শ্রেণিকক্ষে অধ্যাপিকা যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা কোনও কারিকুলাম বা পাঠক্রমের অংশ ছিল না। নদিয়ার হরিণঘাটার মৌলানা আবুল কালাম আজ়াদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি বা ম্যাকাউট-এর কর্তৃপক্ষ যে পাঁচ সদস্যের কমিটি তৈরি করেছিল, তারা রিপোর্ট দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাপস চক্রবর্তী জানান, শ্রেণিকক্ষে অধ্যাপিকাকে ছাত্রের সিঁদুরদানের ঘটনা ‘নিম্নমানের কৌতুক’। এ নিয়ে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি গঠন করবেন কর্তৃপক্ষ। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই অধ্যাপিকার বিরুদ্ধে যথাযোগ্য পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়ো নিয়ে অধ্যাপিকা দাবি করেছিলেন, বিয়ের দৃশ্যটি একটি নাটকের অংশ ছিল। সেই দাবি মানতে নারাজ উপাচার্য তাপস। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘এটা নাটক নয়। নিম্নমানের কৌতুক। নাটক হলে তার চিত্রনাট্য থাকতে হবে। দাবি করা হচ্ছে, রীতি দেখানো হয়েছে। কী রীতি দেখানো হয়েছে? পরীক্ষার ১০ দিন আগে পড়াশোনার পরিবর্তে এ সব বিষয় নিয়ে মেতে উঠেছেন শ্রেণিকক্ষে!’’ উপাচার্য এ-ও জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সব নিয়ে কিছু জানতেন না। অনুমতিও দেননি। সমাজমাধ্যমে হাসাহাসি হচ্ছে। শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি বিষয়টি দেখবে এ বার। এক জন শিক্ষকের কাছ থেকে কী প্রত্যাশিত, তা বিচার করা হবে।’’ উপাচার্য জানিয়েছেন, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটিতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকজনও থাকবেন। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে অধ্যাপিকার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন:
সমাজমাধ্যমে এক অধ্যাপিকা এবং এক ছাত্রের একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিয়োটিতে দেখা যায়, অধ্যাপিকার পরনে লাল বেনারসি। গলায় গোলাপ এবং রজনীগন্ধার মালা। ভিডিয়োয় তাঁর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিতে দেখা যায় এক কলেজ ছাত্রকে। ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে, ক্লাসরুমে কী ভাবে ওই আচরণ করলেন অধ্যাপিকা। বিতর্কের আবহে অধ্যাপিকাকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূত্রে খবর মেলে, ওই অধ্যাপিকা মৌখিক ভাবে জানিয়েছিলেন, গোটা বিষয়টি একটি নাটকের অঙ্গ ছিল। পরে আনন্দবাজার অনলাইনকে ওই অধ্যাপিকা জানান, ‘ফ্রেশার্স’ অনুষ্ঠানের জন্য একটি নাটকের পরিকল্পনা করেছিলেন পড়ুয়ারা। বিয়ের দৃশ্যটি ওই নাটকেরই অংশ। কিন্তু ওই অংশটি ভিডিয়ো করে ছড়িয়ে দেওয়ার নেপথ্যে চক্রান্ত রয়েছে বলেই দাবি করেছেন অধ্যাপিকা। তাঁর দাবি, এক অধ্যাপক সহকর্মীই সেই কাজটি করেছেন।
এই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘যে ঘটনা ঘটেছে, তা এক দমই রুচিসম্মত নয়। কিছু নিয়ম বা সীমারেখা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকে। আমরা যতই আধুনিক হই, সেটাকে মান্যতা দেওয়া উচিত।’’ এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি রিপোর্ট দিয়ে অধ্যাপিকার পদক্ষেপের সমালোচনা করল।