Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

নবান্নে আজ অনুব্রতকে তলব মুখ্যমন্ত্রীর

তৃণমূল-বিজেপি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। নিহতদের মধ্যে শাসক দলেরই দু’জন! পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রামের ওই ঘটনার ঠিক ন’দিনের মাথায় বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে নবান্নে তলব করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৯
Share: Save:

তৃণমূল-বিজেপি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। নিহতদের মধ্যে শাসক দলেরই দু’জন! পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রামের ওই ঘটনার ঠিক ন’দিনের মাথায় বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে নবান্নে তলব করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রের খবর, আজ, বুধবার বিকেল চারটেয় নবান্নে অনুব্রতকে ডেকে পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবারই কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন অনুব্রত।

অনুব্রতর সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী ডেকে পাঠিয়েছেন ওই জেলার বিধায়ক তথা মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহকে। তবে, কেন অনুব্রতকে এই হঠাৎ-তলব, তা নিয়ে জোর জল্পনা ছড়িয়েছে বীরভূম জেলা তৃণমূলের অন্দরে। বিভিন্ন সময়ে কখনও উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়ে বা খুনের ঘটনায় নাম জড়ালেও বরাবর অনুব্রতর পাশে থেকেছেন তৃণমূল নেত্রী। কখনও বলেছেন ‘ওর মাথায় অক্সিজেন কম যায়’, কখনও প্রকাশ্য সভায় অনুব্রতকে পাশে নিয়েই তাঁকে ‘দক্ষ সংগঠক’ শংসাপত্র এবং ‘শেষ পর্যন্ত পাশে থাকার’ বার্তাও দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ‘পাশে থাকার’ জন্য পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষ হত্যায় অভিযুক্তদের তালিকায় এক নম্বরে নাম থাকলেও আজ পর্যন্ত পুলিশ অনুব্রতকে ধরার সাহস পায়নি বলেই অভিযোগ।

এ হেন অনুব্রতকে কেন ডেকে পাঠালেন মমতা?

জেলা সভাপতি ফোন ধরেননি। তবে, জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “দু’টো কারণ হতে পারে। প্রথমত, বীরভূমে আমাদের সংগঠন কেন আলগা হয়ে গিয়েছে, তা সভাপতির কাছে জানতে চাইতে পারেন দলনেত্রী। দ্বিতীয়ত, মাখড়া-কাণ্ড ও তার পরবর্তী ঘটনাবলি নিয়ে জেলা সভাপতিকে ধমকও খেতে হতে পারে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। কারণ, মাখড়ায় তৃণমূলের জেলা স্তরের বেশ কিছু নেতা-কর্মীর নাম জড়িয়ে গিয়েছে। এবং সেই সুযোগে জেলায় ফের নিজেদের অস্তিত্ব সরবে জাহির করার সুযোগ পেয়েছে বিজেপি।”

ঘটনা হল, মাখড়া-কাণ্ড নিয়ে বারবার অস্বস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। ওই সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে পুলিশ যাদের গ্রেফতার করে, তাদের অধিকাংশই তৃণমূল শিবিরের। পরিস্থিতি এমনই যে, পুলিশের এই ধরপাকড় নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে জেলা তৃণমূলের অন্দরেই। এমনকী, শুক্রবার বোলপুরে গিয়ে সেই ক্ষোভের আঁচ পেয়েছিলেন দলের মকুল রায়। তবে, এ সবকে ছাপিয়ে যে জল্পনা দলে ঘোরাফেরা করছে, তা হল বীরভূমে বিজেপির ক্রম-বিস্তার। বিশেষ করে, সেই ইলামবাজার ও পাড়ুই অঞ্চলে। লোকসভা ভোটের পরে এই দুই অঞ্চলের একাধিক গ্রাম বিজেপির হাতে চলে গিয়েছে। মাখড়া তারই উদাহরণ। এবং সেই গ্রাম ‘দখল’ করতেই মরিয়া হয়ে বহিরাগতদের নিয়ে তৃণমূল হামলা চালায় বলেই অভিযোগ। তাতে উল্টে তৃণমূলেরই দু’জন নিহত হন। এবং গোটা ঘটনা শাসকদলের থেকে ‘হাইজ্যাক’ করে নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি লুটেছে বিজেপি-ই!

মাখড়া লাগোয়া চৌমণ্ডলপুরে গত ২৪ অক্টোবর বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশের উপরে যে হামলা হয়েছিল, তাতে নাম জড়ায় বিজেপির। ওই ঘটনায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়া পাড়ুইয়ের সদাই শেখ (এক সময় অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ ছিলেন)-সহ ৪৪ জন বিজেপি কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে পুলিশ। কিন্তু, সদাইকে ধরার আগেই মাখড়ায় হামলার ঘটনা ঘটে যাওয়ায় চৌমণ্ডলপুরের ঘটনা থেকে চোখ সরে যায় সব মহলের।

জেলা গোয়েন্দা রিপোর্ট জানাচ্ছে, সম্প্রতি ইলামবাজার, পাড়ুই, বোলপুর ও সিউড়িতে বিজেপির মিটিং-মিছিল বেড়েছে। এই অবস্থায় জেলা তৃণমূলের একাংশের ধারণা, অনুব্রতকে তলব করে বিজেপির উত্থান ও দলের সংগঠনের রাশ আলগা হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু বার্তা দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। রবিবারই বোলপুরে গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে পঞ্চায়েত স্তর থেকে জেলার শীর্ষস্তরের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন অনুব্রত। তাতে প্রায় ছশো জন ছিলেন। ওই বৈঠকেও বিজেপির সংগঠন বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়।

এই পরিস্থিতিতে আজ নবান্নে মমতা কী বলেন অনুব্রতকে, এখন সেটাই দেখার।

অন্য বিষয়গুলি:

mamata bandyopadhyay anubrata mondal nabanno
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy