Advertisement
E-Paper

Mamata Banerjee: জোড়া জয়ে প্রত্যয়ী জোড়াফুল নেত্রী, ’২৪-এর প্রশ্ন শুনে বললেন, ‘আপনারাই বুঝুন’

এ বার কি তবে ’২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়বে তৃণমূল? শনিবার এই প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৩৭
Share
Save

আরও দু’টি উপনির্বাচনে নিজেদের অপ্রতিরোধ্য প্রমাণ করল তৃণমূল কংগ্রেস।

এই দু’টির মধ্যে আসানসোল লোকসভায় এটাই তাদের প্রথম জয়। এখানে তাদের জয়ের ব্যবধান প্রমাণ করে, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের তুলনায় প্রাপ্ত ভোট দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়েছে তৃণমূল। বালিগঞ্জ বিধানসভায় বিজেপি যা ভোট পেয়েছে, তাতে তাদের জামানত থাকার কথা নয়। কংগ্রেসের অবস্থাও দুই আসনে সঙ্গিন। তবে বালিগঞ্জে ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে সিপিএম। যা রাজনৈতিক মহলের নজরে অর্থবহ। যদিও তৃণমূলের অবস্থান তাতে অপরিবর্তিতই থাকছে।

এ বার কি তবে ’২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়বে তৃণমূল? শনিবার ফল প্রকাশের পরে এই প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘আপনারাই বুঝে নিন।’’ তাঁর আরও কথা, ‘‘আবার প্রমাণ হল, শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা তৃণমূল কংগ্রেসই বাংলার ভরসা। ভারতেরও ভরসা। এই ভালবাসা, আশীর্বাদ আমাদের আরও ভাল কাজে অনুপ্রাণিত করবে।’’ ফল জানার পরে মমতা এ দিন কালীঘাটে গিয়ে পুজোও দেন। এই জয়কে তিনি নববর্ষে জনগণের দেওয়া উপহার বলে বর্ণনা করেছেন। এই জোড়া জয়কে ‘বিদ্বেষ ও দমনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন,

‘‘এই আশীর্বাদ ও ভালবাসার পাওয়ার পরে সুশাসনই আমাদের অগ্রাধিকার।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ দিন বলেন, ‘‘রাজ্যে গত বছর ২ মে-র পর থেকে যে ভাবে সন্ত্রাস হয়েছে, তাতে উপনির্বাচনের এই ফল প্রত্যাশিতই ছিল।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘সাধারণত উপনির্বাচনে শাসক দলই জেতে। তার উপরে টানা সন্ত্রাসের পরিবেশের জন্য বিজেপি কর্মীরা যেমন নামতে পারেননি, তেমন ভোটারেরাও ভোট দিতে যেতে পারেননি।’’ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য দলের পরাজয় মেনে নিয়ে বলেন, ‘‘এতটা তলানিতে নামবে আমার ধারণা ছিল না। সাংগঠনিক কাঠামো, রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।’’

অন্য দিকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, মতে, ‘‘মানুষের সমর্থনে লড়াই করে বোঝানো গিয়েছে, এখানে বিজেপি কোনও বিকল্প নয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘প্রলোভন ছিল, হুমকি ছিল। প্রশাসনিক চাপও ছিল। তবে আমাদেরও কিছু ত্রুটি ছিল।’’

পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, বামের যে ভোট ‘রাম’-এর ঘরে গিয়েছিল, তা ফিরে আসা বালিগঞ্জে সিপিএমের ভোট বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। পাশাপাশি তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে বাম ভাগ বসিয়েছে, এমন ইঙ্গিতও ফলের প্রাথমিক পর্যালোচনা থেকে মিলছে। বিশেষ করে বালিগঞ্জে এই প্রবণতা চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। তার আর একটি লক্ষণীয় দৃষ্টান্ত হল, ৬৪ ও ৬৫ নম্বর ওয়ার্ড দু’টিতে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে সিপিএমের এগিয়ে আসা। সদ্য হওয়া পুরনির্বাচনে এই দু’টি ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ১৮ ও ২২ হাজার ভোটে। এ বার ব্যবধান অল্প হলেও তৃণমূল পিছিয়ে। ৬৪ নম্বর সংখ্যালঘু অধ্যুষিত হলেও ৬৫ নম্বর মিশ্র এলাকা।

আসানসোল এবং বালিগঞ্জ দু’টি আসনেই প্রার্থী বাছাইয়ে কিছুটা চমক দিয়েছিলেন মমতা। আসানসোলে শত্রুঘ্ন সিন্‌হাকে নিয়ে আসা তার একটি। সেখানে বিজেপির টিকিটে জিতে দু’বারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় সাংসদ পদ ও দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে সেখানে প্রার্থী নিয়ে আগ্রহ ছিল। বিশেষ করে ঝাড়খণ্ড-বিহার লাগোয়া আসানসোল কেন্দ্রে হিন্দিভাষীদের বড় প্রভাব কাজ করে। ‘বিহারিবাবু’ শত্রুঘ্ন সেখানে ছিলেন মমতার অনেকটা ‘তুরুপের তাস।’ আসানসোলে তৃণমূলের ভিতরে নিজস্ব টানাপড়েনও বিস্তর। সে দিক থেকেও শত্রুঘ্নের প্রার্থী হওয়া তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে ছিল কুশলী সিদ্ধান্ত।

যদিও বিজেপি আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক এবং সেখানকার মেয়ে অগ্নিমিত্রা পালকে প্রার্থী করে পাল্টা চাল চেলেছিল। ভোটের ফল দেখিয়ে দিল, তার কিছুই কাজে আসেনি। বরং ২০১৯-এর ভোটে লাখ দুয়েকের ব্যবধান অতিক্রম করার পরেও এ বার তিন লাখের ব্যবধানে জিতলেন শত্রুঘ্ন। যার অর্থ তৃণমূল এখানে লাখ পাঁচেক ভোট বাড়াল। এই অঙ্ক প্রমাণ করে ভাষা, সম্প্রদায় স্থানীয়, ‘বহিরাগত’ ইত্যাদি কোনও কিছুই তৃণমূলের অগ্রগতি আটকাতে পারেনি। ফর বেরনোর পর শত্রুঘ্ন বলেন, ‘‘এই জয় মমতার নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থা।’’ আর অগ্নিমিত্রার বক্তব্য, ‘‘মানুষের রায় মেনে নিচ্ছি। কারণ বিশ্লেষণ করা হবে।’’

আসানসোলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আবার তৃণমূলের এই বিপুল অগ্রগতির প্রেক্ষিতে মন্ত্রী মলয় ঘটকের ভূমিকা সামনে আসছে। তৃণমূলের ভিতরের খবর, মলয়ের অবস্থান এ বার পার্টি নেতৃত্বের চোখে ‘উজ্জ্বলতর’ হতে পারে। মন্ত্রী হিসেবে মমতার ঘনিষ্ঠ। আবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ও যোগাযোগ খুবই মসৃণ। খনি এলাকার নিজস্ব রাজনৈতিক সমীকরণে মলয়ের গুরুত্ব আরও বাড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

বাবুল যে বালিগঞ্জে প্রার্থী হতে পারেন তা আলোচনায় ছিল। তবে নাম ঘোষণার পরেই তাঁকে ঘিরে বিবিধ বিতর্ক তৈরি হয়েছে। উঠেছে নানা অভিযোগ। যা মূলত বিজেপিতে থাকাকালীন তাঁর মুখে তৃণমূলনেত্রীর সমালোচনা সংক্রান্ত। তা ছাড়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বাবুলের অতীতের কিছু কথা বিরোধীদের প্রচারে উঠে এসেছিল।

এই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট প্রায় অর্ধেক। যাঁর মৃত্যুতে এই উপনির্বাচন তৃণমূলের প্রবীণ মন্ত্রী সেই সুব্রত মুখোপাধ্যায় সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগই পেয়ে এসেছেন। বাবুলের ক্ষেত্রে এ বার তেমনটা না ঘটলেও এখানে যা ভোট পড়েছে তার অর্ধেকই পেয়েছেন তিনি। এমনিতেই বালিগঞ্জে ভোট পড়েছিল মাত্র ৪১ শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী মোট বৈধ ভোটের ছয় ভাগের এক ভাগ না পেলে জামানাত জব্দ হয়। সে দিক থেকে বিজেপির কেয়া ঘোষ এবং কংগ্রেসের কামারুজ্জামান চৌধুরীর জামানত থাকার কথা নয়। যদিও সরকারি ভাবে নির্বাচন কমিশন শনিবার রাত পর্যন্ত তা বলেনি।

জয়ের পরে বাবুল বলেন, ‘‘আমি বরাবরই কাজ করতে চেয়েছি। মমতাদি আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। অভিষেক-সহ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সাহায্য করেছেন। তার ফলেই এই জয়।’’ দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসে নজর কেড়েছেন সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম। তিনি প্রয়াত সিপিএম নেতা হাসিম আবদুল হালিমের পুত্রবধু এবং অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের ভাইঝি। সায়রা বলেন, ‘‘রাজ্যে তৃণমূলের বিরোধী যে বিজেপি, এই রকম একটা ধারণা তৈরি করা হয়েছিল। বালিগঞ্জে আমরা তা ভেঙে দিয়েছি।’’

TMC by election WB Politics Mamata Banerjee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।