Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Tea shop

Unemployment: পরীক্ষা দিয়েও জোটেনি চাকরি, পেট চালাতে চায়ের দোকান খুলেছেন এমএ পাশ হেমন্ত

ঝুলিতে রয়েছে স্নাতকোত্তর বাংলায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার শংসাপত্র। রয়েছে সরকারি আইটিআই কলেজের শংসাপত্রও।

চা বানাচ্ছেন হেমন্ত।

চা বানাচ্ছেন হেমন্ত। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২২ ০৭:২৫
Share: Save:

ঝুলিতে রয়েছে স্নাতকোত্তর বাংলায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার শংসাপত্র। রয়েছে সরকারি আইটিআই কলেজের শংসাপত্রও। কিন্তু পরীক্ষা দিয়েও চাকরি জোটেনি। গৃহশিক্ষকতা সম্বল হলেও, করোনা পরিস্থিতিতে তা-ও গিয়েছে কমে। পেট চালাতে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের পাতুন গ্রামের ২৮ বছরের যুবক হেমন্ত মল্লিক মাস ছয়েক আগে, চায়ের দোকান খুলেছেন। হেমন্তের আক্ষেপ, ‘‘যেখানে এ রাজ্যে পিএইচডি করা ছাত্রছাত্রীরা চাকরি পাচ্ছেন না, সেখানে আমার মতো এমএ পাসদের সম্ভাবনা কতটুকু? তাই চায়ের দোকান খুলেছি।’’

সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’ নামে চায়ের দোকান খোলেন রবীন্দ্রভারতী থেকে দূরশিক্ষায় ইংরেজিতে স্নাতকোত্তরে ৬১ শতাংশ নম্বর পাওয়া টুকটুকি দাস। তিনি বহু পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাননি।

মন্তেশ্বর-পুটশুড়ি রাস্তায়, পাতুন পাঁচ মাথা মোড়ে হেমন্তের ছোট গুমটিতে এলাকার অনেকেই চা খেতে আসেন। ভোর ৫টা থেকে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত তিনি দোকান সামলাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে তাঁকে সহযোগিতা করেন দিনমজুর বাবা শীতল মল্লিক। পাতুন গ্রামে মাটির দু’টি ঘরে হেমন্তদের বাস। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর বাবা-মা, স্ত্রী ও দেড় বছরের মেয়ে আর ভাই ও ভ্রাতৃবধূ। হেমন্ত জানান, চন্দ্রপুর কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক করে তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরশিক্ষায় স্নাতকোত্তর করেন। মাঝে বড়শুলের সতীশচন্দ্র কলেজ থেকে ‘টার্নার’ হিসাবে আইটিআই পাশ করেন। কম্পিউটারের ‘বেসিক কোর্স’-ও করেছেন।

হেমন্ত বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে গৃহ শিক্ষকতা করি। বছর তিনেক আগে বিয়ে হওয়ার পরে, সংসারের খরচ বাড়ে। করোনা পরিস্থিতিতে একের পরে এক টিউশন কমছিল। সেলামি দিয়ে বড় দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করার মতো পুঁজিও নেই। বাধ্য হয়ে চায়ের দোকান খুলে সংসার চালাতে হচ্ছে।’’ তাঁর বাবার আক্ষেপ, ‘‘জমিজমা নেই। দিনমজুরি করে বহু কষ্টে ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাতে দেখে খুবই খারাপ লাগে। একটা চুক্তিভিত্তিক কাজ হলেও এ দিন দেখতে হত না!’’ বিডিও (মন্তেশ্বর) গোবিন্দ দাসের আশ্বাস, ‘‘ওই যুবক চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি সংক্রান্ত বিষয় কিংবা ব্যবসায় ঋণের জন্য সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করলে সাধ্য মতো চেষ্টা করব।’’

হেমন্তর চায়ের দোকানের খবর জেনে বিজেপির কাটোয়া সংগঠনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের টিপ্পনী, ‘‘এ রাজ্যে যত দিন তৃণমূল সরকার থাকবে, তত দিন যুব সমাজকে বেকারত্বের দুর্ভোগ বইতে হবে। কারণ, এটা নেই-রাজ্য।’’ তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডুর পাল্টা জবাব, ‘‘বিজেপির মুখে কর্মসংস্থানের কথা মানায় না। ওরা কেন্দ্রে থাকাকালীন দেশে বেকারত্ব তুঙ্গে উঠেছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এ রাজ্যে বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস) চলছে। তাতে নতুন কর্ম সংস্থানের রাস্তা খুলবে।’’ অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘ছেলেটির লড়াইকে শ্রদ্ধা জানাই। ভেঙে না পড়ে, হাল না ছেড়ে উনি যে ভাবে লড়াই করছেন, তাতে নিশ্চয়ই সফল হবেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। নতুন বিনিয়োগ টানতে হবে। সরকার নজর দিলে, অবশ্যই হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Tea shop man Unemployment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy