ফাইল চিত্র।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে বাধল নোবেল পদক চুরি নিয়ে চাপান-উতোর। সোমবার রাজ্যের শাসক দলের এক বিধায়ক থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত যোগ দিলেন তাতে। জড়ালেন বিরোধীরাও।
কলকাতার রবীন্দ্র সদন চত্বরে পঁচিশে বৈশাখের সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে নোবেল চুরি রহস্যের তদন্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআইকে বেঁধেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এখনও আমার দুঃখ হয়, তাঁর (রবীন্দ্রনাথের) নোবেল প্রাইজ (পদক) আজও উদ্ধার হয়নি। দীর্ঘদিন হয়ে গিয়েছে। এটা বামফ্রন্ট আমলের ঘটনা। তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছিল সিবিআই-কে। সিবিআই তদন্তটা সম্ভবত ক্লোজ করে দিয়েছে। সমস্ত এভিডেন্স (তথ্যপ্রমাণ) আমি জানি না আদৌ আছে কি না! কিন্তু এটা আমাদের বড় অসম্মান। বড় গায়ে লাগে। এত বড় একটা জিনিস সর্ব প্রথম আমরা পেলাম। আর আমাদের কাছ থেকে সেটা কেউ নিয়ে নিল! কেউ তুলে নিল! কেউ হারিয়ে দিল! ”
২০০৪ সালের ২৫ মার্চ শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনের সংগ্রহশালা থেকে রবীন্দ্রনাথের পাওয়া নোবেল পদক চুরি যায়। তদন্তভার নেয় সিবিআই। ২০০৭-এর অগস্ট নাগাদ প্রাথমিক ভাবে তদন্ত থেকে সরে দাঁড়ায় তারা। আবার নতুন সূত্র মিলেছে দাবি করে বছর খানেকের মাথায় আদালতে আবার তদন্তের আবেদন জানায়। পরের অগস্টে ফের তদন্ত বন্ধের আবেদন করা হয়। ২০১০-এর ৫ অগস্ট আদালত সিবিআইকে তদন্ত বন্ধ রাখার অনুমতি দেয়। তবে সিবিআই আদালতকে জানায়, নতুন সূত্র মিললে ফের তদন্ত শুরু হতে পারে।
ঘটনাচক্রে, এ দিন সকালে পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে ব্লক তৃণমূল আয়োজিত অনুষ্ঠানে তৃণমূল বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীও নোবেল চুরির তদন্ত নিয়ে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ‘ব্যর্থতা’র অভিযোগ তোলেন। বলেন, ‘‘যার জন্য বিজেপি সিবিআই, সিবিআই করে লাফাচ্ছে, সেই সিবিআই নোবেলটা এখনও বার করতে পারেনি। আজ সেই নোবেল বার করার জন্য বাংলার পুলিশকে লাগানো হচ্ছে। সিবিআইকে বলা হয়েছে, আপনারা সমস্ত তথ্য দিন, পুলিশ সেটা বার করবে।’’ যদিও জেলার পুলিশ-কর্তারা জানান, রাজ্যের পুলিশ নোবেল-চুরির তদন্ত করছে, এমনটা তাঁদের জানা নেই।’’ বিধায়কের সংযোজন: ‘‘রবীন্দ্রনাথকে দেরিতে নোবেল দিয়ে অপমান করা হয়েছে বলেই বাংলার ছেলেরা তা চুরি করে নিয়েছে।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘বামফ্রন্ট আমলে নোবেল চুরি হয়েছিল, সিবিআই তদন্তে ব্যর্থ হয়েছে— এই কথাগুলোর মধ্যে একটা রাজনৈতিক ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা আছে
বলেই মনে হয়। সিবিআইয়ের কাছ থেকে নিয়ে রাজ্যের হাতেই তদন্তভার দেওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রী আগেই সেই দাবি করেছেন। তার পরে এ দিনও উনি যা বলছেন, ওঁর বিধায়ক যা বলছেন, সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, তদন্তের দায়িত্ব রাজ্যেরই নেওয়া উচিত। তৃণমূলই মনে হচ্ছে জানে নোবেলের কী হয়েছে!’’ একই সুরে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘নোবেল উদ্ধারে তদন্তকারীদের উচিত তৃণমূল বিধায়কের কাছে যাওয়া। কারণ, উনিই মন্তব্য করেছেন, কারা চুরি করেছে।’’
যদিও কারা নোবেল পদক চুরি করেছে, তাঁর মতে রবীন্দ্রনাথের কবে নোবেল পাওয়া উচিত ছিল— সে সব নিয়ে পরে মন্তব্য করতে চাননি মানগোবিন্দ। বলেন, ‘‘মুখ ফস্কে বেরিয়ে গিয়েছে। আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’’
বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিংহ দাবি করেন, ‘‘তৃণমূলের মুখপত্রে লেখা হয়েছে, নোবেল কোথায় গেল? সিবিআই যাতে নোবেল খুঁজে না পায়, তার জন্য সব অসহযোগিতা তৃণমূলের সরকার করেছে। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে রাজ্য সরকার বাধা দিয়েছে। এখন জিজ্ঞাসা করছে, নোবেল কোথায়? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমার আবেদন, নোবেল খুঁজে দিন! উনি তো বলেছিলেন, কেউ খুঁজে না পেলে, উনি খুঁজে দেবেন।‘’’ রাহুলবাবুর অভিযোগ, ‘‘বাংলার সব চুরির সঙ্গে তৃণমূল জড়িত। নোবেল চুরির সঙ্গেও তৃণমূল জড়িত।’’
ভাতারের বিধায়কের মন্তব্য প্রসঙ্গে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘বিধায়ক যা বলেছেন, দল তা সমর্থন করে না। উনি কী বলতে চেয়েছেন, উনিই জানেন! বক্তৃতা করার সময়ে কিছু একটা বলতে গিয়ে গন্ডগোল হয়ে গিয়েছে। উনি নিজেও বোধ হয় সেটা বুঝতে পেরেছেন।’’ রাহুল সিংহের অভিযোগ উড়িয়ে কুণাল বলেন, ‘‘উনি এত বার হেরেছেন। দলে কোণঠাসা হয়ে গিয়েছেন। তাই ভুলভাল বলছেন!’’
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, ‘‘একটা নোবেল প্রাইজ চলে গেলে, রবীন্দ্রনাথকে ভোলা যায় না। নোবেল প্রাইজটা উনি আমাদের হৃদয়ে গেঁথে দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy