Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
শৃঙ্খলা মিছিলেও

শহর সচল রেখে ‘হিরো’ পুলিশই

কাজের দিনে শহরের প্রাণকেন্দ্রে শাসক দলের সভা। মিছিল-ভিড়ে শহর হাসফাঁস করবে, এমনটাই আশঙ্কা ছিল। কিন্তু শেষমেশ সব আশঙ্কা উড়িয়ে ২১ জুলাই সমাবেশের দিনেও মোটামুটি সচল থাকল মহানগর। বৃহস্পতিবারের শহরকে পুরোপুরি স্তব্ধ না হতে দিয়ে ‘ম্যান দ্য ম্যাচ’ হল কলকাতা পুলিশ।

চলেছে মিছিল। পাশাপাশি বহমান ট্রাফিকও। বৃহস্পতিবার, শিয়ালদহে। — শৌভিক দে

চলেছে মিছিল। পাশাপাশি বহমান ট্রাফিকও। বৃহস্পতিবার, শিয়ালদহে। — শৌভিক দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৬ ০০:৪৩
Share: Save:

কাজের দিনে শহরের প্রাণকেন্দ্রে শাসক দলের সভা। মিছিল-ভিড়ে শহর হাসফাঁস করবে, এমনটাই আশঙ্কা ছিল। কিন্তু শেষমেশ সব আশঙ্কা উড়িয়ে ২১ জুলাই সমাবেশের দিনেও মোটামুটি সচল থাকল মহানগর। বৃহস্পতিবারের শহরকে পুরোপুরি স্তব্ধ না হতে দিয়ে ‘ম্যান দ্য ম্যাচ’ হল কলকাতা পুলিশ।

ভিড় সামলানোর দক্ষতা কলকাতা পুলিশের নতুন নয়। উৎসবের মরসুমে লালবাজার মহানগরকে শুধু সচলই রাখে না, আইনশৃঙ্খলার রাশও রাখে নিজের হাতে। এ বার সভা-সমাবেশেও সেই দক্ষতার প্রমাণ দিল কলকাতা পুলিশ। লালবাজারের অন্দরমহল বলছে, পুজোর মরসুমে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেমন এই দক্ষতা হাসিল করেছে তারা, তেমনই সভা-সমাবেশে শহর সচল রাখতেও অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছে পুলিশ। কী রকম?

গত বছর ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে শহরের যান চলাচলের দফারফা হয়ে গিয়েছিল। স্তব্ধ হয়ে যাওয়া মহানগরে পথেঘাটে নাকাল হতে হয় মানুষকে। এ বারও তেমনই আশঙ্কা করেছিল শাসক দল। তাই আগেভাগে মানুষের কাছে আগাম ক্ষমাও চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছরের অভিজ্ঞতা এবং মুখ্যমন্ত্রীর আগাম ক্ষমা চাওয়ার পরে এ বার পরিস্থিতি সামাল দেওয়াটা চ্যালেঞ্জ ছিল লালবাজারের কাছে। তাই সমাবেশের আগে ট্রাফিক বন্দোবস্ত করতে গিয়ে আগের বছরের ‘ময়না-তদন্ত’ করা হয়। গত বছর যে ভাবে মিছিল ও গাড়ির ভিড় জট পাকিয়ে গিয়েছিল, তা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল এ বার। ডিসি (ট্রাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমারও বলছেন, ‘‘আগের বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিখে আমরা নতুন কিছু পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। সেটাই কাজে এসেছে। তার উপরে বৃষ্টি না হওয়ায় যান চলাচলে অসুবিধাও হয়নি।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সমাবেশে কয়েক লক্ষ লোকের জমায়েত হয়েছিল। সকাল ন’টা থেকেই ক্রমাগত ভিড় বাড়ছিল ধর্মতলার শহিদ মঞ্চের চিলতে পরিসরে। এ ছাড়া, বাইরে থেকে প্রায় ১০ হাজার গাড়ি ঢুকেছিল শহরে। তা সত্ত্বেও শহরের যান চলাচল পুরোপুরি থমকে যেতে দেওয়া হয়নি। মিছিল এবং গাড়ি ক্রমান্বয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে মিছিল থমকে থাকেনি, আবার গাড়িগুলিকেও দীর্ঘক্ষণ একই জায়গায় দাঁড়াতে হয়নি। যেমন বেলা সাড়ে ১১টার রেড রোডের জে কে আইল্যান্ড। এক দিকে ভিআইপি-রা আসছেন, অন্য দিক থেকে সমাবেশমুখী গাড়ির মিছিল। তার মধ্যেই ছাড়া হচ্ছিল যাত্রিবাহী বাস।

সমাবেশে ভিড়ের চাপ সামলাতে এক সময়েও মিছিলও ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। সকাল থেকেই কলকাতার বিভিন্ন এলাকা থেকে এবং জেলার মানুষের ছোট-বড় মিছিল মৌলালি মোড় থেকে এসএন ব্যানার্জি রোড ধরে শহিদ মঞ্চের দিকে আসছিল। দুপুর পৌনে একটা নাগাদ পুরসভার সামনে থেকে মিছিলকারীদের আর ধর্মতলায় যেতে দেয়নি পুলিশ। ফলে মিছিলের অনেকেই ফিরতি-পথে শিয়ালদহের দিকে রওনা দেন। উল্টো দিকে তখনও ধর্মতলার দিকে আসছে একের পর এক মিছিল।

পুলিশের একাংশ অবশ্য বলছে, এ দিন মিছিলকারীরাও বেশির ভাগ সময়ে পুলিশকে সাহায্য করেছেন। অন্য সময়ে সমাবেশে আসা মানুষ পুলিশের নির্দেশ উপেক্ষা করেন। এ দিন কিন্তু বেশির ভাগ জায়গায় উল্টো ছবিটাই নজরে এসেছে। এ দিন রে়ড রোডে বহু জায়গাতেই পুলিশের সঙ্গে দাঁড়িয়ে মিছিল নিয়ন্ত্রণ করছিলেন তৃণমূলের নেতারা। বিদ্যাসাগর সেতুতে যেমন ছিলেন মন্ত্রী অরূপ রায়। বেগড়বাঁই করলে ধমকও দিয়েছে পুলিশ। ভরদুপুরেই দেখা গেল, পার্ক স্ট্রিট মোড়ে কয়েকটি বেপরোয়া মোটরবাইককেও রীতিমতো বকাবকি করছেন এক সার্জেন্ট। মোটরবাইকে দলীয় পতাকা থাকলেও পুলিশকে পাল্টা চোখ রাঙালেন না হেলমেটহীন আরোহীরা। পুলিশের একাংশ বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী দলে শৃঙ্খলার বার্তা দিয়েছেন, রেয়াত করছেন না কাউন্সিলরদেরও। এ দিন কর্মী-সমর্থকদের মেজাজ যে বেশির ভাগ জায়গায় উগ্র হয়নি, তার পিছনে দলনেত্রীর বার্তাই কাজ করেছে।

তবে পুলিশের চেষ্টা সত্ত্বেও কিছু কিছু জায়গায় যানজট বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী হয়েছে। টালা থেকে ক্যামাক স্ট্রিটে পৌঁছতে এক প্রৌঢ়ের প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লেগেছে। পুলিশ বলছে, সকাল ৯টার পর থেকে ট্রেনে চেপে জেলা ও শহরতলি থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশনে জড়ো হচ্ছিলেন। সেই মিছিলগুলি সমাবেশের দিকে রওনা দিতেই স্ট্র্যান্ড রোড, মহাত্মা গাঁধী রোড, এ জে সি বসু রোড, এপিসি রো়ডে যান চলাচলে কিছু সমস্যা হয়েছে। ‘‘তার মধ্যেও মাঝেমধ্যে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করেছি আমরা,’’ বলছেন এক ট্রাফিক ইনস্পেক্টর। তিনি জানিয়েছেন, মৌলালি থেকে বেকবাগানমুখী কিছু গাড়িকে সিআইটি রো়ড দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ডিসি (ট্রাফিক) জানান, এ বছর মিছিলের পার্কিং চত্বরকেও আগের বারের তুলনায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ বারই সমাবেশের জন্য পার্ক সার্কাস ময়দান, আশুতোষ মুখার্জি রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। যার জেরে বেশি গাড়ি এক জায়গায় জড়ো হয়নি। ফলে যানজটে স্তব্ধ হয়নি শহরও। পুলিশ সূত্রের খবর, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে মিছিলের গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। তার ফলে যানবাহন গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ ও বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট দিয়ে ঘোরানো হয়েছে। গাড়ির পার্কিংয়ে জওহরলাল নেহরু রো়ড যাতে থমকে না যায়, তার জন্য পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলের উপরেও গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করেছিল লালবাজার। পুলিশের কেউ কেউ অবশ্য এ-ও বলছেন, এ দিন রাস্তায় যাত্রিবাহী গাড়ি অন্য দিনের তুলনায় কম ছিল। যানজটের আশঙ্কায় অনেকেই মেট্রোয় যাতায়াত করেছেন। ফলে রাস্তায় ভিড়ও তুলনায় কম ছিল। সে কারণেও পরিস্থিতি সামলানো কিছুটা হলেও সহজ হয়েছে। সভা শেষের পরে সেই সব গাড়ি দ্রুত শহর ছেড়ে বেরিয়েও যেতে পেরেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Rally Police Mamata Banerjee Bus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy