মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
যেমন কথা, তেমন কাজ। রাজ্যবাসীকে এই বার্তা দিতেই নির্বাচনী ইস্তাহারে দেওয়া চার প্রধান প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এ বার যেমন কাজ, বরাদ্দও তেমন হয় কি না, তা জরিপ করতে রাজ্যের চোখ আজ, বুধবারের বাজেটে।
বিপুল জনসমর্থনে রাজ্যে তৃতীয় বার সরকার গড়ার পরে আজই প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবে মমতার সরকার। এমনিতে রীতিমাফিক ভোট-বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের (এপ্রিল-জুন মাস) জন্য সরকারি খরচের অনুমতি চাইতে ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করে সরকার। কিন্তু এ বার বিধানসভা ভোটের আগে ফেব্রুয়ারিতে ওই খরচের অনুমতি চাওয়ার পাশাপাশি পুরো আর্থিক বছরের রূপরেখাই কার্যত স্থির করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘোষণা করা হয়েছিল স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ৪১টি প্রকল্প। চলতি অর্থবর্ষের জন্য বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব ছিল ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। প্রশাসনিক মহলের অন্দরে গুঞ্জন, আর্থিক বছরের বাকি আট মাসের (অগস্ট,২১—মার্চ,২২) ওই প্রস্তাবিত বরাদ্দের অঙ্ক আরও বেশ খানিকটা বাড়তে পারে। কারণ, ভোটের আগে দেওয়া যে চার প্রতিশ্রুতি পূরণের পথে সরকার ইতিমধ্যেই পা বাড়িয়েছে, তার জন্যও টাকাও তুলে রাখতে হবে যথেষ্ট। এই কোভিডের বছরে যেখানে অর্থনীতি বিধ্বস্ত, রাজস্বে টান থাকার সম্ভাবনা, সেখানে ঘাটতিকে মাত্রাছাড়া হতে না-দিয়ে ওই টাকার সংস্থানই বাজেটে সম্ভবত সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।
ভোটের আগে তৃণমূল বলেছিল, ক্ষমতায় এলে কৃষকবন্ধু প্রকল্পে সুবিধা বাড়বে। চালু হবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, পড়ুয়াদের শিক্ষা ঋণ-কার্ড এবং দুয়ারে রেশন পৌঁছে দেওয়ার আরও তিন প্রকল্প। নবান্নে ফেরার পরে ইতিমধ্যেই কৃষকবন্ধু প্রকল্পে আর্থিক সাহায্যের অঙ্ক বছরে ৬ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ন্যূনতম ২ হাজারও বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার টাকা। সরকারের অনুমান, এতে খরচ হতে পারে অন্তত ৩,৫০০ কোটি টাকা। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে দুঃস্থ পরিবারপিছু এক মহিলা সদস্যকে প্রতি মাসে আর্থিক সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। সাধারণ পরিবারে ৫০০ টাকা, তফসিলি জাতি ও জনজাতিভুক্ত পরিবারে ১০০০ টাকা। রাজ্যের দাবি, এতে অন্তত ১.৬ কোটি পরিবার উপকৃত হবে। কিন্তু তেমনই আনুমানিক খরচ প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকা। খাদ্যসাথীর সঙ্গে দুয়ারে রেশন প্রকল্প মিলিয়েও বড় অঙ্কের খরচ ধরে রাখতে হবে। সুদে ভর্তুকি গোনার সূত্রে একই কথা প্রযোজ্য পড়ুয়াদের শিক্ষা ঋণ-কার্ডে। যেখানে ইতিমধ্যেই অন্তত ৫০০ কোটি টাকা ঋণের আবেদন জমা পড়েছে বলে জানিয়েছে নবান্ন। সূত্রের খবর, এই প্রকল্পগুলিতে সম্ভাব্য খরচের অঙ্ক যুক্ত করেই বাজেট পেশ করতে পারে রাজ্য।
প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, “সারা বছরের আর্থিক কর্মকাণ্ডের রূপরেখা ভোট অন অ্যাকাউন্টেই দিয়েছিল সরকার। নতুন প্রকল্পগুলি যুক্ত করে সরকার তাকেই এ বার পরিমার্জন করতে পারে।”
কোভিডের প্রথম ধাক্কার পরে ৫ ফেব্রুয়ারি পেশ হওয়া ওই ভোট অন অ্যাকাউন্টের নথি অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজস্ব ঘাটতি বেড়েছে। চলতি বছরে (২০২১-২২) তা কিছুটা কমতে পারে বলে রাজ্য আশাবাদী। একই ভাবে, ২০১৯-২০ সালের তুলনায় কোভিড-বছরে (২০২০-২১) রাজকোষ ঘাটতিও বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের আশা, ঢিমে তালে হলেও অর্থনীতির চাকা ফের গড়াতে শুরু করায় তা-ও কিছুটা কমবে।
কোভিডের প্রকোপ আপাতত সামান্য কমেছে। কিন্তু তা মূলত কড়া নিয়মকানুনের জেরে। অতিমারির ধাক্কায় রাজ্য-সহ সারা দেশের অর্থনীতি এখনও বিপর্যস্ত। তাই রাজস্ব আদায় লাফিয়ে বাড়ার সম্ভাবনা কম। তার উপরে ঘাড়ে চেপে রয়েছে শুধু ঋণ শোধের খাতে ৬৩,৭০০ কোটি টাকা তুলে রাখার বাধ্যবাধকতা। এই সমস্ত কিছু সামলে নতুন প্রকল্পের জন্য মোটা বরাদ্দের বন্দোবস্তই তাই আজ বাজেটে বড় চ্যালেঞ্জ।
বরাদ্দ একেবারে কম হলে, বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে পারেন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে। আবার বিপুল বরাদ্দে মাথাচাড়া দিতে পারে রাজকোষ ঘাটতি।
ভারসাম্যের এই সরু দড়ির উপরে হেঁটেই আজ প্রথম বাজেট তৃতীয় দফার মমতা-সরকারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy