জল্পনা উস্কে অবসর নেওয়ার কথাও মদন বলেন। ফাইল চিত্র ।
মুকুল রায়ের মতো তাঁরও ‘অ্যালঝাইমার্স’ রয়েছে। মাঝেমধ্যেই ‘হ্যালুসিনেশন’ হচ্ছে তাঁর। কিছু মনে রাখতে পারছেন না। এসএসকেএম হাসপাতাল নিয়ে তিনি কিছু বলেছিলেন বা হাসপাতাল বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন বলেও নাকি তাঁর কিছু মনে নেই। তাঁর দাবি, ‘পিজি’ বলতে তিনি বোঝেন ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট’। রবিবার রাতে এসএসকেএমকাণ্ডে নিজের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে এমনটাই মন্তব্য কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের। পাশাপাশি, সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি উস্কে দিয়েছেন অবসর নেওয়ার জল্পনাও।
বিগত কয়েক দিন ধরেই এসএসকেএমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে সরব হতে দেখা গিয়েছে কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ককে। এসএসকেএম হাসপাতালে রোগী ভর্তি নিয়ে দালালরাজের অভিযোগ এনে সেই হাসপাতাল বয়কটেরও ডাক দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ ছিল, অনেক চেষ্টা করেও ওই হাসপাতালে এক রোগীকে ভর্তি করানো যায়নি। সেই কারণে হাসপাতাল বয়কটের ডাক দিয়ে হুঙ্কার দিয়েছিলেন ‘সে নো টু পিজি’, ‘বয়কট পিজি’।
কিন্তু নিজের সেই অবস্থান থেকে সরে যেতে দেখা গেল তৃণমূল বিধায়ক মদনকে। রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ রকম বলেছিলাম নাকি! আমার হ্যালুসিনেশন রোগ আছে। অ্যালঝাইমার্স শুরু হয়েছে। ভুলে গিয়েছি। মুকুলের রোগ ধরেছে। একটা গেঞ্জি কিনেছি। তাতে লেখা ‘এ বার সন্ন্যাস নেব’। সন্ন্যাসী হতে হলে আগে লালন ফকির হতে হবে।’’
এর পর লালনের গানের দু’কলি গুনগুন করতেও দেখা যায় তাঁকে। পাশাপাশি, জল্পনা উস্কে অবসর নেওয়ার কথাও তিনি বলেন। কিন্তু কোন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে চান, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। তবে জানিয়েছেন, অবসর নিলেও মানুষের সঙ্গেই থাকবেন। মদনের কথায়, ‘‘মেসি অবসর নেবে, সচিন অবসর নেবে, ধোনি অবসর নেবে আর মদন মিত্র নেবে না? আমার কাছে পিজি মানে পোস্ট গ্যাজুয়েট। মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে।’’
অবসর নেওয়ার পর তিনি কী করতে চান, তা-ও মদন জানিয়েছেন। তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘‘আগে বড় হওয়ার চেষ্টা করতাম, এখন ছোট হওয়ার চেষ্টা করব। ছোটদের পড়াব। আমাকে নিজেকেও পড়াশোনা করতে হবে। আপডেট করতে হবে নিজেকে।’’
রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে এসএসকেএম। এই হাসপাতালে মদন নিজেও একাধিক বার ভর্তি হয়েছেন। এসএসকেএমেরই উডবার্ন ব্লকে অতীতে তাঁকে দেখা গিয়েছে। সেই পিজি হাসপাতালের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার রাতে শুভদীপ পাল নামের এক যুবকের দুর্ঘটনা কেন্দ্র করে। তাঁকে চিকিৎসার জন্য রাতেই নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএমে। কিন্তু অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে ভর্তি নিতে চাননি। এর পর রাতেই হাসপাতালের সামনে থেকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তৃণমূল বিধায়ক মদন। তিনি এসএসকেএমে ‘দালালরাজ’ চলছে বলে অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি, টাকা না দিলে এই হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা হয় না। এই ঘটনায় সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হস্তক্ষেপ করার আবেদনও তিনি জানান।
তবে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়, যখন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, হাসপাতাল চত্বরে কোনও রকম অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁদের পাশেই আছেন। উল্টে নাম না করে হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা করা হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করা হয়।
তবে এর পরেও নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি মদন। এসএসকেএমকাণ্ডে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর নাম না করলেও যে ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ‘গুন্ডামি’র অভিযোগ এনেছেন, তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিধায়ক পদ ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। বলেন, ‘‘দরকার পড়লে পদ ছেড়ে দেব। একটা তো বিধায়ক পদ। আমি সোনালি গুহ, শুভেন্দু অধিকারী, দীনেশ ত্রিবেদী বা মুকুল রায় নই। আমি মদন মিত্র! উনি আমাকে কী দিয়েছেন?’’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদের পরে নবান্ন মদনের পাশে থাকেনি। তবে তাঁকে বুঝিয়ে ‘শান্ত’ করেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তারই মধ্যে তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর তা নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে দলের এমন নেতাদের আক্রমণ করেন মদন। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমি কাটমানি তোলার জন্য, আবাস যোজনার টাকা তোলার জন্য কেস খাইনি। এক স্বাস্থ্যকর্মীকে হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করায় মামলা খেয়েছি।’’
তবে এসএসকেএমকাণ্ড নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে এ হেন ঝড় তোলার পর রবিবার রাতে তাঁর মন্তব্যে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ রকম অঘোষিত ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করার পর আবার কেন তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরে এলেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের উপর মহলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরেই নাকি মত বদলেছেন মদন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy