ফাইল চিত্র।
টুইটারের মতো পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও বাগে আনতে না-পেরে কেন্দ্রীয় সরকার পিষে ফেলতে চাইছে বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিন ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এ দিকে ফের নিশানা করেছেন টুইটারকে। বক্তব্য, মার্কিন মাইক্রোব্লগিং সংস্থাটি যেন ভারতকে গণতন্ত্র দিয়ে উপদেশ দিতে না আসে।
রবিশঙ্কর এক সাক্ষাৎকারে টুইটারকে উপলক্ষ্য করে কার্যত সরকার ও বিজেপির বিরুদ্ধে ওঠা বিরোধী কণ্ঠ রোধের অভিযোগ খণ্ডন করার চেষ্টা করেছেন। যদিও সেই অভিযোগই আজ আরও স্পষ্ট ভাষায় সামনে এনেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। টুইটারের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার তথা শাসক শিবিরের আচরণের সমালোচনা করে মমতা বলেছেন, “অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, ওরা টুইটারকে কন্ট্রোল করতে পারে না, তাই সেটাকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। ওরা আমাকে কন্ট্রোল করতে পারে না তাই আমার সরকার ও আমার দলকে বুলডোজ করতে (পিষে ফেলতে) চায়। ওরা কোনও সাংবাদিককে কন্ট্রোল করতে পারে না, তাই তাঁকে মেরে ফেলতে চায়। ওরা এই রকমই করে থাকে। কিন্তু এর একটা শেষ আছে। সব কিছুরই একটা শেষ আছে। আমি এর ধিক্কার জানাই।”
বিজেপির বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে অপপ্রচারেরও অভিযোগ আনেন মমতা। তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসা চলছে বলে বিজেপি মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “রাজ্যে কোনও রাজনৈতিক হিংসা ঘটছে না। এখানে-ওখানে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা হয়তো ঘটছে, কিন্তু সেগুলিকে রাজনৈতিক হিংসার তকমা দেওয়া যায় না।”
অতীতে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে টুইটে ছড়ানো গুজব থেকে হিংসা ও বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু গাজ়িয়াবাদে বৃদ্ধকে নিগ্রহ নিয়ে এফআইআরে টুইটারকেও অভিযুক্ত করার ঘটনা বলে দিচ্ছে শাসক শিবিরের মনোভাব। এমন মামলা-মোকদ্দমা বাড়তে থাকলে টুইটারকে তার ব্যবসার স্বার্থেই তৃতীয় পক্ষের তথা গ্রাহকদের টুইটের উপরে নিজস্ব সেনসরশিপ চাপাতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের মতে, আইনি সুরক্ষা বাতিলের কথা বলে সরকার ঘুরপথে বিরোধী স্বর নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। গ্রাহকদের সুরক্ষা নিয়ে রবিশঙ্করের একটি টুইট তুলে ধরে এমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি আজ একই অভিযোগ এনেছেন। তাঁর বক্তব্য, “প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, এমনটা নয়, আসলে তারা চায় সেনসরশিপ। প্রকৃতই গ্রাহকদের সুরক্ষা চাইলে সরকার তথ্য সুরক্ষার কঠোর আইন চালু করত। তাতে বিদ্বেষপূর্ণ ভাষণ ও মিথ্যা প্রচার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পেত আদালত।”
সরকারি সূত্রের মাধ্যমে আইনি সুরক্ষা বাতিলের কথাটি সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হলেও ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন-এর মতে, আইনের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। টুইটার যে তৃতীয় পক্ষের বার্তার প্রচারক তথা ইন্টারমিডিয়েটরি-র মর্যাদা খোয়ায়নি, সে কথা গত কালই কবুল করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর। আজ সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সরকার টুইটারকে নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী নয়। তবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বিধি মেনে না-চললে দেশের আইন ও দণ্ডবিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৫ মে থেকে চালু হওয়া তথ্য-প্রযুক্তি বিধি অনুযায়ী ভারতে অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়গুলি দেখার জন্য তিন জন আধিকারিক নিয়োগ করে ভারতে তাঁদের ঠিকানা জানানোর কথা। টুইটার তা করেনি। প্রয়োজনে বার্তার উৎস সরকারকে জানাতে হবে বিধি অনুযায়ী। টুইটার এতে প্রশ্ন তুলেছে ভারতে বাকস্বাধীনতা নিয়ে। বিধিতে বদল আনারও দাবি জানিয়েছে তারা। এ নিয়ে আগেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী রবিশঙ্কর। এ দিন ফের তিনি বলেন, “টুইটার যেন ভারতকে গণতন্ত্র শেখাতে না আসে। ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্পন্দনশীল গণতন্ত্র।”
বিরোধী কণ্ঠ রোধের অভিযোগ খণ্ডন করতে রবিশঙ্করের দাবি, “আমরা তো কখনও কাউকে মত প্রকাশে, সমালোচনা করতে বাধা দিইনি।... টুইটারে কিছু লোক আছেন, যাঁরা প্রধানমন্ত্রী, সরকার ও বিজেপির সমালোচনা করেন। আমরা কখনও তাঁদের থামাইনি।” বিজেপি জমানায় গণতন্ত্র বিপন্ন বলে যে অভিযোগ নানা মহল থেকে বারবার তোলা হয়, টুইটারের তোলা প্রশ্নের সূত্রে তারও জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন রবিশঙ্কর। বলেন, “এখানে মানুষের প্রশ্ন তোলার অধিকার আছে। আদালতও স্বাধীন ভাবে প্রশ্ন করতে পারে। আমরা অসমে জিতেছি। পশ্চিমবঙ্গে হেরেছি। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy