মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলা আবাস যোজনার সমীক্ষায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের হস্তক্ষেপ নবান্ন যে সুনজরে দেখছে না, বৃহস্পতিবার তা স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শাসকদলের মন্ত্রী বা জনপ্রতিনিধি তো বটেই কোনও নেতার নাক গলানোও তিনি যে পছন্দ করছেন না, তা ঠারেঠোরে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। নবান্ন সূত্রে খবর, এ দিনের মন্ত্রিসভা বৈঠকে সরকারি জমি বেহাত হওয়া নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ প্রশাসনিক শীর্ষকর্তাদের দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, এ দিনই বিভিন্ন দফতরে ১০০ জনের নিয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
নবান্নের খবর, সাংসদ-বিধায়ক তো বটেই স্থানীয় পুরসভা-পঞ্চয়েত সমিতি এমনকি জেলা পরিষদের কোনও তৃণমূল নেতাও যেন এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা না করেন, তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদের অবশ্য দাবি, এ সবই লোক দেখানো সতর্কতা। একের পর এক দুর্নীতির ঘটনায় সরকারের মুখ পুড়ছে। এই প্রেক্ষিতে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় এই ‘মন ভোলানো’ নির্দেশ। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা জানান, আবাস যোজনার সমীক্ষায় তৃণমূলের বিভিন্ন বিধায়ক থেকে জেলার মেজো-সেজো নেতাদের নাম জড়ানোর অভিযোগ পাহাড় ছুঁয়েছে ইতিমধ্যেই। দক্ষিণ এবং উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় সমীক্ষার বদলে শাসকদলের নেতাদের আত্মীয়স্বজন কিংবা অনুগামীদের নামই তালিকায় তোলা দস্তুর হয়ে উঠেছিল। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনগুলির কাছে অভিযোগ জানিয়েও যে ফল মেলেনি তাও সুবিদিত। তার খেসারতও গুনতে হয়েছে, বন্ধ হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় অনুদান। প্রান্তিক মানুষের মন পেতে তাই নিজের কোষাগার থেকেই টাকা গুনতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে।
সূত্রের দাবি, সরকারি জমি কেন বেহাত হচ্ছে, এ দিনের বৈঠকে সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন মমতা। বৈঠকে থাকা প্রশাসনিক কর্তাদের উদ্দেশে মমতার বার্তা, এমন ঘটনাগুলি চিহ্নিত করে আইনি পদক্ষেপ করতে হবে। প্রসঙ্গত, এর আগেও একাধিক বার সরকারি জমি বেদখল হওয়া নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মমতা। জানা গিয়েছে, স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্মবন্ধু-সহ স্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থ দফতরে ১০০ জনের নিয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নাবার্ড ও রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে রাজ্য সমবায়, কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্কের ১৫০০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার প্রস্তাবে সিলমোহর পড়েছে। আবার দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের অধীন ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরির ছাড়পত্রও দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রসঙ্গত, বাংলা আবাস যোজনার শেষ সমীক্ষা হয়েছিল ২০২২ সালে। তৈরি হয়েছিল উপভোক্তাদের নামের তালিকা। যে তালিকায় নাম ছিল প্রায় ১১ লক্ষ আবেদনকারীর। পরে যোগ হয়েছিল আরও কিছু আবেদনকারীর নাম। সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের আবাস গড়ার অনুদান দেওয়ার তালিকা। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে উপভোক্তাদের সেই দীর্ঘ তালিকার যাচাই পর্ব শেষ হওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল
রাজ্য সরকার।
এ দিকে উপনির্বাচনের মুখে, নির্বাচনী বিধি মেনে পাঁচটি জেলা বাদ দিয়েই (যে জেলায় উপনির্বাচন আসন্ন) চলেছে যাচাইয়ের কাজ। বাড়ি ঘুরে সরকারি সমীক্ষকেরা দেখছেন আবেদনকারী আদৌ যথাযথ উপভোক্তা কিনা। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় ২০.২ শতাংশই আবেদনকারী ‘অযোগ্য’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। সমীক্ষকদের দাবি, বেশ কিছু গ্রামে তাঁদের অভিজ্ঞতা বলছে— দোতলা পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তারা আবাস যোজনার জন্য হাত পেতেছে। এবং খোঁজ নিয়ে তাঁরা দেখেছেন, সেই ‘অযোগ্য’ উপভোক্তার নামটি সুপারিশ করার নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় কোনও প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘এর ফলে মুখ পুড়ছে সরকারের।’’ সেই ‘পোড়া মুখ’ সাফ করতেই এ বার, দলীয় নেতাদের আবাস-সমীক্ষা থেকে দূরে রাখতে চাইছে সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy