গত ১৩ ডিসেম্বর জীবনতলার কালিকাতলা বাজারে অ্যাসিড-হানায় গুরুতর আহত হন আলু বিক্রেতা খৈরুল। প্রতীকী ছবি।
অ্যাসিড-হানার ১৫ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে এক লক্ষ টাকা সাহায্য আসার কথা ছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অন্যান্য ক্ষতিপূরণ তো আছেই। পাঁচ মাস হতে চলল, অ্যাসিড-হানায় দু’চোখ খুইয়ে চূড়ান্ত অসহায় অবস্থায় পড়ে আছেন একদা সমর্থ যুবক। কিন্তু অর্থসাহায্যের দেখা নেই, এমনকি পুলিশ তাঁর বয়ানটুকুও নিতে আসেনি বলে অভিযোগ।
সারা দেহ, মাথার চুল বীভৎস ভাবে পুড়ে গিয়েছে ক্যানিংয়ের জীবনতলার বাসিন্দা খৈরুল শেখের। খাওয়াদাওয়া, হাঁটাচলাতেও সমস্যা। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী আর দু’টি ছোট মেয়ে। আক্রান্ত হওয়ার পরে অধিকারের টাকা হাতে আসা দূরে থাক, ৩১ বছরের খৈরুলের স্ত্রী সাবিনা সংসার টানতেই হিমশিম খাচ্ছেন।
জাতীয় অপরাধ নথির সাম্প্রতিক খতিয়ান অনুযায়ী, অ্যাসিড-হানার ঘটনা সব থেকে বেশি পশ্চিমবঙ্গেই। সাধারণ ভাবে অ্যাসিডের শিকার হন মেয়েরাই। তবে পুরুষ বা শিশুদের উপরেও অ্যাসিড-হামলার ঘটনা বিরল নয়। কিন্তু অ্যাসিড-আক্রান্তদের প্রাপ্য অধিকার নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের নিচু তলায় এখনও সচেতনতার চরম অভাব বলে অভিযোগ উঠেছে। যেটা খৈরুলের ঘটনায় খুব স্পষ্ট।
গত ১৩ ডিসেম্বর জীবনতলার কালিকাতলা বাজারে অ্যাসিড-হানায় গুরুতর আহত হন আলু বিক্রেতা খৈরুল। খবর পেয়ে বাড়ির লোকেরাই তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যান। ৬ এপ্রিল বাড়ি ফেরেন খৈরুল। এখনও নানা ধরনের চিকিৎসা বাকি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে শুক্রবার তাঁকে ফের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ইতিমধ্যে জীবনতলা থানায় কয়েক বার গিয়েছেন সাবিনা। অভিযোগ লেখা হলেও খৈরুলের সঙ্গে দেখা করে পুলিশ এত দিনে তাঁর বয়ানটুকু নিতে আসারও সময় পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে জীবনতলা থানার তদন্তকারী অফিসারের দাবি, অ্যাসিড যে ছুড়েছে বলে অভিযোগ, খৈরুলের পিসেমশাই সেই সানাউল্লা শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু খৈরুল ও সাবিনা আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, সম্পত্তি নিয়ে গোলমালে এই হিংসার পিছনে অন্য আত্মীয়েরাও আছেন। যাঁরা অ্যাসিড এনে দেন, তাঁদের ব্যাপারে পুলিশ নিরুত্তাপ। খৈরুল বলেন, “এত দিনেও পুলিশকে চোখে দেখিনি!”
অ্যাসিড-হানার ঘটনায় পুলিশের বাড়তি দায়িত্বের কথা ব্যাখ্যা করছেন সারা দেশে অ্যাসিড-হানা প্রতিরোধের অন্যতম মুখ, নিজে অ্যাসিড-নিগ্রহের শিকার দিল্লির শাহিন মালিক। তাঁর বক্তব্য, পাঁচ মাসের মধ্যে পুলিশ এক বারও আক্রান্তের সঙ্গে দেখা করতে পারল না, এটা অবিশ্বাস্য। তিনি গুরুতর জখম হয়ে থাকলে ম্যাজিস্ট্রেট হাসপাতালে গিয়ে তাঁর বয়ান নেবেন, এটাই নিয়ম। তা ছাড়া অ্যাসিড-আক্রান্তের কম করে তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য, এই বিষয়ে পুলিশই তাঁদের সচেতন করবে। জেলার আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ (ডিএলএসএ)-কে বিষয়টি জানানোর দায়িত্বও পুলিশেরই। ‘‘পুলিশ-প্রশাসন সাহায্য না-করলে কোনও ক্ষতিপূরণই মেলে না। অ্যাসিড-হানার ক্ষেত্রে পুলিশের কী করণীয়, বিভিন্ন মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট তা বলে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে পুলিশের কোনও হেলদোল নেই,” বলেন শাহিন।
জীবনতলা থানার পুলিশের বক্তব্য, আক্রান্ত যুবকের হাসপাতালের নথি জোগাড় করে শীঘ্রই মামলায় চার্জশিট পেশ করা হবে। তার পরেই ক্ষতিপূরণের কথা বলা হবে ডিএলএসএ-কে। হাই কোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অ্যাসিড-আক্রান্ত ব্যক্তি অসুস্থ থাকেন বলেই পুলিশের বাড়তি তৎপরতা দরকার। পুলিশের গা-ছাড়া মনোভাবের দরুনই অ্যাসিড-হানার ঘটনায় সাজার হার খুব কম।” এসএসকেএমে সন্দীপ বসু ও কল্যাণ দাসের ইউনিটে ভর্তি ছিলেন খৈরুল। প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অরিন্দম সরকার বলেন, “এই ধরনের রোগীর জীবনভর চিকিৎসা দরকার। উনি আর একটু সুস্থ হলে লেজ়ার থেরাপি করা যেতে পারে।” বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক অনুপম গোলাশও বলছেন, “অ্যাসিড-হানার শিকার বেশির ভাগ রোগীর থেকেও খৈরুলের অবস্থা গুরুতর।”
পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া জীবনে ছিটেফোঁটা শুশ্রূষার খোঁজে দিশাহারা খৈরুলের স্ত্রী সাবিনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy