E-Paper

অনাহারে মৃত্যু হয়েছিল যে গ্রামে, সেখান থেকে এসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি

শতাব্দীর শুরুতে জনজাতি অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুরের (অধুনা ঝাড়গ্রাম) প্রত্যন্ত গ্রাম আমলাশোলে মানুষের অনাহারে মৃত্যুর খবরে হইচই পড়ে গিয়েছিল।

Gopal Chandra Mura.

গোপালচন্দ্র মুড়া।

মধুমিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩৪
Share
Save

এই বাংলারই ওই প্রান্তে অনেকের চোখে পূর্ণিমা চাঁদ ছিল ঝলসানো রুটি। সেই ‘অনাহারের গ্রাম’ থেকে উঠে এসে দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি। মেধা আর অদম্য ইচ্ছের অস্ত্রে রূপকথার ছন্দেই তা সম্ভব করেছেন গোপালচন্দ্র মুড়া।

শতাব্দীর শুরুতে জনজাতি অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুরের (অধুনা ঝাড়গ্রাম) প্রত্যন্ত গ্রাম আমলাশোলে মানুষের অনাহারে মৃত্যুর খবরে হইচই পড়ে গিয়েছিল। খিদের জ্বালায় পিঁপড়ের ডিম খেয়ে বেঁচে থাকা সেই মানুষগুলির কাছে শিক্ষা ছিল বিলাসিতা। সেখানেই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা গোপালের। যিনি এখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগে পিএইচডি করছেন। বাম আমলে ওই সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লন্ঠনের আলোয় পড়াশোনা করেছেন গোপাল। বাবা-মা নিজেদের আড়াই বিঘে জমিতে চাষ করতেন। বাবা সন্তোষের অক্ষরজ্ঞান থাকলেও মা সোমবারির নেই। সিভিক ভলান্টিয়ার দাদা জওহরলাল ভাইয়ের পড়াশোনায় উৎসাহ দিয়ে এসেছেন বরাবর।

ভুলাভেদা হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির পরে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার যাতায়াত করতে হত গোপালকে। মাধ্যমিক শেষে শিলদা রাধাচরণ ইনস্টিটিউশনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পরে প্রথম বিদ্যুতের আলোয় পড়াশোনা করার সুযোগ পান তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকের পরে শিক্ষাতত্ত্বে অনার্স নিয়ে পাঁশকুড়া বনমালী কলেজ পেরিয়ে এমএ পড়তে ভর্তি হন যাদবপুরে। সেখান থেকেই বিএড করেছেন গোপাল। ২০১৮ সালে শুরু করেন পিএইচডি।

২০১৫ সালে আমলাশোলে প্রথম এমএ পাশ করেন দু’জন— গোপাল আর তাঁর বন্ধু সুনীল মুড়া। একই কলেজ থেকে শিক্ষাতত্ত্বে অনার্স করে নিখিল এমএ পড়তে যান পুরুলিয়া সিদো কানহু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু আমলাশোল থেকে কেউ পিএইচ-ডি করেছেন, মনে করতে পারলেন না গোপাল। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পাশের পাড়াতেই অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। তখন আমি ক্লাস এইটে। বাইরে থেকে অনেকে যাওয়া-আসা শুরু করল। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রামের মানুষদের সাহায্যের জন্য আসতে শুরু করেছিল।’’ দাদার পাশাপাশি গবেষণায় উৎসাহ এবং সাহস জুগিয়েছেন যাদবপুরের শিক্ষক-সহপাঠী-বন্ধুরা। গোপাল বলেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আমার চোখ খুলে গিয়েছে।’’ উঠল গাইড মুক্তিপদ সিংহ এবং বন্ধু মণিকান্ত পারিয়ার কথা। ‘‘গোপালের চেষ্টার কোনও শেষ নেই। লেখাপড়া নিয়ে ওর খুব আগ্রহ,’’ বললেন যাদবপুরের শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগের প্রধান মুক্তিপদ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Education Jadavpur University PHD

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।