হাসপাতাল থেকে গাড়িতে চড়ে বেরিয়ে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থা স্থিতিশীল। বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে কালীঘাটের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সঙ্গে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী ভাল আছেন। তাঁর মাথায় চারটি সেলাই পড়েছে।
প্রথমে হাসপাতালের কেবিন থেকে বার করে হুইল চেয়ারে মমতাকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম লাগোয়া বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেসের ওপিডি বিল্ডিংয়ে। সেখানে সিটি স্ক্যান-সহ একাধিক পরীক্ষা করা হয় তাঁর। কিছু ক্ষণ পর সেখান থেকে তাঁকে বার করে গাড়িতে তোলা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় কালীঘাটের বাড়িতে। মুখ্যমন্ত্রীর মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, চিকিৎসকেরা মুখ্যমন্ত্রীকে রাতে হাসপাতালে থেকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি থাকতে চাননি। তাই তাঁকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল থেকে বার করার সময়ে হুইল চেয়ারে মুখ্যমন্ত্রীর মাথা সামনের দিকে কিছুটা ঝোঁকানো ছিল। তিনি কখনও চোখ বন্ধ করছিলেন, কখনও তাকাচ্ছিলেন। প্রায় আচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলেন তিনি। তাঁকে ঘিরে ছিলেন চিকিৎসক এবং হাসপাতালের কর্মীরা। ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
গাড়ির সামনের আসনেই বসেন মমতা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়। পিছনের আসনে বসেন অভিষেক। গাড়ি থেকে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করতে দেখা যায় তাঁকে। চিকিৎসকদের সঙ্গে তিনি কথাও বলেছেন বলে খবর। অর্থাৎ, আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থা স্থিতিশীল।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে অভিষেক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর মাথায় চারটি সেলাই পড়েছে। এখন তিনি ভাল আছেন। বাংলার মানুষের আশীর্বাদে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।’’ পরে হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, মুখ্যমন্ত্রীর কপালে তিনটি এবং নাকে একটি সেলাই পড়েছে।
মমতাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেকের মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা। এসএসকেএমে যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। তবে তাঁর পৌঁছনোর কিছু আগেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান মমতা।
তৃণমূল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কালীঘাটে নিজের বাসভবনে হাঁটতে গিয়ে পড়ে যান মমতা। তাঁর কপালে চোট লাগে। কপাল ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। তৃণমূলের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে মুখ্যমন্ত্রীর রক্তাক্ত ছবি পোস্ট করা হয়। এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁকে নিজের গাড়িতেই নিয়ে আসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূলের পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, মমতার কপালের ঠিক মাঝখানে কেটে গিয়েছে। সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে নাকের পাশ দিয়ে ঠোঁট ছুঁয়ে গলা পর্যন্ত নেমেছে।
উডবার্ন ওয়ার্ডের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনে তাঁকে প্রাথমিক ভাবে রাখা হয়। সেখান থেকে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয় ওপিডি বিল্ডিংয়ের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে।
মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে এক্সে পোস্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি লেখেন, ‘‘আমি মমতা দিদির দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন।’’ রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও পোস্ট করেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর জখম হওয়ার খবর পাওয়া মাত্রই দলীয় বৈঠক থামিয়ে দেন ঘাটালের বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ দেব। এর পরেই ঘাটালের বিশালাক্ষী মন্দিরে পুজো দিতে যান তিনি।
তৃণমূল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যখন এই ঘটনা ঘটে, তখন মমতার কালীঘাটের বাড়িতেই ছিলেন অভিষেক। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে সভা করেন। সেখান থেকে কলকাতা ফিরেই তিনি সোজা মমতার কালীঘাটের বাড়িতে যান। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেই গিয়েছিলেন তিনি। অভিষেক যখন মমতার বাড়িতে ছিলেন, সেই সময়েই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। অভিষেক ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কপালে গভীর ক্ষত হয়েছে।
কী করে এই ঘটনা ঘটল, তা এখনই স্পষ্ট নয়। তবে হাঁটার সময় মমতা পড়ে গিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। একটি সূত্রের দাবি, ঘরের শোকেসের কোনায় আঘাত লেগে এই ঘটনা ঘটতে পারে। অন্য একটি সূত্র বলছে, বাড়িতে মাঝেমাঝেই ট্রেডমিলে হাঁটেন মমতা। বৃহস্পতিবারও তা করতে গিয়েই তিনি পড়ে গিয়ে থাকতে পারেন। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে। বাড়ি চত্বরে হাঁটার সময় তিনি কারও সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছেন কি না বা তাঁকে কেউ ধাক্কা দিয়েছেন কি না, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন মমতার ঘনিষ্ঠ মহল।
তবে বৃহস্পতিবার রাতে এসএসকেএএমের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মুখ্যমন্ত্রী পড়ে গিয়েছেন পিছন থেকে ধাক্কা লাগার কারণেই। কি ভাবে ধাক্কা লেগেছে তা যদিও স্পষ্ট করেননি তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy