মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার রেড রোডে। ছবি: পিটিআই।
ইদের দিন সকালে কলকাতার রেড রোডে নমাজের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন রাজ্যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তিনি মানবেন না। মঞ্চ থেকে তাঁর ভোট-বার্তা, “বাংলায় আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছি। একটা ভোটও অন্য কাউকে দেবেন না।” বৃহস্পতিবার রেড রোডে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মঞ্চে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার বালুরঘাটে জনসভা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, সিএএ নিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন মমতা। বলেছিলেন, ‘‘হাতজোড় করে বাংলার জনতাকে বলতে চাই, মমতা দিদি বাংলার লোকেদের বোকা বানাচ্ছেন। আমি বলতে চাই, ভয় না পেয়ে যত শরণার্থী এসেছেন, তাঁরা যেন নাগরিকত্বের আবেদন করেন। কারও নাম বাদ যাবে না।’’ মনে করা হচ্ছে বৃহস্পতিবার রেড রোডের মঞ্চ থেকে শাহের আক্রমণের জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বক্তব্যের শুরুতেই ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান মমতা। বলেন, “আপনারা এককাট্টা থাকলে কেউ আলাদা করতে পারবে না।” প্রথমে বিজেপির নাম না করেই তিনি বলেন, “অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি) আনছে। আমরা ঘৃণাভাষণ চাই না, এনআরসি চাই না, সিএএ চাই না। আমাদের লক্ষ্য সর্বধর্ম সমন্বয়।” সিএএ প্রসঙ্গ তুলে বিজেপির উদ্দেশে মমতার প্রশ্ন, “আমরা নাগরিক না হলে কাদের ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন?”
তার পরেই ফের কেন্দ্রীয় এজেন্সি নিয়ে বিজেপিকে তোপ দাগেন মমতা। ভূপতিনগরের ঘটনার আবহেই কেন্দ্রের শাসকদলকে কটাক্ষ করে বলেন, “চকোলেট বোমা ফাটলেও এনআইএ পাঠিয়ে দিচ্ছে। সবাইকে ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখাচ্ছে। এজেন্সিকে ভয় পাই না।” বিজেপি গোটা দেশকে জেলখানা বানিয়ে দিচ্ছে বলেও আক্রমণ শানান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। মৃত্যু আমাকে ভয় পায়। কেউ কেউ চায় ভোটে সবাইকে ভয় দেখাতে। সবাইকে এখন এনআইএ, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স, ইডির হাতে ধরাতে চায়। আমি বলি, এর থেকে তো ভাল একটা জেলখানা বানিয়ে দিন। সবাইকে ভরে দিন। কিন্তু দেশের ১৩০ কোটি মানুষ, সবাইকে আপনি জেলে ভরতে পারবেন? আমরা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো লড়ি।’’
বক্তব্যের শেষ দিকে অবশ্য সরাসরি বিজেপির নাম করেই তাদের নিশানা করেন মমতা। বলেন, “বাংলায় আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছি। দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোট কী হবে, বুঝে নেব।” তার পরেই মমতা বলেন, “বাংলায় একটা ভোটও অন্য কাউকে দেবেন না।”
লোকসভায় এনডিএ-র ৪০০ আসন পাওয়ার দাবি নিয়েও ফের কটাক্ষ করেন মমতা। বলেন, “আগে তো ২০০ আসন পেরোক।” একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, ভোটের আগে তৃণমূলের ছেলেদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, কিন্তু বিজেপির লোকেরা দোষ করলেও আদালতে জামিন পেয়ে যাচ্ছে।
এর পর মমতা মাইক তুলে দেন অভিষেকের হাতে। অভিষেক বলেন, ‘‘দিদি যা বলেছেন, তার পর বেশি কথা বলা যায় না। তবু, তিনি যখন বলতে বলেছেন, আমি বলছি। সবাই খুশির ইদে আনন্দ করুন। মনে রাখবেন, যে জল আমরা খাই, তা ভাগ হয় না। যে বাতাসে আমরা নিঃশ্বাস নিই, তা-ও ভাগ হয় না। আমাদের সকলের গায়ে যে রক্ত বইছে, তার রং লাল। কেউ কেউ এই সব কিছুর মধ্যে বিভাজন করতে চাইবে। কিন্তু আপনারা সবাই মিলে তা রুখে দেবেন। বাংলার ঐতিহ্য এই একতা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy