স্থান ছিল এটি। কিন্তু বর্তমানে অনেকগুলি প্রজাতির গাছের দেখা নেই। রাস্তা এবং জেটি তৈরির জন্যও গত কয়েক মাসে বেশ কিছু ম্যানগ্রোভ কাটা হয়েছে।
এর দায় কে নেবে?
সে প্রশ্নের জবাব এখনও মিলছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy