Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
tea stall

Tea Stall: চাকরি ছাড়ার পাঁচ মাস পরও চালু হয়নি পেনশন, সংসার চালাতে ভরসা ‘শিল্পশ্রী’ই

জনশিক্ষা প্রসার দফতরের গ্রুপ-সি স্তরের কর্মী ছিলেন শিবশঙ্কর। ওই দফতরের অধীনে থাকা বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের একটি স্কুলে হাতের কাজ শেখাতেন।

নিজের দোকানে শিবশঙ্কর মণ্ডল।

নিজের দোকানে শিবশঙ্কর মণ্ডল। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২২ ০৮:০৪
Share: Save:

ছিলেন সরকারি দফতরের কর্মী। অবসর নিয়েছেন গত ডিসেম্বরে। এখনও পেনশন পাননি। তাই ‘মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায়’ চায়ের দোকান দিয়েছেন বৃদ্ধ। বাঁকুড়া শহরের জুনবেদিয়া বাইপাসের ধারে, সে দোকানের নাম রেখেছেন ‘শিল্পশ্রী’। বিরোধীদের দাবি, কটাক্ষ করেই এমন নামকরণ। যদিও দোকানের মালিক শিবশঙ্কর মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘টাকার অভাবে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চপ-শিল্পের কথা বলেছিলেন। চপ ভাজতে পারি না। তাই বিকল্প হিসাবে চায়ের দোকান খুলেছি।’’

জনশিক্ষা প্রসার দফতরের গ্রুপ-সি স্তরের কর্মী ছিলেন শিবশঙ্কর। বাঁকুড়ায় ওই দফতরের অধীনে থাকা বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের একটি স্কুলে হাতের কাজ শেখাতেন। তাঁর স্ত্রী সুস্মিতাও জনশিক্ষা প্রসার দফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ছিলেন। কুড়ি বছরের বেশি কাজ করার পরে, ২০১৭ সালে অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। শিবশঙ্করের দাবি, নিয়মমাফিক স্ত্রীরও ‘গ্র্যাচুইটি’, পেনশন-সহ বিভিন্ন সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু পাঁচ বছরেও সে সব পাওনা মেলেনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমার পেনশন চালু হয়নি এখনও। প্রশাসনিক দফতরে আমার এবং স্ত্রীর প্রাপ্য চেয়ে বারবার ছুটে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি!’’

বৃদ্ধ জানান, সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু বুঝতে পারেন, আয়ের উৎস না থাকলে, শীঘ্রই সংসার অচল হবে। তিনি জানান, হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত স্ত্রীর ওষুধের খরচ মাসে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। ছেলে-মেয়ে স্কুলে পড়ে। তাদের পড়াশোনা ও টিউশন বাবদ খরচ রয়েছে। দিদি সুষমাও তাঁর উপরে নির্ভরশীল। শিবশঙ্করবাবুর কথায়, “হিসাব করে দেখেছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা সংসার চালাতে লাগে। কবে পেনশন পাব জানি না! তাই চায়ের দোকান খুলেছি।’’ তিনি জানান, দোকানে দৈনিক শ’তিনেক টাকা রোজগার হয়। তার সঙ্গে সঞ্চিত অর্থ খরচ করে কোনও ভাবে সংসার চলছে।

বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই দোকান। বাইরে ফ্লেক্সে লেখা, ‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী অনুপ্রেরণায় চা শিল্প মাথায় রেখে উদ্যোগে শিল্পশ্রী’। ছোট-বড় কাপে তিন থেকে পাঁচ টাকা দামে চা মিলছে সেখানে। সঙ্গে রয়েছে নানা রকম বিস্কুট। চা খেতে আসা অমিত পাল, নির্মল চট্টোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘শিবশঙ্করবাবু যত্ন করে চা বানান। তাই মাঝেমধ্যেই আসি।’’

বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানার কটাক্ষ, ‘‘যুবক-যুবতীরা চাকরি পাচ্ছেন না, প্রবীণেরা অবসরকালীন প্রাপ্য পাচ্ছেন না— এটাই এখন এ রাজ্যের পরিস্থিতি। তাই এমএ পাশ তরুণী থেকে অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধকে চায়ের দোকান দিতে হচ্ছে।’’ বাঁকুড়ার পুরপ্রধান তৃণমূলের অলকা সেন মজুমদারের পাল্টা দাবি, ‘‘অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী নিশ্চয় তাঁর প্রাপ্র্য পাবেন। প্রক্রিয়ায় হয়তো একটু সময় লাগছে। তার ফাঁকে তিনি বসে না থেকে বিকল্প আয়ের সংস্থান করেছেন, তা সাধুবাদের যোগ্য।’’

বাঁকুড়া জেলার জনশিক্ষা প্রসার দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক পার্থসারথি কুণ্ডু বলেন, “শিবশঙ্করবাবুর পেনশনের ফাইল সংশ্লিষ্ট স্কুল থেকে এখনও আমাদের কাছে আসেনি। তা শীঘ্র পাঠাতে বলেছি। সেটি পেলেই দ্রুত নির্দিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।” তাঁর সংযোজন, ‘‘ওঁর স্ত্রীর পেনশন, গ্র্যাচুইটির বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। যাতে তাড়াতাড়ি সব প্রাপ্য পেয়ে যান, চেষ্টা চলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

tea stall Pension
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy