মৃত জিনারুন হক। —নিজস্ব চিত্র
হাসপাতালে এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘিরে নোভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়াল মুর্শিদাবাদে। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ভর্তি ওই রোগীর মৃত্যু হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। নাইসেড থেকে রিপোর্ট আসার আগেই মৃত্যু হয় সদ্য সৌদি আরব থেকে ফেরা বছর ৩৩-এর ওই যুবকের। স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নাইসেডের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা সম্ভব নয় ওই যুবকের মৃত্যুর কারণ কী। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা কোনও রোগীর মৃত্যুর ঘটনা এ রাজ্যে এই প্রথম। এই মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে এক দিকে যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে, পাশাপাশি স্বাস্থ্য কর্তাদের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে হুলস্থুল।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম পলাশপাড়ার বাসিন্দা জিনারুন হককে রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ভর্তি করা হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এ দিন বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। জিনারুল গত পাঁচ বছর ধরে সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে সাফাই কর্মী হিসাবে কাজ করছেন। শনিবার সকালেই তিনি সৌদি থেকে কলকাতায় এসে পৌঁছন।
জিনারুলের এক আত্মীয় মোবিন শেখ বলেন, সকালে বিমান থেকে নামার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ বাড়ি পৌঁছন জিনারুল। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, জিনারুলের রক্তে শর্করার পরিমাণ ছিল অত্যন্ত বেশি। সেই কারণেই চিকিৎসার জন্য তিনি ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলেন। মোবিন বলেন, ‘‘ বাড়ি পৌঁছনোর পর থেকেই তিনি অসুস্থ বোধ করছিলেন। রাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। তখন তাঁকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তাতেও তাঁর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রবিবার সকালে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
আরও পড়ুন: হুঁশিয়ারি সার, মাস্ক নিয়ে দেদার কালোবাজারি ঠেকাতে পারছে না পুলিশি নজরদারি
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যেহেতু সদ্য ওই ব্যক্তি সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন, তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। তাঁর কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নাইসেডে পরীক্ষার জন্য পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু নতুন সংগ্রহ করে পাঠানোর আগেই বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস জানিয়েছেন, রোগীর উচ্চ রক্তচাপ ছিল সঙ্গে সুগার।
সূত্রের খবর, রক্তে উচ্চ শর্করার জন্যও মৃত্যু হওয়া অসম্ভব নয়, কারণ ওই ব্যক্তি দীর্ঘসময় ইনসুলিন নেননি। খাবারও খাননি। তবে যেহেতু তিনি ওই দেশে একটি হাসপাতালের সাফাই কর্মী ছিলেন তাই ঝুঁকি নিতে রাজি নন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনেই সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘নাইসেডে নমুনা পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে, তিনি আদৌ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না।’’ জিনারুলকে যে দু’জন বিমানবন্দরে আনতে গিয়েছিলেন সেই দু’জনের উপরও নজর রাখছে স্বাস্থ্য দফতর।
আরও পডু়ন: আমেরিকায় করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯, জরুরি অবস্থা জারি নিউ ইয়র্কে
এ দিন সকালে সৌদি থেকে আসার পর আরও এক যাত্রীর বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্রিনিং টেস্টে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় ভর্তি করা হয়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। ওই ব্যক্তিও মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন যে দু’জন জিনারুলকে আনতে গিয়েছিলেন শুধু তাঁরা নন, জিনারুলের পরিবারের বাকি সমস্ত সদস্য, জিনারুল যে গাড়িতে এসেছিলেন সেই যাত্রীরা অর্থাৎ জিনারুলের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সকলকেই আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এমনকি, রিয়াদ থেকে দুবাই হয়ে যে বিমানে তিনি কলকাতায় পৌঁছন, তাঁদেরকেও চিহ্নিত করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘জিনারুল রওনা হওয়া থেকে তাঁর হাসপাতাল পৌঁছনো পর্যন্ত অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করতে অনেকটা সময় প্রয়োজন।’’ সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘‘যদি জিনারুল আগেই আক্রান্ত হয়ে থাকতেন, তা হলে বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্রিনিং টেস্টে ধরা পড়া উচিত ছিল। এ ক্ষেত্রে জিনারুল ওই টেস্ট পাশ করে গিয়েছিলেন। তাই আমরা প্রাথমিক ভাবে তাঁর পরিবারের লোকজনের উপরেই নজর রাখার ব্যবস্থা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy