সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে আসছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার। স্নেহাশিস ভট্টাচার্য ও সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।
তাপস পাল গ্রেফতার হওয়ার পরেও কোথাও যেন একটা সীমারেখা টেনে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনেই সিবিআইয়ের হাতে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতার হওয়াটা যে কতটা অর্থবহ, সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্পষ্ট। সুদীপ প্রবীণ সাংসদ শুধু নন, তৃণমূলের লোকসভার নেতা। রেল-সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানও বটে। ফলে সুদীপ গ্রেফতারের পর মোদী-বিরোধী আক্রমণে এ বার আর কোনও লক্ষ্মণরেখা রাখলেন না মমতা।
প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য এ দিন দুপুরে মেদিনীপুরে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সুদীপ গ্রেফতারের আগাম ইঙ্গিত পেয়ে সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘মোদীবাবু আর কারও বুকের পাটা না থাকলেও আমার আছে। (আপনাকে) ওপেন চ্যালেঞ্জ করছি। আসুন আমাদের সবাইকে গ্রেফতার করুন।’’ পরে নবান্নে ফিরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আবার ঝাঁঝালো আক্রমণ শানান তিনি। বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী এক জন দাঙ্গাবাজ লোক। বিরোধীদের সঙ্গে যখন পেরে ওঠে না, তখন ওদের ভয় দেখায়। দুর্নীতির জন্য আগে মোদী-অমিত শাহ গ্রেফতার হওয়া উচিত।’’ পাশাপাশি এ দিনই গোটা দলকে আন্দোলনে নেমে পড়ার নির্দেশ দেন মমতা। দাঁড়াতে বলেন সুদীপের পাশে। এর পর প্রথমে তৃণমূল ভবনে বৈঠকে বসেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, মুকুল রায়রা। পরে তাঁরা সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে গিয়ে সুদীপের সঙ্গে দেখা করেন। ঠিক হয়েছে যে, সুদীপকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আজ, বুধবার, সংসদ ভবনে তৃণমূল সংসদীয় দলের দফতরে দলীয় সাংসদরা বৈঠক করবেন। সূত্রের মতে, তার পর ধর্নায় বসতে পারেন তাঁরা। এমনকী, তা হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে! এই পরিস্থিতিতে পাল্টা আক্রমণ করেছে বিজেপি-ও। মঙ্গলবার কলকাতায় ছিলেন কেন্দ্রীয় কয়লা ও বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। তিনি বলেন, ‘‘যা হচ্ছে, আইন মেনেই হচ্ছে। তদন্তকারী সংস্থার কাজে আমাদের সরকার হস্তক্ষেপ করে না।’’ আর দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের মন্তব্য, ‘‘এক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হতেই হাঁটুতে হাঁটুতে এমন ঠোকাঠুকি লাগল! অন্য বন্দ্যোপাধ্যায় যখন গ্রেফতার হবেন, তখন কী করবে?’’
এই আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ দেখে রাজনীতিকদের ধারণা, মোদী-মমতা সংঘাত এ বার পুরোমাত্রায় শুরু হয়ে গেল। এবং এখন এই সম্ভাবনাও তৈরি হল যে, এর পর তৃণমূলের আরও রাঘব বোয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রয়োজনে গ্রেফতারের পথে হাঁটতে পারে সিবিআই বা কেন্দ্রীয় বিভিন্ন তদন্ত এজেন্সি। তা ছাড়া, বিজেপি নেতাদের একাংশের আশা, লোকসভার নেতাই গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার ফলে সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে ধাক্কা খাবে তৃণমূল। এমনকী, কেন্দ্রে মোদী-বিরোধী ঐক্যেও চোট লাগতে পারে। যদিও এ দিন খোলাখুলিই মমতার পাশে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস।
এখন প্রশ্ন হল, এমনটা হওয়ার আশঙ্কা কি তৃণমূলের ছিল না? জবাবে মমতা-ঘনিষ্ঠ এক শীর্ষ নেতা বলেন, বিধানসভা ভোটের পর থেকে বিভিন্ন সভায় দলনেত্রীর বক্তৃতা শুনলেই তার উত্তর মিলবে। বস্তুত দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন মমতা। বিভিন্ন প্রসঙ্গে বার বার বলছিলেন, কেন্দ্রের সমালোচনা করলেই, ওরা সিবিআই বা ইডিকে পিছনে লাগিয়ে দেয়। নোট বাতিলের ঘটনা তাঁর সেই আক্রমণে অক্সিজেন জোগায়।
তৃণমূলের ওই শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘আসলে এটা যে ভবিতব্য, তা মমতাও জানতেন। এমনকী তাঁর কাছে হয়তো এটাও পরিষ্কার যে, বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস জোট না হলে, বিজেপি-কে রাজনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দিতে সিবিআই তখনই তৎপর হয়ে উঠত। এবং যা হচ্ছে, তা আগামী লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই হচ্ছে। আর তাই সিবিআই তৎপরতার নেপথ্যে যে মোদী-অমিত শাহের প্রতিহিংসার রাজনীতি রয়েছে, তা মানুষের মনে গেঁথে দিতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কথায়, ‘‘পরিস্থিতি এখন যা দাঁড়িয়েছে তাতে বিজেপি-র বিরুদ্ধে ‘অল আউট’ যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। ফলে মমতা সেটাই করছেন।’’ সেই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করতে চাইছেন যে, সিবিআই তদন্তের ফলে বিরোধীরা যেন সুবিধা না পায়। সেই কারণেই এ দিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেন, ‘‘বাংলায় চিট ফান্ডের রমরমা বাম আমলেই শুরু হয়েছিল। এমনকী বিজেপি নেতাদের সঙ্গেও চিট ফান্ড সংস্থাগুলির ব্যাপক যোগ ছিল। কিন্তু আমরা আসার পর কোনও চিট ফান্ড সংস্থা তৈরি করতে দিইনি।’’ চিট ফান্ড কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেবের মতো বাম নেতা বা বাবুল সুপ্রিয়র মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তোলেন মমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy