ছবি: পিটিআই।
বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে ‘আর নয় অন্যায়’-এর স্লোগান তুলেছিলেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তার এক দিনের মাথায় ‘বাংলার গর্ব মমতা’কে তুলে ধরল তৃণমূল। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং টিম পিকে-র যুগলবন্দির স্পষ্ট বার্তা, সিএএ-এনআরসি বিরোধিতার সুর চড়ানো ছাড়াও দলীয় নেতা-কর্মীদের আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা, দায়বদ্ধতা বাড়ানো এবং অবশ্যই দলের সুপ্রিমো মমতার একটা ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ভাবমূর্তি গড়ে তোলা।
সোমবার নেতাজি ইন্ডোরের মঞ্চ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল তৃণমূলনেত্রী মমতার। তিনি তা করলেনও। উদ্বোধন করা হল, দলের নতুন কর্মসূচি ‘বাংলার গর্ব মমতা’-র। যার মাধ্যমে আগামী ৭৫ দিন রাজ্যের মানুষজনের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর কাজ করবেন ৭৫ হাজারের বেশি তৃণমূলকর্মী। ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির মাধ্যমে দলের অন্দরে যে শুদ্ধিকরণের সূচনা করেছিল টিম পিকে, তা যেন এক লপ্তে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সূচনা করা হল এই নয়া কর্মসূচির মাধ্যমে। সেই সঙ্গে দিল্লির হিংসা নিয়েও কড়া ভাষায় নরেন্দ্র মোদী সরকারকে আক্রমণ করলেন মমতা। দাবি করলেন, দিল্লির হিংসা আসলে ‘পরিকল্পিত গণহত্যা’ এবং ‘রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ওই সন্ত্রাস হয়েছে গুজরাত মডেলে’।
গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ২টি আসন থেকে ১৮টি আসনের দখল নিয়েছে বিজেপি। ওই ফলাফলের পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মানুষের সংযোগের অভাবই এর মূলত কারণ। ফলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যবাসীর সঙ্গে জনসংযোগ আরও নিবিড় করে তোলাই তৃণমূলের লক্ষ্য। নতুন এই কর্মসূচিতে ৭৫ হাজারের বেশি তৃণমূলকর্মী যুক্ত থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, মূলত জনসংযোগ বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই আজ, ৭ মার্চ থেকে আগামী ১০ মে— ৭৫ দিন ধরে চলবে এই কর্মসূচি। এর মাধ্যমে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যবাসীর সঙ্গে জনসংযোগ আরও নিবিড় করে তোলাই তৃণমূলের লক্ষ্য।
আরও পড়ুন: জন্মের শংসাপত্র পেতেও মমতার রাজ্যে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হচ্ছে!
বিধানসভা নির্বাচন পাখির চোখ হলেও, স্বাভাবিক ভাবেই পুরভোটেও এই কর্মসূচির সুফল ঘরে তুলতে চাইবে তৃণমূল। সেই ভোটের আগে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি তৃণমূলনেত্রী মমতার কড়া বার্তা, ‘‘কোনও নেতা দলের থেকে বড় নয়। দল যা বলবে, তা শুনতে হবে।’’ সেই সঙ্গে দলের নতুন-পুরনো, সব নেতাদেরই হাতে হাত মিলিয়ে কাজের কথা বলেছেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘ভাল কাজ করলে তাঁর টিকিট নিশ্চিত।’’ দলের মধ্যে থেকে নিজেদের ইচ্ছে মতো অনেকে কাজ করছেন বলেও মন্তব্য করেন মমতা। তাঁদের প্রতি মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘দল একটাই, জোড়াফুল।’’
তৃণমূল স্তরে দলকে বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি আরও বড় প্রেক্ষাপটেও নিজেকে তুলে ধরার কাজটাও সুকৌশলে সেরে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর নেপথ্যে সুকৌশলী টিম পিকে-র ‘অবদান’ রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দিল্লির হিংসার প্রসঙ্গ টেনে এনে মোদী সরকারের প্রতি তীক্ষ্ণ ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা। দিল্লি-কাণ্ড নিয়ে দেশের মধ্যে এই প্রথম কোনও রাজনীতিক এতটা তীক্ষ্ণতার সঙ্গে মোদী সরকারের সমালোচনা করলেন।
আরও পড়ুন: দিদিকে ‘বলে’ বিপদে, পুলিশের মার খেয়ে মমতারই শরণাপন্ন তরুণী
উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সাম্প্রতিক হিংসায় এখনও পর্যন্ত ৪৬ জন মারা গিয়েছেন। আহত হয়েছেন দু’শোরও বেশি মানুষ। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর সমর্থনকারী এবং বিরোধীর মধ্যে ওই সংঘর্ষের পর রাজধানীর পরিস্থিতি এখনও থমথমে। এ দিন নেতাজি ইন্ডোরে বলতে উঠে প্রথমেই দিল্লি-কাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেন মমতা। রাজধানীর ঘটনাকে ‘রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাস’ বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে যে ভাবে দিল্লির মাটিতে মানুষ হত্যা হয়েছে, আমি মনে করি, এটা একটা পরিকল্পিত গণহত্যা। পরে রং দেওয়া হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার।’’ এই ঘটনায় সরাসরি বিজেপিকে নিশানা করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এ নিয়ে বিজেপি এখনও ক্ষমা চায়নি।’’
নেতাজি ইন্ডোরে কী বললেন মমতা, দেখুন ভিডিয়ো:
বিজেপি নেতাদের উস্কানিমূলক মন্তব্যের জেরে দিল্লিতে ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন। এ দিন মমতাও সেই সুরে বলেন, ‘‘যাঁরা গোলি মারো বলছেন, তাঁরা অমানবিক, তাঁদের ভাষা দানবিক।’’ মমতার আরও দাবি, ‘‘কারা বিশ্বাসঘাতক, মানুষ তাঁদের ঠিক চিনে নেবেন।’’ একই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করার জন্য দলীয় কর্মীদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেও দলীয় কর্মীদের প্রতি মমতার অনুরোধ, ‘‘আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না।’’ দলীয় কর্মীদের সমস্ত রকমের প্ররোচনা থেকে বিরত থাকার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, দিল্লি-কাণ্ডের প্রতিবাদে আগামী বুধবার দুপুর ৩টে থেকে এক ঘণ্টা ধরে রাজ্যের ব্লকে ব্লকে ধিক্কার মিছিলের কর্মসূচি পালন করবে তৃণমূল।
(এই সংবাদটি প্রথম প্রকাশের সময় ‘বাংলার গর্ব মমতা’-র পরিবর্তে কয়েক জায়গায় ‘বাংলার মুখ মমতা’ লেখা হয়েছিল। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy