মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
দুর্নীতি তিনি ‘টলারেট’ করবেন না, বলে রেখেছেন আগেই। দলের দাপুটে কাউন্সিলরকে জেলে ভরেছেন। একুশের মঞ্চ থেকেও কড়া অনুশাসনের কথা যে বলবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেটা প্রত্যাশিত ছিল।
প্রত্যাশিত সেই ভূমিকাই মমতা নিলেন বৃহস্পতিবার, কিন্তু গতে বাঁধা পথে নয়। বেচাল চলবে না, বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করব না-র মতো কঠোর বাক্য নয়, মমতা এ দিন বারবার কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে চাইলেন লড়াই আর বিশ্বাসযোগ্যতার মন্ত্রে। বারবার মনে করিয়ে দিলেন, লোভে পা নয়। বিরোধীরা অবশ্য মনে করছেন, প্রয়োজনের তুলনায় এই সাবধানবাণী খুবই মৃদু।
ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২১শে-র সমাবেশে দলের জন্য বরাবরই কিছু সতর্কবার্তা আসে মমতার কাছ থেকে। গত বার সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, সিন্ডিকেট বা খাদান থেকে টাকা তুললে তৃণমূলে ঠাঁই হবে না। অথচ ঘটনা হল, তার পরেও বিধানসভা ভোটে মমতাকে সবচেয়ে বেশি লড়তে হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগের মোকাবিলাতেই। ২১১টি আসন নিয়ে বিপুল জয়ের পরে দ্বিতীয় ইনিংসে সেটা যাতে আরও ব্যাপক আকার না নেয়, সেটা দেখাই এখন মমতার চ্যালেঞ্জ। এ দিনও তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে, ‘‘কিছু না করেই বিজেপি আমাদের অনেক বদনাম দিয়েছে। ভুলিনি সে সব!’’
এ দিন বিজয় উৎসবের মঞ্চ থেকে মমতা নতুন করে আর খুব ধমকধামক দেননি ঠিকই। সিন্ডিকেট, খাদান ব্যবসা বা তোলাবাজির কথা সরাসরি মুখেও আনেননি। কিন্তু দলের ভাবমূর্তি আর কর্মীদের চালচলনই যে তাঁর প্রধান চিন্তা, সেটা গোপনও রাখেননি। বলেছেন, ‘‘কর্মীরাই তৃণমূলের সম্পদ। আমি সেই পুরনো কর্মীদের চাই, যারা গুলির সামনে দাঁড়িয়ে লড়তে পারবে। যারা ঘরে যা আছে, তা-ই খাবে। ভাল-মন্দ কিছু পাওয়ার জন্য লোভে পা দেবে না।’’ মমতার পরামর্শ, দু’মুঠো খাওয়াটাই বড় কথা। মন্ডা-মেঠাইয়ের লোভ না করাই ভাল। তিনি নিজে যেমন অনাড়ম্বর জীবন যাপন করেন, কর্মীদেরও তেমনটাই করার জন্য বলেছেন তিনি। জানিয়ে দিয়েছেন, সাধারণ মানুষের স্বার্থের সঙ্গে দলীয় কর্মীদের কোনও সংঘাত তিনি মানবেন না।
একুশে জুলাইয়ের শহিদ স্মরণ মঞ্চে মমতা এ দিন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ব়লেন, ‘‘দলটাকে চোখের মণির মতো রক্ষা করতে হবে।’’ কয়েক দশক আগে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, বামফ্রন্টকে চোখের মণির মতো রক্ষা করতে হবে। সেই কথাই ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে এ দিনের ধর্মতলায় ফিরে এল মমতার মুখে। দলকে দুর্নীতির বাত থেকে বাঁচাতে দলের নামে চাঁদা তোলা বন্ধ করতে নিদান দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘দলের সদস্যপদ দিয়েই দল চালাতে চাই। লোকের কাছে টাকা চাওয়ার দরকার নেই।’’
গত কয়েক বছরে শাসক দলের স্থানীয় স্তরের বহু নেতাই এলাকায় এলাকায় চাঁদা তুলেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই সব টাকা দলের তহবিলে জমা পড়েনি বলে অভিযোগ। এই প্রবণতাই উপড়ে ফেলতে চাইছেন দিদি। বলেছেন, ‘‘গোলমাল হয়তো আছে দু-একটা ব্লকে। বাকি ৩৯৮টা ব্লকই কিন্তু ঠিক আছে। কিন্তু এটার জন্য দলের বদনাম হয়ে যায়।’’ সমস্যা দূর করতে তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশ, ‘‘শপথ নিন, আমরা কোনও ঝগড়া-বিবাদে জড়াব না।’’ দলের হাতে-থাকা পুরসভা বা পঞ্চায়েত সমিতিও নিজেদের খুশিমতো চলতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা। দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশিকা মেনেই পুরসভা বা পঞ্চায়েতের বোর্ডকে চলতে হবে।
বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের মতো কেউ কেউ অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ৫৫ মিনিটের বক্তৃতায় রাজ্য জুড়ে দাদাগিরি, সিন্ডিকেট থেকে শুরু করে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে প্রতারিত লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বার্থরক্ষায় কোনও কথা নেই!’’ কিন্তু তৃণমূল সূত্রে পাল্টা ব্যাখ্যা আসছে, দাদাগিরি বা সিন্ডিকেট-রাজ মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী যে এ বার বাধা না মেনেই এগোবেন, তার প্রমাণ প্রশাসনিক স্তরে মিলতে শুরু করেছে। বিধাননগরের কাউন্সিলরের পাশাপাশি তাঁর শাগরেদদেরও পুলিশ দিয়ে ফাটকে পোরা হয়েছে। তাই শাসক দলের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর কঠোরতা সবাই দেখেছে। দলীয় অনুশাসনের কথা এখন কর্মীদের ফের স্মরণ করিয়ে দিলেই চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy