মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
ট্যাব-কাণ্ডে তাঁর প্রশাসন ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’। প্রশাসনকে প্রশাসনের কাজ করতে দেওয়া হোক বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আশ্বাসও দেন, যে সব পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা ঢোকেনি, তারা টাকা পেয়ে যাবে। প্রশাসন সেই ব্যবস্থা করবে।
উত্তরবঙ্গ সফর সেরে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে বাগডোগরা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ট্যাব কেলেঙ্কারি নিয়ে সিট গঠন করা হয়েছে। এটা প্রশাসনের কাজ। প্রশাসনকে করতে দিন।’’ ট্যাব কেলেঙ্কারির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই স্বাভাবিক ভাবে অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্য প্রশাসন। প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষা দফতরের ভূমিকা নিয়েও। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে নবান্নে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার-সহ অন্যান্য আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। এ বার বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনা মহারাষ্ট্র, রাজস্থান-সহ একাধিক রাজ্যে ঘটেছে। এই গ্রুপটাকে আমরাই ধরতে পেরেছি। সুতরাং, আমাদের প্রশাসন খুব স্ট্রং। রাফ অ্যান্ড টাফ। তারা ইতিমধ্যেই ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে। বাকি যা যা করার, তারা করবে। ট্যাবের যারা টাকা পায়নি, তারা পেয়ে যাবে।’’
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব কিনতে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে পড়ুয়াদের ১০ হাজার টাকা করে দেয় রাজ্য সরকার। তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর ২০২১ সালে এই প্রকল্প চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে শুধু দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরই এই টাকা দেওয়া হত। এ বছর একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও ট্যাব কেনার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিয়ম হল, স্কুল কর্তৃপক্ষই পড়ুয়াদের নাম-সহ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরের তালিকা শিক্ষা দফতরে পাঠাবে। সেই মতো পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা জমা হবে। এই বছর অভিযোগ ওঠে, বহু পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে সেই টাকা জমাই পড়েনি। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তাদের টাকা চলে গিয়েছে অন্যের অ্যাকাউন্টে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ১৫টি জেলার অন্তত ১৩৫০ জন পড়ুয়া ট্যাব কেলেঙ্কারির শিকার হয়েছে। এর তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই সিট গঠন করেছে কলকাতা এবং মালদহ জেলা পুলিশ। এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ১১ জনকে।
লালবাজার সূত্রে খবর, ট্যাব কেলেঙ্কারির টাকা যে সব অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে, সেগুলি ভাড়া নেওয়া অ্যাকাউন্ট। ৩০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে সেই সব অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার এক-দু’ঘণ্টার মধ্যেই তা তুলে নেওয়া হয়। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, টাকা তোলার আগে কিছু অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছিল। ‘ফ্রিজ়’ও করা হয়েছিল কিছু অ্যাকাউন্ট। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব কম্পিউটার থেকে জালিয়াতি করা হয়েছে, সেই কম্পিউটারের ‘আইপি অ্যাড্রেস’ চিহ্নিত করে দেখা গিয়েছে, সেগুলি মূলত উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া এবং তার আশপাশের এলাকার। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে চোপড়া ও তাঁর আশপাশের এলাকাকেই ট্যাব কেলেঙ্কারির আঁতুড়ঘর বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
ট্যাব কেলেঙ্কারিতে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া গ্যাংয়ের যোগ থাকতে পারে বলেও দাবি করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেছেন, ‘‘যে ভাবে রাজ্য সরকারি স্কিমের টাকা বিহারের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে, তাতে এর সঙ্গে জামতাড়া গ্যাংয়ের কোনও যোগাযোগ রয়েছে কি না, পুলিশ-প্রশাসন খতিয়ে দেখছে।’’ পুলিশ সূত্রেও খবর, ট্যাব জালিয়াতির জন্য ভিন্রাজ্যের সাইবার প্রতারকদেরও সাহায্য নেওয়া হয়েছে। সেই ভিন্রাজ্যের ব্যাঙ্কেও ট্যাবের টাকা গিয়েছে, বিহারের কিষানগঞ্জ থেকে মধ্যপ্রদেশের রায়পুর-সহ একাধিক শহরে এই চক্র ছড়িয়ে রয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের একাংশের।
গত সোমবার উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে শুক্রবার দুপুরে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। ফেরার সময় সফর নিয়েও কথা বলেন মমতা। বলেন, ‘‘’আমার পাহাড় সফর খুব ভাল হয়েছে। চারটি স্কিল ট্রেনিং সেন্টার পাহাড়ে হবে। শিলিগুড়িতে একটা রয়েছে। এতে প্রচুর ছেলেমেয়ে ট্রেনিং পাবে এবং চাকরির সুযোগ পাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy