Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

খুন করতে এসেছিল বাবা, ‘প্রতিশোধ’ নিতে মল্লিকার অস্ত্র তাইকোয়ন্দো

মেয়েটা প্রতিশোধ নিতে চায় তার ‘মদ্যপ’ বাবার উপরে, সমাজের উপরে।

মল্লিকা সজ্জন। নিজস্ব চিত্র

মল্লিকা সজ্জন। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত সরকার
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ০৪:১৯
Share: Save:

ঘরে উপচে পড়ছে পদক। তবু রাগ গেল না মেয়েটার। এখনও যে ‘প্রতিশোধ’ নেওয়া হল না!

মেয়েটা প্রতিশোধ নিতে চায় তার ‘মদ্যপ’ বাবার উপরে, সমাজের উপরে। সে এশিয়াড-অলিম্পিক্সে সোনা জিততে চায়। নাম করতে চায়। তা হলেই বাবার উপরে এবং সমাজের উপরে যথাযথ প্রতিশোধ নেওয়া যাবে বলে মনে করছে হুগলির পান্ডুয়ার তালবোনা কলোনির বছর ষোলোর মল্লিকা সজ্জন। প্রতিশোধের অস্ত্র হিসেবে সে বেছে নিয়েছে তাইকোয়ন্দো। রপ্ত করেছে নিখুঁত ‘থ্রি-সিক্সটি টার্নিং ব্যাক কিক’। যাতে ছিটকে যায় প্রতিপক্ষ। যে ভিডিয়ো ইতিমধ্যে ভাইরালও হয়েছে। কিন্তু নিয়মিত অনুশীলন হচ্ছে কই! অভাব যে থামিয়ে দিচ্ছে মাঝেমধ্যে।

‘‘চার বছর আগের এক রাতে মা-ভাইয়ের সঙ্গে ঘরে ঘুমোচ্ছিলাম। বাবা মদ খেয়ে একটা মুরগি কাটার ছুরি নিয়ে আমাদের মারতে এসেছিল। মা আমাদের নিয়ে কোনও মতে মামাবাড়িতে চলে আসে। আমাদের অভাবের সংসার ছিল। অশান্তি হতো। তখন থেকেই বাবার উপরে আমার রাগ। তাই শুরু করি তাইকোয়ন্দো। কিছু করে দেখাতে হবে,’’— বলছিল মল্লিকা। গত বছর জানুয়ারিতে দিল্লিতে ‘ক্লাসিক ওপেন ইন্টারন্যাশনাল তাইকোয়ন্দো চ্যাম্পিয়ানশিপে’ চতুর্থ হওয়ার পরে আরও ‘খিদে’ বেড়ে গিয়েছে বৈঁচি বিহারীলাল মুখার্জি অবৈতনিক ইনস্টিটউশনের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর।

মল্লিকার মা দীপালিদেবী অসুস্থ। তবু রোজ ভোরে তিনি ফুল বেচতে যান হাওড়ায়। ফিরতে রাত হয়। দেড় বছর আগে মল্লিকার ভাই, ১৪ বছরের বরুণ সোনার দোকানে কাজ করতে গুজরাত গিয়েছে। সংসারের হাল ধরতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ছোট ছেলেমেয়েদের তাইকোয়ন্দো শেখাচ্ছে মল্লিকা। কিন্তু তাতে অভাব ঘুচছে না।

প্রতিদিন তালবোনা গ্রাম থেকে প্রায় ৫০ মিনিট সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায় মেয়েটি। ফিরে তিন্নায় প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং দেওয়া। ছিটেবেড়ার ঘরে অজস্র পদক, পুরস্কার, স্মারক। কিন্তু সেই ঘর প্রায়ান্ধকার। বৃষ্টিতে চাল দিয়ে জল পড়ে। তাকে পড়াশোনা দেখিয়ে দেওয়ারও কোনও গৃহশিক্ষক নেই। মেয়েটির আছে শুধু জেদ। মল্লিকার কথায়, ‘‘এখনও ঘুমের মধ্যে বাবার হাতে সেই চকচকে অস্ত্র দেখি। বাবা যেখানেই থাকুক, যে দিন দেখবে মেয়ে অলিম্পিক্স-এশিয়াডে নাম করেছে, সে দিন আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার ভুল বুঝতে পারবে। বাবার উপরে রাগেই আমি নানচাকু চালানোও শিখেছি।’’

তিন্নার সুকান্ত মিস্ত্রির কাছে মল্লিকার তাইকোয়ন্দোতে হাতেখড়ি। সেখানেই সে প্রশিক্ষণও দেয়। ‘বেঙ্গল অ্যামেচার তাইকোয়ন্দো অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সম্পাদক রূপকমল নন্দী বলেন, ‘‘আমি মল্লিকার জন্য বিভিন্ন জায়গায় বলেছি। আশা করি, ও একদিন এশিয়াডে খেলবে।
খ্যাতি অর্জন করবে। আমি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাব।’’ মল্লিকার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তার স্কুলের শিক্ষকেরাও।

মেয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে, অভাব ঘুচবে। সেই স্বপ্নেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে চলেছেন অসুস্থ দীপালিদেবীও।

অন্য বিষয়গুলি:

Taekowndo Mallika Sajjan Hooghly Pandua
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy