—ফাইল চিত্র।
নাগরিকত্ব –আন্দোলনের আবহেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে একান্ত বৈঠকও হতে পারে।
এক রাতের সফরে আজ শনিবার বিকেলে মোদী পৌঁছবেন কলকাতায়। ফিরবেন রবিবার দুপুরে। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতা বন্দরের দেড়শ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মিলেনিয়াম পার্কে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীরও থাকার কথা।
তার আগেই অবশ্য রাজভবনে মোদী-মমতার একান্ত বৈঠকের সম্ভাবনা। আপাতত প্রধানমন্ত্রীর যে সফর সূচি জানা গিয়েছে তাতে দিল্লি থেকে এসে কলকাতায় রাজভবনে পৌঁছনর পর ঘন্টা দেড়েক তাঁর কোনও ‘ঘোষিত’ কর্মসূচি নেই। সরকারিভাবে যাকে বলা হয় ‘রিজার্ভড’ সময়। সেই অবসরে তিনি নিজস্ব দেখাসাক্ষাতের কর্মসূচি সেরে নিতে পারেন। সরকারি সূত্রে খবর, ওই সময়ের মধ্যে রাজভবনে গিয়ে মমতা দেখা করতে পারেন মোদীর সঙ্গে। পরে তাঁরা দু’জনেই যাবেন মিলেনিয়ম পার্কে। সেখান থেকেই গঙ্গা-পথে জলযানে বেলুড় মঠ যাবেন প্রধানমন্ত্রী। ফিরতে রাত সাড়ে দশটা। তাই মমতার সঙ্গে বৈঠক হলে বিকেলবেলাই প্রশস্ত সময়। কিন্তু দিল্লির বিরোধী বৈঠকে না গিয়ে রাজ্যে মোদীর সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় মমতার সমালোচনায় সরব রাজ্যের কংগ্রেস ও সিপিএম।
আরও পড়ুন: ‘গো ব্যাক মোদী’, আজ প্রতিবাদের আঁচ রাজ্যে
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মোদী-মমতা দেখা হওয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন। কারণ নতুন নাগরিকত্ব আইন ( সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দিয়ে প্রথম পথে নেমেছিলেন মমতাই। সেই লক্ষ্যে জাতীয় স্তরে জোট গড়ে তুলতে বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের চিঠিও দিয়েছিলেন তিনিই। তাঁর সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সনিয়া গাঁধী থেকে শরদ পওয়ার সকলেই। ১৩ জানুয়ারি সনিয়ার ডাকে দিল্লিতে বিরোধী নেতাদের বৈঠক। কিন্তু শেষমুহূর্তে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস ও সিপিএম রাজ্যে বনধের নামে যে ‘গুন্ডামি’ করেছে তার প্রতিবাদে তিনি বৈঠকে যাবেন না।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি
শনিবার
• বিকেল সাড়ে তিনটে: দিল্লি থেকে বিমানে কলকাতা
• কপ্টারে রেসকোর্স ময়দান
• গাড়িতে রাজভবন
• রাজভবনে প্রায় দেড় ঘণ্টা ‘রিজার্ভড টাইম’
• গাড়িতে কারেন্সি বিল্ডিং
• গাড়িতে মিলেনিয়াম পার্ক
• সেখান থেকে জলপথে বেলুড় মঠে যাওয়া-আসা
• মিলেনিয়াম পার্কে ফিরে গাড়িতে রাজভবন
রবিবার
• সকাল ১১টা: গাড়িতে নেতাজি ইন্ডোর
• গাড়িতে রেসকোর্স ময়দান
• কপ্টারে বিমানবন্দর
• দুপুর ১টা: বিমানে দিল্লি
যদিও মোদীর সঙ্গে মমতার সম্ভাব্য বৈঠকের আলোচ্য হিসেবে ‘রাজনীতি’ গুরুত্ব পাবে না বলে নবান্নের শীর্ষ মহলের দাবি। ওই সূত্রে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে গেলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে রাজ্যের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার কথা বলবেন। কেন্দ্র যে রাজ্যকে বিভিন্ন খাতে বকেয়া টাকা দিচ্ছে না, সেই অভিযোগও মোদীকে জানাবেন মমতা। পুজোর আগে দিল্লি গিয়ে মোদীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন মমতা। আলাদা বৈঠক হয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও। তারপরে আবার এখন মোদী-মমতা সাক্ষাতের সুযোগ উপস্থিত। দুই শীর্ষস্থানীয় নেতার একান্ত বৈঠক হলে তা শুধুই রাজ্যের দাবিদাওয়ার মধ্যেই ‘সীমিত’ থাকবে কি না, সে কৌতূহল অবশ্য থেকে যাচ্ছে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, ‘‘সনিয়া গাঁধীর ডাকা বৈঠকে না গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে দেখা করছেন। বাংলার মানুষ কি বোকা?’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যদি মোদীর সফর এবং সনিয়ার বৈঠকের মধ্যে বেশিদিনের ফারাক থাকত তাহলে মুখ্যমন্ত্রী দু’টোই হাতে রাখতেন। কিন্তু পিঠোপিঠি কর্মসূচি হওয়ায় ওই দ্বিচারিতা ধরা পড়ে যাচ্ছে।’’
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই সব সমালোচনা গায়ে মাখতেই রাজি নন। দলের এক শীর্ষনেতার বক্তব্য, ‘‘আন্দোলনের নামে গুন্ডামি বরদাস্ত করা হবে না তা মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। যাদের সঙ্গে বৃহত্তর জনসমর্থন নেই, তারাই কয়েকজন গুন্ডাকে রাস্তায় নামিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করে। তাই ওরা কী বলে না বলে তা নিয়ে কোনও মাথাব্যাথা নেই।’’ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শহরে এলে তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দেখা করা ‘প্রটোকল।’ মোদীকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন এবং সফরকালীন তাঁর সঙ্গে থাকবেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
প্রধানমন্ত্রীর আসা-যাওয়ার পথে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভের কর্মসূচি নিয়েছে বাম, কংগ্রেস ও অন্য কয়েকটি দল এবং তাদের বিভিন্ন শাখা সংগঠন। এর মধ্যে ছাত্র সংগঠনও আছে। নবান্নের খবর, মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে কোনও বিক্ষোভ -অবরোধের চেষ্টা বা কালো পতাকা দেখানো হলে তা আটকাতে হবে। তবে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদের উপরে লাঠিচার্জের মতো বলপ্রয়োগ যাতে না হয় পুলিশকে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় তাঁর যাতায়াতের পথে মোতায়েন থাকছে অন্তত চার হাজার পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy