উস্তাদ রাশিদ খান (বাঁ দিকে) এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
উস্তাদ রাশিদ খান আর নেই, ‘‘কথাটা ভেবেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে’’ বললেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পিয়ারলেস হাসপাতালের সামনে আবেগপ্রবণ মুখ্যমন্ত্রী এ-ও জানালেন যে, শিল্পী রাশিদ তাঁকে মা বলে ডাকতেন।
মঙ্গলবার বিকেল সওয়া ৪টে নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পীর শারীরিক অবস্থা যে ভাল নয়, সেই খবর পেয়েই ছুটে এসেছিলেন। পরে হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে নিজে মুখে শিল্পীর মৃত্যুসংবাদ জানাতে গিয়ে মমতা বললেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না, রাশিদ আর নেই। ওঁর মিষ্টি গলাটা আর শুনতে পাব না। কথাটা বলতে গিয়ে এখনও আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।’’
মঙ্গলবার দুপুর ৩টে বেজে ৪৫ মিনিটে পিয়ারলেস হাসপাতালে প্রয়াত হন রাশিদ। সেই সময়ে প্রশাসনিক কাজে জয়নগরে ছিলেন মমতা। গঙ্গাসাগর থেকে জয়নগর হয়ে তাঁর ফেরার কথা ছিল নবান্নে। কিন্তু পথেই শিল্পী রাশিদের শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর পান মুখ্যমন্ত্রী। কোনও রকমে সেখান থেকে নবান্নে গিয়ে কাজ সামলেই ছুটে আসেন হাসপাতালে। যেখানে রাশিদের চিকিৎসা চলছিল। হাসপাতালে পৌঁছেই রাশিদের মৃত্যুসংবাদ পান।
মমতার সঙ্গে ছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে রশিদকে দেখে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে হাসপাতালের নীচে দাঁড়িয়ে রাশিদের চিকিৎসক এবং শিল্পীর স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন।
মমতা বলেন, ‘‘আমাকে কথাগুলো বলতে হচ্ছে বলতে হবে বলে। কিন্তু বলতে কষ্ট হচ্ছে। কী করব বলুন সবটাই সামলাতে হয়।’’ প্রশাসনিক দায়িত্ব কাঁধে থাকলে অনেক পরিস্থিতিতেই আবেগ প্রকাশ করা যায় না, সে কথাই বলতে চাইছিলেন মমতা। যদিও একটু পরেই তাঁকে আবেগপ্রবণ শোনায়। মমতা বলেন, ‘‘রাশিদ ছিল আমার ভাইয়ের মতো। খুব ভাল সম্পর্ক ছিল আমাদের। বাংলা উর্দু মিশিয়ে মিষ্টি করে কথা বলত। ও আমাকে বলত, ‘তুমি আমার মা আছে’।’’
বাংলার বহু সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন রাশিদ। বাংলার সরকার তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মানও দিয়েছিল। মমতা নিজে গান শুনতে ভালবাসেন। বহু অনুষ্ঠানে ঘনিষ্ঠ মহলে রাশিদের গানের প্রশংসাও করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। সেই রাশিদের মৃত্যুসংবাদ জানাতে এসে স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসে পুরনো কথা। মমতা বলেন, ‘‘ওঁকে উস্তাদ বলা হয়। রবীন্দ্রসঙ্গীতও দারুণ গাইত। সমস্ত ভাষায় দখল ছিল। সবার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল। মাত্র ৫৫ বছর বয়স। আমি মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম ও ফিরে আসুক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওঁকে ফেরাতে পারলাম না। রশিদের গান আর আমরা শুনতে পাব না। ভেবেই আমার দুঃখ লাগছে। এক জন অসাধারণ মানুষ ছিল। ওর মৃত্যু আমাদের বড় ক্ষতি। দেশের ক্ষতি।’’
হাসপাতালের সামনে মমতার পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন শিল্পীর স্ত্রী, পুত্র, কন্যা। তাঁদের কাঁধে হাত রেখে মমতা বলেন, ‘‘রাশিদ চলে গিয়েছে, ওরা ভাবছে ওরা অভিভাবকহীন হয়ে গিয়েছে। অভিভাবকহীন হয়নি। আমি ওঁদের অভিভাবক হয়ে থাকব। ছেলেকে খুব ভাল শিল্পী হিসাবে তৈরি করে দিয়ে গিয়েছে রাশিদ। ওকে এগিয়ে দিতে হবে। আমি আর কী বলব, আমার এক জন সুহৃদ হারিয়ে গেল।’’
শিল্পীকে সম্মান জানাতে রাজ্য সরকার কী কী পরিকল্পনা করেছে, সে কথাও জানান মমতা। বলেন, ‘‘আমি রাশিদের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। ওঁরা বলেছেন, ‘দিদি আপনি যা করবেন তা-ই হবে’। ওঁকে উস্তাদ বলে সম্মান করা হয়। আমরা সমস্ত সম্মাননীয় ব্যক্তিদের প্রয়াণের পর রবীন্দ্র সদনে নিয়ে আসি। উস্তাদ রাশিদকেও সম্মান জানাতে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাঁর দেহ রবীন্দ্র সদনে শায়িত রাখা হবে। যাতে শিল্পীর অনুরাগীরা তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে পারেন। তার পরে ঠিক ১টার সময় প্রয়াত শিল্পীকে ‘রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান’ গান স্যালুট দেবে কলকাতা পুলিশ। সেই অনুষ্ঠানও হবে সদনেই।’’ মমতা জানিয়েছেন, এর পর সদন থেকে শিল্পীর দেহ নিয়ে মন্ত্রী ফিরহাদ এবং অরূপ আসবেন তাঁর নাকতলার বাড়িতে। সেখান থেকে তাঁর দেহ শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে টালিগঞ্জের কবরস্থানে। তার আগে মঙ্গলবার রাতে পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা হবে শিল্পীর দেহ। সকাল ৯টায় সেখান থেকে তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হবে রবীন্দ্র সদনে।
এক্স হ্যান্ডলে শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অভিষেক লেখেন, ‘‘ভারতীয় ধ্রুপদ সঙ্গীতে উস্তাদ রাশিদ খানের অসামান্য অবদান আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে’’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy