(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফিরহাদ হাকিম (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
প্রতিষ্ঠা দিবসে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের ঘুরিয়ে নীতিপাঠ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দলের মূল লক্ষ্য লুকিয়ে আছে ‘মা-মাটি- মানুষে’। তবে দলের একাংশের অসততার কথা প্রকাশ্যে এনে এই দিনে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা ফিরহাদ ( ববি) হাকিম। তাঁর কথায়, ‘‘দলে নিশ্চিত ভাবে অসৎ মানুষ আছে। তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।’’
নতুন বছরে দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে চর্চা ছিলই। ভিতরে ও বাইরে যে সব চ্যালেঞ্জ মাথা তুলেছে, সে সব ঘিরে চর্চার মধ্যেই সততা নিয়ে প্রকাশ্যে ‘বোমা’ ফাটিয়েছেন ফিরহাদ। যে ‘সততার প্রতীক’ হিসেবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম প্রচার করেছে তৃণমূল, বুধবার সেই সততার প্রসঙ্গেই ফিরহাদ বলেছেন, ‘‘বলব না যে, তৃণমূল যারা করছে, তারা গঙ্গাজলে স্নান করে এসেছে! নিশ্চিত ভাবে দলে অসৎ মানুষ আছে। তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।’’ সেই সঙ্গেই শাসক হিসেবে আড়ে-বহরে বেড়ে চলা দলের এখনকার অবস্থা সম্পর্কে দলের প্রথম সারির এই নেতার বক্তব্য, ‘‘আজ এমন অবস্থা যে শিয়ালদহ স্টেশনের উপর থেকে ঢিল মারলে, যার মাথায় পড়বে সে-ই তৃণমূল!’’
তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে এ দিন অশান্তি ছড়িয়েছে শহর লাগোয়া ভাঙড়ে। দলের নেতা কে, সেই বিরোধেই ভাঙড়ে আক্রান্ত হয়েছে এলাকার প্রাক্তন দলীয় বিধায়ক আরাবুল ইসলামের দলবল। সরাসরি অভিযোগ উঠেছে দলেরই আর এক বিধায়ক সওকাত মোল্লার লোকজনের বিরুদ্ধে। এই সূত্রেই ফিরহাদ এই মন্তব্য করলেও প্রতিষ্ঠা দিবসে সামগ্রিকতার বিচারে তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব, আর্থিক দেনাপাওনার কথা স্বীকার করে তৃণমূলের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘নানা কারণে বিরোধ থাকতে পারে। তবে প্রতিষ্ঠা দিবসে তা এই চেহারা নিলে নিঃসন্দেহে সে সম্পর্কে আমাদের সকলের সতর্ক হওয়া উচিত।’’
ফিরহাদের মন্তব্যের জেরে অবশ্য সরব হয়েছে বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘কে ভাল, কে খারাপ সেটা ফিরহাদ বিচার করবেন? তৃণমূল এমন একটা দল, যেখানে ভাল মানুষ আতস কাচে খুঁজতে হয়! বাংলার মানুষ ফিরহাদের কাছ থেকে কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য শুনতে আগ্রহী নন!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘শিয়ালদহ স্টেশনে ঢিল মারলে যার গায়ে লাগবে, সে-ই তৃণমূল, এটা বলে ফিরহাদ বুঝিয়ে দিয়েছেন, ঢিলটা তৃণমূলই মারবে! যে রক্ষক, সে-ই এখানে ভক্ষক। আর আত্মত্যাগের যে সব বার্তা তৃণমূলের নেতৃত্ব শোনাচ্ছেন, তার নজির তো সত্যিই আছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জেলে শুধুই বিধায়ক হিসেবে, মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। আরাবুল ইসলাম সে দিনের তাজা নেতা, এখন কেউ নন!’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের মতে, ‘‘আমরা যে বলতাম শাসক দলে এখন বেশির ভাগই অসৎ লোক, তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্য ফিরহাদ কার্যত সেটাই মেনে নিচ্ছেন। তবে যে মন্ত্রীকে স্যান্ডো গেঞ্জি পরে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তার মুখে এই কথা শুনে লাভ কী! অসৎ লোকেদের বার করে দিতে গেলে তো কম্বলের লোম বাছা হবে!’’
শুধু সততাই নয়, এই মুহূর্তে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক নানা প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলে। প্রতিষ্ঠা দিবসে সেই সম্পর্কেও নির্দিষ্ট পথ-নির্দেশের প্রত্যাশা ছিল দলের অন্দরে। আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে করণীয় ব্যাখ্যা করে মানুষের জন্য উন্নয়নের কাজেই অগ্রাধিকার চিহ্নিত করেছেন মমতা। একই ভাবে ২০২৪ সালের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা থেকেই আগামীর লড়াইয়ের জন্য শক্তি সংগ্রহের কথা বলেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। একই ভাবে তৃণমূল ভবনে পতাকা উত্তোলন করে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও তৃণমূল নেত্রীর অতীত সংগ্রামের কথা ব্যাখ্যা করে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজ্যের প্রথম সারির নেতামন্ত্রী ও সংগঠকেরা নিজের এলাকায় পতাকা উত্তোলন-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তবে এ দিনও তৃণমূল ভবনের অনুষ্ঠান বা অন্য কোথাও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত না-থাকায় বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন চলছে। অভিষেকের অবশ্য আজ, বৃহস্পতিবার নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে ‘সকলের জন্য চিকিৎসা’ শীর্ষ একটি বড় প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy