প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে শুভেন্দুর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নবান্ন
ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনার জন্য আজ, শুক্রবার কলাইকুন্ডা বিমানঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের কর্মসূচি ঠিক থাকলেও, বৃহস্পতিবার বেশি রাতে বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়ে, তাতে মমতা সম্ভবত ওই বৈঠকে যাবেন না। বিষয়টি নবান্নের পক্ষ থেকে রাতেই দিল্লিকে জানানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, মমতার আপত্তির মূল কারণ, প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিতির সম্ভাবনা। এ দিন রাতে দিল্লি থেকে নবান্নকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, এই রাজ্যের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, এই তালিকা জানার পরে মুখ্যমন্ত্রী বেঁকে বসেন। তাঁর যুক্তি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা রাজ্যপাল বৈঠকে থাকবেন, তা না-হয় বোঝা গেল। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী থাকবেন কেন?
শুভেন্দুকে বিজেপি রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী নেতা করবে বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি সেই পদে বসেননি। আপাতত তিনি শুধু মমতাকে ‘হারিয়ে’ নন্দীগ্রাম থেকে জিতে আসা বিধায়ক। জানা গিয়েছে, এই প্রশ্নেই ওই বৈঠককে ‘রাজনৈতিক’ করে তোলা হচ্ছে বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে বৈঠকে থাকার কথা শুধু মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
নবান্নের ব্যাখ্যা, বৈঠকে সরকারি স্তরের বাইরে অন্য কোনও রাজনৈতিক উপস্থিতি না থাকাই বাঞ্ছনীয়। তাই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর আপত্তি ও অনিচ্ছা জানিয়েছেন। মমতার এই আপত্তির কথা রাতেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে জানানো হয়। তবে মধ্য রাত পর্যন্ত দিল্লির কোনও সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যে কর্মসূচি তৈরি হয়েছিল, তাতে কলাইকুন্ডায় দুপুর আড়াইটে থেকে সাড়ে তিনটে পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক নির্ধারিত। মোদী আসবেন ওড়িশা থেকে। মমতা সকালে মুখ্যসচিবকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে যাবেন উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি-হিঙ্গলগঞ্জে। সেখানকার পরিস্থিতি আকাশ থেকে দেখে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে চলে যাবেন সাগরে। সেখানেও একই ভাবে এলাকা পরিদর্শন ও বৈঠক সেরে তাঁর কলাইকুন্ডায় পৌঁছনোর কথা।
যদি মোদী মমতা বৈঠক হয়, তার পরে হেলিকপ্টার ওড়ার পরিস্থিতি থাকলে মুখ্যমন্ত্রী দিঘায় যাবেন। দেরি হয়ে গেলে খড়্গপুরে রাত কাটিয়ে কাল, শনিবার দিঘা যাওয়ার বিকল্প পরিকল্পনাও আছে তাঁর। সেখানে প্রশাসনিক বৈঠকের পাশাপাশি আকাশপথে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাও ঘুরে দেখার কর্মসূচি রয়েছে মমতার। এ দিন বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মোদীর আসা নিয়েও ইষৎ খোঁচা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মন্তব্য, “প্রধানমন্ত্রী ওড়িশার তিনটি জায়গায় যাচ্ছেন। আর কোথাও যাচ্ছেন না। বালেশ্বর-জলেশ্বরের মতো যে-সব জায়গায় ইয়াসের প্রভাব পড়েছে, সেই তিনটি স্পট ঘুরে দিঘার উপর দিয়ে কলাইকুন্ডায় পৌঁছবেন তিনি। কারণ, সেখান থেকে তাঁকে দিল্লি যেতে হবে তো! তাই সেখানেই আমার সঙ্গে বৈঠকে বসে রিভিউ করবেন।”
প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, আমপানের পরে আর্থিক প্যাকেজ না-পাওয়ায় রাজ্য যে-ভাবে সরব হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলে সেখানে মুখ্যমন্ত্রী এই প্রসঙ্গটি তুলতে পারেন। এ দিনই মমতা জানান, প্রাথমিক সমীক্ষায় এ-পর্যন্ত ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতির হিসেব পাওয়া গিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত বৈঠক হলে ভোটের পরে এটাই হবে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম সাক্ষাৎ। কয়েক দিন আগে কোভিড নিয়ে মোদীর ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও কথা বলার সুযোগ পাননি মুখ্যমন্ত্রী। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy