Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee in Delhi

আর্থিক বঞ্চনা, সঙ্গে নানা রাজ্য ভাঙার চক্রান্ত, নীতি আয়োগ বৈঠকে সকলের হয়েই বলতে যাব: মমতা

শুক্রবার দুপুরে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে অভিষেকও রয়েছেন। কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে মমতা জানালেন, শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪ ১২:৫৩
Share: Save:

শনিবার দিল্লি নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক দিকে ‘আর্থিক বঞ্চনা’ আর অন্য দিকে ‘বাংলা ভাগের’ চক্রান্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে শুক্রবার দিল্লি যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে মমতা নিজেই জানালেন, প্রতিবাদ জানাতেই তিনি নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। মমতার সঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও রয়েছেন।

দিল্লি যাওয়ার আগে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে। মমতা বলেন, ‘‘বাজেটে যে ভাবে বিরোধী রাজ্যগুলিকে বঞ্চনা করা হয়েছে, সেটা মানতে পারছি না। এক দিকে ইকনমিক ব্লকেড, পলিটিক্যাল ব্লকেড, এর সঙ্গে দেশকে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার যে পরিকল্পনা, তার চরম নিন্দা করছি। মন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বাংলা ভাগের কথা বলছেন! শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারছি, ওদের দলের অনেক নেতারাও বিহার-ঝাড়খণ্ড-অসম-বাংলাকে ভাগ করা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিবৃতি দিচ্ছেন। কড়া নিন্দা করছি এর। বিহার, ঝাড়খণ্ড, অসম ও বাংলাকে ভাগ করা মানে গোটা দেশকে ভাগ করা। আমরা একে সমর্থন করি না।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলা ভাগের দাবির প্রতিবাদ জানাতেই নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বৈঠকে থাকব কিছু ক্ষণ। কিছু বলতে দিলে বলব। আর না হলে প্রতিবাদ করব। বাংলার হয়ে কথা বলব।’’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠক রয়েছে দিল্লিতে। বিরোধী শিবির ‘ইন্ডিয়া’র বেশ কয়েক জন মুখ্যমন্ত্রী ওই বৈঠক বয়কট করেছেন। শোনা গিয়েছে, নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন না পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা, কর্নাটক, কেরল, হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রীরা। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করতে পারেন বলে শোনা গিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার মমতা জানালেন, হেমন্তও বৈঠকে থাকতে পারেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি যত দূর জানি ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও থাকবেন। দু’জন মিলে প্রতিবাদ করব।’’

মমতা নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে জোর জল্পনা ছিল জাতীয় রাজনীতিতে। অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরা প্রায় সকলে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিলেও মমতা বৈঠক নিয়ে ‘আগ্রহ’ দেখানোয় মোদী সরকারের একাংশ তাকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে মনে করা হচ্ছিল, মমতা শেষ পর্যন্ত নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন না। কারণ, তাতে বিরোধী শিবিরের ‘ঐক্য’ বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। মমতাও বিরোধী শিবিরের এক জন মুখ্যমন্ত্রী। ‘ইন্ডিয়া’র ‘ঐক্য’ উপেক্ষা করে তিনি বৈঠকে যোগ দিলে শিবিরে ‘একা’ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু মমতার সঙ্গে হেমন্ত বৈঠকে যোগ দিলে তা হওয়ার কোনও কারণ নেই।

যদিও বৃহস্পতিবারই কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল বলেছিলেন, ‘‘আমি মনে করি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদের মতো নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন না।’’ পাল্টা তৃণমূলের একটি সূত্রের বক্তব্য, ‘ইন্ডিয়া’র অভ্যন্তরে কংগ্রেসের ‘একতরফা’ ভাবে নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে খানিক অনুযোগ এবং অসন্তোষ রয়েছে। বৈঠক বয়কটের সিদ্ধান্ত সম্মিলিত ভাবে নিলে গোটা বিষয়টা অনেক মসৃণ ভাবে হতে পারত। এ ছাড়াও বাংলা যে ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে, সর্বসমক্ষে তার তথ্য তুলে ধরা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে যে ভাবে লাগাতার বাংলা ভাগের কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়েও সরব হওয়া জরুরি।

প্রসঙ্গত, বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের পর বৃহস্পতিবার লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের বিভাজন চেয়ে সরব হন ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। এ ছাড়াও বাংলা ভাগের পক্ষে সওয়াল করেছেন বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায় এবং নগেন্দ্র রায় তথা অনন্ত মহারাজ। বাংলা ভাগ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত হয় বুধবার। উত্তরবঙ্গের কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রকল্পগুলির অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব নিয়ে সুকান্ত সরব হওয়ার পরেই। তাঁর পাশে দাঁড়ান জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত। সমর্থন করেছেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তাও। আবার বুধবারই কোচবিহার ভেঙে গ্রেটার কোচবিহার তৈরি করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ অনন্ত। এর পর বৃহস্পতিবার নিশিকান্ত লোকসভার শূন্য প্রহরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মূলত জনবিন্যাসের ভারসাম্য এবং দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে বিহারের কিষাণগঞ্জ, আরারিয়া ও কাটিহারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদের মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ে তোলার সওয়াল করেন। তাঁর অভিযোগ, ধারাবাহিক অনুপ্রবেশের ফলে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের ওই পাঁচ জেলার জনবিন্যাস পাল্টে গিয়েছে। ওই জেলাগুলিতে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) চালু করার দাবিও তোলেন তিনি।

এতেই চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে তৃণমূল। তাদের বক্তব্য, ধারাবাহিক ভাবে বিজেপি নেতারা পশ্চিমবঙ্গের বিভাজন নিয়ে মন্তব্য করার পিছনে কেন্দ্রের তরফে বাংলাকে ভাগ করার নির্দিষ্ট ছক রয়েছে। তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ সৌগত রায়ের কথায়, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে এঁটে উঠতে না পেরে এ বার পশ্চিমবঙ্গকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যেই বাংলাকে ভাগ করার চক্রান্ত করছে বিজেপি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE