জেপি নড্ডার সভার সময়ে ক্যারাম খেলতে দেখা গেল মহুয়া মৈত্রকে। নিজস্ব চিত্র।
এক জনের মুখে আক্রমণ। অন্য জনের তখন ক্যারামে মন।
প্রথম জন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। দ্বিতীয় জন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নদিয়ার নাকাশিপাড়ার দলীয় সভামঞ্চ থেকে তখন লাগাতার শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছেন বঙ্গ সফরে আসা নড্ডা। নাকাশিপাড়া বিধানসভা আসলে পড়ে মহুয়ারই লোকসভা কেন্দ্র কৃষ্ণনগরের মধ্যে। নড্ডার পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারী থেকে সুকান্ত মজুমদারেরা যখন স্থানীয় তৃণমূল সাংসদকে নিশানা করছেন, ২৬ কিলোমিটার দূরের চাপড়া বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ঠিক সেই সময় নিখুঁত কাটশটে ক্যারামের ঘুঁটি পকেটবন্দি করতে দেখা গেল মহুয়াকে। বস্তুত, এই চাপড়া মহুয়ারই লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা অন্য একটি বিধানসভা।
সর্বভারতীয় পদে মেয়াদ বৃদ্ধির পর প্রথম বঙ্গ সফরেই এসেছেন নড্ডা। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রকেই তাঁর সভাস্থল হিসাবে বেছে দেয় রাজ্য বিজেপি। নড্ডার সঙ্গে যে সভায় ছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনের নিরিখে দেখলে নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলায় তারা ভোটের অঙ্কে অনেকটাই এগিয়ে। পাশাপাশি, গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে উত্তরে খারাপ ফল হলেও জমি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে। নাকাশিপাড়াতেই গত পঞ্চায়েতে দল একার ক্ষমতায় পাঁচটি আসনে এবং বাকি দু’টিতে অন্যদের সঙ্গে জোট করে বোর্ড গঠন করেছিল। তা নজরে রেখেই লোকসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করে তুলতে নড্ডার এই সফর।
তবে চুপ করে বসে নেই তৃণমূলও। বৃহস্পতিবার দিনভর ঠাসা কর্মসূচি ছিল মহুয়ারও। চাপড়া বিধানসভার চাপড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে যান সাংসদ। সেখানে তিনি বিএলআরও অফিস পরিদর্শনে গিয়েছেন। কর্মিসভাও করেছেন। এর পর মধ্যাহ্নভোজের আগে তাঁকে কিছু ক্ষণ দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ক্যারাম খেলতে দেখা গিয়েছে। আনন্দবাজার অনলাইনকে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘আমি ঘরের মেয়ে। আমার কিছু প্রমাণ করার নেই। তাই ক্যারামে ব্যস্ত।’’
বিজেপি সূত্রের দাবি, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে যে বাংলাকেই ‘পাখির চোখ’ করে এগনো হচ্ছে, তা আগেই স্পষ্ট দিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তা মাথায় রেখে গত লোকসভায় হেরে যাওয়া ২৪ আসনে পালা করে সভা করার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং নড্ডার। বিধানসভা নির্বাচনের আগেও বাংলায় প্রায় নিয়মিত যাওয়া-আসা করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু প্রত্যাশিত ফল মেলেনি। বিজেপির এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় নজর দেওয়া হচ্ছে এ বার। সেই অভিযাত্রা শুরু হচ্ছে নদিয়া থেকে।’’
নদিয়ার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রানাঘাট আসনটি বিজেপির দখলে রয়েছে। অন্য দিকে, কৃষ্ণনগরে জিতেছেন মহুয়া। গত বিধানসভা নির্বাচনেও কৃষ্ণনগর উত্তরের আসনটি ছাড়া কৃষ্ণনগর লোকসভার আরও কোনও বিধানসভা আসনেই দাগ কাটতে পারেনি গেরুয়া শিবির। কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে পদ্ম-প্রতীকে যিনি জিতেছেন, সেই মুকুল রায়ও পরে তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন।
বিজেপি সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সামনের লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর আসনটিতে বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে। সুকান্ত বলেন, ‘‘তোষণের রাজনীতি করে কৃষ্ণনগর লোকসভা জিতেছেন মহুয়া। উন্নয়নের প্রশ্নে মানুষ এ বার বিজেপিকে ভোট দেবেন।’’
নিজের লোকসভা এলাকায় নড্ডার জনসভাকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ‘পরিযায়ী পাখি’ বলে কটাক্ষ করেন মহুয়াও। তিনি বলেন, ‘‘ওরা পরিযায়ী পাখি। ওদের অনেক চাপ থাকে।’’
মহুয়ার ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ মেনেই কাজ করছেন সাংসদ। গ্রাম পরিদর্শন করে মানুষের অভাব-অভিযোগের কথা শুনছেন। তৃণমূলের এক জেলার নেতার কথায়, ‘‘নড্ডারা যখন ইচ্ছে আসতেই পারেন। তাতে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু বিশেষ লাভ হবে না। বিজেপি যদি মনে করে, আমরা চুপ করে বসে রয়েছি, তা হলে সেটা ভুল হবে।’’ আর এক নেতার কথায়, ‘‘দলের কর্মীদের সঙ্গে ক্যারাম খেলাও আসলে জনসংযোগেরই অঙ্গ। এতে কর্মীরাও উজ্জীবিত হন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy